সম্পর্কের টানাপোড়েন

ফারহানা আহমেদ
ফারহানা আহমেদ

কয়েক সপ্তাহ আগে বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলাম চার্চে। ভালো লেগেছে ওদের আনন্দ উৎসব। জাজকের পরিচালনা, সর্বশেষে নতুন বিবাহিতের একসঙ্গে উচ্চাসন ‘till death apart us’ সৌভাগ্য হয়েছে অন্য আরও ধর্মের বিয়ে দেখার, নিজের ধর্মের বিয়ে তো আছেই। বক্তব্য মোটামুটি একই, শুধু কাগজের সই না, দুপক্ষেরই একে অপরের প্রতি অঙ্গীকার। ভালো থাকার এবং রাখার। কিছু উদাহরণ দেব নিচে। জীবন কারও জন্যই ফুলের বাগান আর বৃষ্টি শেষের ঝকমকে নীল আকাশ না। বরং রোলার কোস্টারের মতো সব সময় পরিবর্তনশীল। তারপরও মানুষ সুখী হয়।

১.
স্কিজোফ্রেনিয়া একটা মানসিক রোগ, রোগটির প্রকাশ ২০ বা ৪০–এর কোঠায় হতে পারে। সংগত কারণে স্থান–কাল–পাত্র বদলে দিচ্ছি। তিনটি বাচ্চা হওয়ার পর সাজ্জাদ সাহেব ওনার স্ত্রীর এরোগের ডায়াগনোসিসে জানলেন। সমাজের উঁচু পর্যায়ের সুদর্শন যোগ্য লোক হয়েও এই স্ত্রী নিয়ে তিনটি বাচ্চা মানুষ করলেন, ভালো আছেন তাঁরা।

বাইপোলার রোগ আরেকটি মানসিক সমস্যা। হয় বিষণ্ন বা অতি খুশি হয়ে না ঘুমানো, প্রচুর ব্যয় করা ইত্যাদি। রবি সমাজের উঁচু তলার মানুষ, সফল, তাঁর শ্বশুর তাঁর স্ত্রীকে হাতে তুলে দিয়ে গেছেন দেখে মধ্যবয়সেও দিব্যি ধৈর্য রেখে সংসার করছেন। একসময় মিডিয়া লাইনে তিনি ছিলেন। কোনো সুযোগ তাঁকে নিজের সংসার নষ্ট করতে প্রেরণা দেয়নি।

২.
তিতির একজন কর্মজীবী স্ত্রী। দেখতে রূপবতী, কাজে যথেষ্ট সিনসিয়ার, মধ্যবিত্ত জীবন থেকে আপ্রাণ চেষ্টায় সংসারকে কম্ফোর্টেবল পর্যায়ে এনেছেন, দুটা বাচ্চা মানুষ করার চেষ্টা করছেন। মধ্যবয়সে এসে টের পেলেন তাঁর স্বামী অন্য আরেক লোকের স্বল্প শিক্ষিত স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক করেন। ওনাকে তাঁর পরিবার দেখেন না, তাঁকে গালি দেন বলে বিচ্ছেদ দিয়ে ওই নারীকে নিয়ে পৃথিবী ভ্রমণের পাঁয়তারা করছেন। তিতির অনেক ভাবলেন, বুঝলেন বাচ্চাগুলোর জীবনে এ ধাক্কা অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে, প্রচণ্ড কারণ স্বামী কিছুদিন আনন্দ করে ওই নারীকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর সন্ধানে যাবে...ইত্যাদি ইত্যাদি। ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্ধ করলেন সে সম্পর্ক । শুনেছি ভদ্রলোক ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছেন বউ–ছেলেমেয়ের কাছে।

৩.
সমীর ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিয়ে করেছেন এইচএসসি পাস মেয়ে, পড়াশোনার দিকে মেধা কম হলেও সংসারী। দুটো মেয়ে আছে, সমীরের বোন আমেরিকা থাকেন, ইমিগ্রেশনের কাজ প্রায় শেষ, মেয়ে আর স্ত্রীর অনেক ইচ্ছা আমেরিকায় সেটল হবেন। উনি শ্রম দিয়ে ব্যবসা করে স্ত্রীর জন্য ১০টা ফ্ল্যাট, স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা, বোনের ফ্ল্যাট সব করে দিয়েছেন। টের পেলেন, ওনার স্ত্রী পরকীয়া করে আমেরিকা চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন, উনি আমেরিকান ইমিগ্রেশন বাতিল করে মেয়ে দুটোর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চেষ্টা করছেন সংসার টিকিয়ে রাখতে।

৪.
প্রচুর মেয়ে আছেন, যাঁরা ঘর এবং বাইরের সব কাজ করে তারপরও সমালোচনা শোনেন স্বামীর। শুধু যাঁরা ঘরে থাকেন বাচ্চার কারণে তাঁদেরকে উপযুক্ত সম্মান দেন অল্প কিছু মানুষ। একতরফাভাবে শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব পালনের বোঝা তো আছেই।

করণীয়
১.
মানুষকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। তাঁর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে সম্মান করতে হবে।
২.
একটা কমিটেড সম্পর্কে থেকে অন্য সম্পর্ক না করা। কেউ সারা জীবন সালমান খান বা ক্যাটরিনা কাইফ থাকেন না। একটু নিজের বয়সের কথা চিন্তা করলে এসব এড়ানো সম্ভব।
৩.
মন স্থির না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের সিদ্ধান্তে না আসাই ভালো। আরও কি ভালো পেতে পারি টাইপ মন থাকলে সময় নেওয়া উচিত। বিয়ে এবং বাচ্চা হয়ে গেলে একটা ভালো সম্পর্কের ওপর অনেকগুলো জীবন নির্ভর করে।
৪.
তারপর আছে কাউন্সেলিং–সুবিধা। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ওনারা ও কাউন্সেলিংয়ে গেছেন। সেটা সমাজের বন্ধু বা বড় ভাই বা বোন বা ধর্মীয় গুরু বা প্রফেশনাল সাইকো থেরাপিস্ট যেকেউ হতে পারেন।

ডিভোর্স হতেই পারে, যদি দুই পক্ষের মানবীয় গুণাবলি থাকে, তাহলে কিছু চেষ্টা করা উচিত। নতুন জীবনসঙ্গীরও সমস্যা থাকবে, বিয়ে মানে দুপক্ষেরই কম্প্রোমাইজ। ভবিষ্যতে একে অন্যের অবলম্বন হওয়ার জন্য। সবাই খুব ভালো থাকুন জীবনে।