করোনাভাইরাস: কেমন আছেন সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশিরা

বাসায় বসে মোবাইল-ট্যাবে খেলা আর যোগাযোগ চলছে। ছবি: লেখক
বাসায় বসে মোবাইল-ট্যাবে খেলা আর যোগাযোগ চলছে। ছবি: লেখক

প্রাণঘাতী কোভিড ১৯–এ আজ সারা পৃথিবীকে গ্রাস করছে। এ পর্যন্ত প্রায় পুরো পৃথিবীতে এ মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। আজ পর্যন্ত বিশ্বে ৯ লাখের বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ২ লাখের বেশি মানুষ।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবও করোনাভাইরাসে অবরুদ্ধ। দেশটিতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭২০ জন ছাড়িয়েছে, সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২৬৪, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। ২৫ মার্চ থেকে কারফিউ জারি করে দেশটি। ফলে দেশটির জনগণের পাশাপাশি বাসায় বসে অবরুদ্ধ দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। এখনো পর্যন্ত সুস্থ আছেন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকেরা। বিশেষ দরকার ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সরকার, প্রশাসন থেকে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি বন্ধ এবং সব ধরনের জনসমাগম এখানে নিষিদ্ধ। গণপরিবহনও বন্ধ। শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।

বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে, যেন ঘরে বসে লেখাপড়ার কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।

ফারহান নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, তাঁর এখন বাসায় অবসর সময় যাচ্ছে। বাসায় বসেই অনলাইনে ক্লাস আর পরীক্ষা দিচ্ছে। সে জানাই তার এখন বাসায় খেলাধুলা করে সময় কাটাতে হচ্ছে। কারফিউ থাকায় আর আতঙ্কের কারণে বাইরে বের হতে পারি না। সরেজমিনে দেখা যায় কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি এই অবসর সময়ে ঘরেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে সময় কাটান।

বিপাকে পড়েছেন সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি পরিবারগুলো, বিশেষ করে বাচ্চারা। তারা এখন ঘরবন্দী জীবন যাপন করছে। দেশটিতে কারফিউ জারি করার ফলে বাচ্চারা এখন আর সাগর পাড়ে, শিশুপার্ক, বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় যেতে পারছে না।

খাবারের দোকানসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। অধিকাংশ অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, অনেক বাংলাদেশিরাই এখানে ব্যবসা করেন, তাঁরা সবাই ব্যবসা গুটিয়ে কোয়ারেন্টিনের মধ্যে চলে এসেছেন।

অবসর সময়ে ঘরেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে সময় কাটছে প্রবাসীদের। ছবি: লেখক
অবসর সময়ে ঘরেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে সময় কাটছে প্রবাসীদের। ছবি: লেখক

জুয়েল নামে একজন ক্ষুদ্র মোবাইল ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তার এখন নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তিনি জানান, তাঁর আয়ের ওপরেই চলে তার সংসার। বলেন, ‘আমরা আসলে আতঙ্কিত আমাদের দেশে থাকা পরিবার পরিজনদের জন্য। কারণ দেশে যেহারে ভাইরাস ছড়াচ্ছে বা ছড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটা নিয়েই আমরা বেশি আতঙ্কিত।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায় গরিবদের মধ্যে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা আর্থিক সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসীদের সতর্কতা ও সৌদি আরবের আইনকানুনগুলো মেনে চলার জন্য দূতাবাস ও কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে আসছেন এবং নিয়মিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে।

প্রবাসীদের বড় অংশ নিয়মিত দেশে টাকা পাঠান। যাঁরা প্রতি মাসের বেতন হাতে পেয়ে বা অন্যান্য আয় থেকে নিজের খরচটা রেখে বাকি সব টাকা দেশে পাঠিয়ে দেন, তাঁরাও পড়েছেন বিপাকে। হাতে টাকা না থাকার কারণে তাঁরা এখন নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই অচলাবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকার আপাতত উপায়—সতর্ক থাকা, পরিচ্ছন্ন থাকা, পারস্পরিক মেলামেশা বন্ধ রাখা, ঘর থেকে বের না হওয়া এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। করোনা থেকে মুক্তি এবং দেশ জাতি ও বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও নফল রোজা রাখছেন গৃহবন্দী প্রবাসীরা।