আনন্দে ভাসছে অ্যারিজোনার কৃতী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

আমেরিকার প্রায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের হাইস্কুলগুলোতে এখন সমাপনী সার্টিফিকেট গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী ও পিতা–মাতাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নে পুষে রাখা গ্র্যাজুয়েশনের আনুষ্ঠানিকতা হতে পারছে না। তাই বলে কি গ্র্যাজুয়েশনের আনন্দ থেমে থাকবে? 

দীঘ ১২টি বছর স্কুলে কাটিয়ে এখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। স্কুলজীবনে নানা রকম চড়াই–উতরাই, হাসি–আনন্দ করে তারা এই মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য অপেক্ষা করে আছে। সব স্কুলের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান ভার্চ্যুয়াল গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলো। আমেরিকান বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন স্কুল থেকে অসামান্য সাফল্যের সঙ্গে তাদের হাইস্কুল সমাপ্ত করে প্রত্যেকে বিভিন্ন টপ লিস্টেড বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে।

বুশরা করিম এবং আদীব হোসেন। ছবি: লেখক
বুশরা করিম এবং আদীব হোসেন। ছবি: লেখক


বুশরা করিম
গিলবার্ট সিটির উইলিয়ামস ফিল্ড হাইস্কুল থেকে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী হয়ে ভেলেডিকটরিয়ান উপাধি পেয়েছে। বুশরা ছাত্রী থাকাকালীন কি ক্লাব ও বেস্ট বাডির প্রেসিডেন্ট ছিল এবং সুইমিং টিম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। বুশরা এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যারেটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শুরু করবে। ডা. শারমীন করিম (লাবণী) ও আশরাফুল করিমের (বাবু) মেয়ে বুশরার পছন্দ মায়ের হাতের রান্না গরুর মাংস, শখ বই পড়া, গান শোনা, নিজের ক্লাসমেটদের পড়াতে সাহায্য করা। বুশরার মতে, ‘নিজে জানো এবং অন্যকে জানাও, আমাদের যেতে হবে বহুদূর।’

আদীব হোসেন
আনোয়ার হোসেন ও পান্না আক্তারের বড় ছেলে আদীব ছোট্টবেলা থেকেই বাবার মতো মেধাবী। বেসিস চেনডলার হাইস্কুল থেকে সদ্য পাস করা আদীব এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কলেজে বায়োমেডিকেল সায়েন্স ও নিউরোসায়েন্সে পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে আগ্রহী। আদীবের বাবা, তার এই সাফল্যের জন্য আদীবের মায়ের অবদানের কথা বারবার উল্লেখ করেন।
আদীব পছন্দ করে ব্যায়াম করা, ভিডিও গেম, বাস্কেটবল; খাবারের মধ্যে মায়ের হাতের কাবাব। আদীব বলে, সবাইকে সম্মান করব এবং নিজের জীবনের প্রতি আল্লাহ তাআলার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।

তাহসিন নাজিফা হক এবং আফসান করিম। ছবি: লেখক
তাহসিন নাজিফা হক এবং আফসান করিম। ছবি: লেখক


আফসান করিম
চেনডলারের হেমিলটন হাইস্কুল থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করা আফসান, বাবা আসাদ করিম ও শবনম লতিফের ছেলে। অত্যন্ত মিশুক আফসান মা–বাবার মতো মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। আফসান এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছে। বাস্কেটবল, ভ্রমণ, সায়েন্স ফিকশন এবং ছবি তোলার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। প্রিয় খাবার বাংলাদেশি ফুড ও দাদাবাড়ি রাজশাহীর আম। আফসানার মতে, ‘শিক্ষা প্রকৃত মানুষের জন্ম দেয়’।

তাহসিন নাজিফা হক
অ্যারিজোনার সবার প্রিয় মুখ আমানুল হক ইমন ও শিরিনের বড় মেয়ে তাহসিন এবার হেমিলটন হাইস্কুল থেকে অসামান্য মেধার স্বাক্ষর রেখে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। তাহসীন এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যারেটে পলিটিক্যাল সায়েন্সে পড়াশোনা করে একজন লইয়ার হতে আগ্রহী। তাহসিন বরাবরই কমিউনিটিতে ল ফার্মে ও অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক কাজে বিভিন্ন সময় ভলানটিয়ার হিসেবে কাজ করে।
তাহসিনকে প্রশ্ন করতেই জানাল বিরিয়ানি তার প্রিয় খাবার। তাহসিনের মতে, ‘শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন করে’।

