ইতালিতে পরিবার নিয়ে থাকতে চাইলে যা করণীয়

পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর যে তাঁর আত্মীয় ও পরিবার–পরিজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে রাখতে চান। সত্যিকারার্থে এ রকম অভাগা মানুষ এ জগৎসংসারে পাওয়া যাবে কি না, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ রকম না থাকলেও নিজের অজান্তে ভাগ্য, আর্থিক টানপোড়নে অনেককে এ দূরত্বের পথিক হতে হয়।

ইতালিতে অনেক মানুষ এ রকম সমস্যায় পড়ে আছে। বছরের পর বছর নিজের পরিবারকে কাছে পেতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। তবু কাগজপত্রের ঝামেলা শেষ হয় না। একের পর এক নতুন নতুন কাগজপত্র সংযোজন হচ্ছে অভিবাসী আইনে। সবাই চান নিজ পরিবারকে কাছে পেতে, আর সে জন্য ইতালি অভিবাসী অফিসের অনুমতির প্রতীক্ষায় থাকতে হয়।
অনুমতি পাওয়া একটা জটিল কাজ। এর ফলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় অনেক বাংলাদেশিকে। সুখে আর দুঃখে পরিবারকে নিয়ে কাছে থাকতে সবার মনই একটু হলেও কাঁদে। ইতালিতে পরিবার আনতে বিভিন্ন রকমের কাগজপত্র আবেদনকারীর কাছ থেকে ইমিগ্রেশন অফিস চায়। একটি ডকুমেন্টও অবশিষ্ট থাকলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় না।

আবেদন দুটি ভাগে বিভক্ত
প্রথম ধাপে একটি নির্দিষ্ট থাকার জায়গা অর্থাৎ একটি থাকার উপযোগী বাসস্থান থাকতে হবে। এ কাজ সম্পন্ন করতে স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল অফিসে যেতে হয়। দ্বিতীয় ধাপে ভিসার অনুমতি (নুলাওস্তা) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় অভিবাসী অফিসে।
প্রথম ধাপে যে ধরনের কাগজপত্র নিয়ে যেতে হয়—যেকোনো একটি ইদোনেইতা আলোজ্জাতিভা (আবাসন উপযুক্ত স্থান)। এটা পেতে কত যে ঝামেলা পোহাতে হয়, একজন প্রবাসীই জানেন, যিনি আবেদন করেছেন। এটি অনলাইনে আবেদন করতে হয়।

আবেদন করার আগে যে বাসা থেকে আলোজ্জাতিভা নেবেন ওই বাসার কন্ট্রাক্ট, পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র, বাসার কাঠামোগত পরিকল্পনা, ক্যাডেটস্টাল জরিপ এবং বাড়ির মূল মালিক এবং যে বাসা ভাড়া নিয়েছেন ও যার জন্য আলোজ্জাতিভা আবেদন করা হবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যেতে হয়। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে অফিস আবেদনকারীর কাছ থেকে একটি ১৬ ইউরোর স্ট্যাম্প নেবে, সেই সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফট ৬০ ইউরো। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে একটি রিয়া নম্বর ই–মেইলে আসার পর প্রথম ধাপের আবেদন সম্পন্ন হয়। এরপর রোম পেরেফেত্তুরায় অর্থাৎ অভিবাসী অফিসে অন্যান্য ডকুমেন্ট নিয়ে তাঁকে যেতে হয়।
সেখানে আয়সংক্রান্ত কাগজপত্র, বাসায় থাকার উপযুক্ত কি না, সব ঠিক থাকলে দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হয়। পরে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বাংলাদেশে ভিএফএস গ্লোবাল লিগালাইজেশন অফিসে জমা দিতে হয়। জমা দেওয়ার আগে ও পরে সেখানে ঝামেলার শেষ নেই। সব কাগজপত্র তাদের ফরম্যাটে করে সবকিছু নির্ভুল হলে ভিসা পাওয়ার আবেদন জমা নেওয়া হয়।
তারপর আবেদনকারী কবে ভিসা পাবেন, এটা জানার কারও কোনো সাধ্য নেই। শুধু আল্লাহ আর এজেন্সি এবং ইতালিয়ান দূতাবাস ভালো জানে।
এ তো গেল পরিবার আনার ঝামেলার কথা। এরপর হলো পরিবার নিয়ে থাকার সমস্যা।
কথায় আছে, সাধ আছে তো সাধ্য নেই। একক রোজগার দিয়ে ইতালিতে পরিবার নিয়ে থাকা একধরনের চ্যালেঞ্জ। ইতালির জীবনযাত্রার মান অনেক বেশি হওয়ায়

পরিবারের সঙ্গে লেখক
পরিবারের সঙ্গে লেখক

ব্যয়ভারও অনেক বেশি। ফলে পর্যাপ্ত আয় না থাকলে পরিবার নিয়ে থাকা অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। দেশের তুলনায় প্রায় ৯০ ভাগ জীবনযাত্রার মান বেশি বলে সুখে থাকতে গিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে চিন্তায় পড়তে হয় অনেক বাংলাদেশিকে। কারণ, একার আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেক কঠিন। আবার সংসার নিয়ে সুন্দরভাবে থাকতে গিয়ে অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। ইতালিতে প্রায় ৯৯ ভাগ ইতালিয়ান পরিবার স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আয়ে সংসার চলে। ফলে তাঁদের বেলায় এ সমস্যা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া, তাঁদের আয়ের একটা অংশও পরিবারের অন্য কারোর জন্য ব্যয় করে না এবং ভবিষ্যতের চিন্তাও নেই।
আমাদের বেলায় আমরা তা পারি না। তাই সংসারজীবনে চলার পথে একটু হিমশিম খেতে হয়। তবে বর্তমান বাংলাদেশে আগের তুলনায় ইতালির ফ্যামিলি রিনিউ ভিসা শিথিল করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হওয়ায় পুরোনো অনেকের ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দেশে শিথিল হলেও ইতালিতে ক্রমেই কঠিনের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে আবাসন ব্যবস্থার কাগজপত্র যথাযথ উপস্থাপন করা অনেক জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসী অফিসে। ফলে (নুলাঅস্তা) ধীরগতিতে পাচ্ছে বাংলাদেশিসহ অন্য অভিবাসীরা।