রোয়েনা মুনতাহা রহমান এবং শামীন কবির। ছবি: লেখক
রোয়েনা মুনতাহা রহমান এবং শামীন কবির। ছবি: লেখক

রোয়েনা মুনতাহা রহমান
যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সাত নম্বর স্কুলের নাম হলো বেসিস চেনডলার। হাসিখুশি ও মিশুক পরিবার আমিনুর রহমান (তরু) ও রেহমুনা রহমান (তিথি) বড় মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি। যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বরধারী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএলএ বায়ো–ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে হেলথ কেয়ারে নিজের পেশাকে সম্পৃক্ত করতে চায়। রোয়েনার খুব পছন্দ দেশি চায়নিজ খাবার, গান শোনা, ছবি আঁকা, রান্না করা এবং অবশ্যই সবশেষে মুভি দেখা।

শামীন কবির
মোহাম্মদ কবীর (তুহীন) রওনক জাহান (মিমি) একমাত্র সন্তান শামীনের সাফল্যে গর্বিত। সেরা স্কুল চেনডলার বেসিস থেকে সাফল্যের সঙ্গে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএলএতে হিউম্যান বায়োলজি পড়াশোনা করতে যাচ্ছে শামীন। গিটার, ব্যায়াম ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ছাড়াও শামীনের প্রিয় খাবার তপ্ত গরম হালিম।

শেনিজা দেওয়ান এবং আরীব ইসলাম। ছবি: লেখক
শেনিজা দেওয়ান এবং আরীব ইসলাম। ছবি: লেখক

শেনিজা দেওয়ান
অ্যারিজোনার সবার প্রিয় মুখ শামীম ও তাজিন দেওয়ানের (শুভ্রা) বড় মেয়ে শেনিজা। বেসিস আওয়ারটুকি থেকে সাফল্যের সঙ্গে পাস করে এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়েছে। শেনিজা স্কেটিং, ছবি আঁকা, কম্পিউটার কোডিং এবং গানে পারদর্শী। প্রিয় খাবারের কথা প্রশ্ন করতেই সব দেশি মায়ের হাতের রান্নার কথা জানাল।

আরীব ইসলাম
শফিকুল ইসলাম ও নাহিদ ইসলামের বড় ছেলে গিলবার্ট ক্লাসিক্যাল একাডেমি থেকে মেধাতালিকায় স্থান অর্জন করে এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিকস নিয়ে পড়াশোনা করবে বলে জানিয়েছে। ভবিষ্যতে আরীব প্রিয় বিষয় ফিজিকস নিয়ে রিসার্চ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে। সেরা রাঁধুনী মায়ের হাতের হালিম এবং বিরিয়ানি। বই পড়া, রান্না করা, সাঁতার কাটা, আমেরিকান ফুটবল আরীবের প্রিয়। আরীবের প্রিয় উক্তি, ‘শিক্ষা অলংকারের মতন নয়, এর হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

আরিয়ানা বাশার এবং জুবেইর ইবনে আবিদ। ছবি: লেখক
আরিয়ানা বাশার এবং জুবেইর ইবনে আবিদ। ছবি: লেখক


আরিয়ানা বাশার
অনিরুদ্ধ বাশার ও ইশরাত আরা খন্দকারের মেয়ে আরিয়ানা একবাক্যে এক আদর্শ কন্যা। অ্যারিজোনা কলেজ প্রেপ হাইস্কুল থেকে সাফল্যের সঙ্গে হাইস্কুল সমাপ্ত করে এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ওপর পড়াশোনা করে গবেষণা, শিক্ষকতা ও মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। পিয়ানো বাজানো, গান শোনা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া পছন্দ। প্রিয় খাবার মায়ের হাতে যেকোনো রান্না, বিরিয়ানি, ইলিশ ও বেগুনি। আরিয়ানার নিরলস শ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্যই এ সাফল্য। আরিয়ানার পিতা–মাতা সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।

জুবেইর ইবনে আবিদ
আবদুর রহমান আবিদ ও সাঈদা সিদ্দিকীর ছেলে জুবেইর। প্যারাগন সায়েন্স একাডেমি থেকে পাস করে এএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছে। জুবেইরের পছন্দ কম্পিউটারে গেম খেলা, মায়ের সঙ্গে রান্না করা এবং ভ্রমণ। প্রিয় খাবার পিৎজা এবং চিকেন উইং। প্রিয় উক্তি, শিক্ষা মানুষকে সব সময় সহনশীল হতে শেখায়।