কোরিয়ায় নাইট ক্লাবে করোনার থাবা

দক্ষিণ কোরিয়ার নাইট ক্লাবে করোনার থাবা। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার নাইট ক্লাবে করোনার থাবা। ছবি: সংগৃহীত

ইথোয়ান এলাকাটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত। এটাকে বিদেশিদের জন্য বিশেষ বিনোদনের প্রাণকেন্দ্রও বলা চলে। নাইট ক্লাব, ক্যাসিনো, মদের আসর, পার্টি—কী নেই এই এই ইথোয়ানে? রাস্তার চারপাশে অসংখ্য রেস্তোরাঁ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই চারদিকে মানুষের আনাগোনা আর জমকালো আসরে জমজমাট হয়ে ওঠে এই শহরটি। ইথোয়ানের রাতের দৃশ্য আর সকালের দৃশ্যের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। বন্ধের দিন শনি ও রোববার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকে সেখানে।

ব্যাপক পরীক্ষা ও ইনটেনসিভ কন্ট্যাক্ট ট্র্যাসিংয়ের মাধ্যমে কঠোর লকডাউন ছাড়াই মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয় এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটি। ৬ মে কোরিয়াতে সর্বনিম্ন সংক্রমণ সংখ্যা ছিল মাত্র ২ জন। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় কোরিয়াতে মে মাসের শুরুতে কিছু সামাজিক দূরত্বের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। তবে এটাই কি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার চরম ভুল?

করোনার এমন পরিস্থিতিতেও চলছে ইথোয়ানের জমকালো আসর। আর সেই নাইট ক্লাবের আসরই আবার কাল হয়ে দাঁড়াল দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য। নাইট ক্লাব থেকে সংক্রমণ বিস্তার নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশটিতে।

প্রতিদিনের মতোই রাত্রিকালীন বিনোদন এলাকা ইথোয়ানে ভিড় লাগতে শুরু করে। এদের মধ্যেই ২০ বছর বয়সী এক তরুণের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তারপর ‘কন্ট্যাক্ট ট্র্যাসিং’–এর মাধ্যমে দেখা যায় ২ মে নাইট ক্লাবসহ রাত্রিকালীন বিনোদন এলাকাটির বহু জায়গায় ঘুরে বেড়ান এ তরুণ। গত শনিবার (১৬ মে) পর্যন্ত নতুন করে ১৬২ জনের করোনা আক্রান্তের পেছনে ওই তরুণের ইথোয়ানে বিচরণই দায়ী। গত কয়েক দিনে যতজন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই নাইট ক্লাবের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন নাইট ক্লাবে করোনার থাবা।

সেদিন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। যাঁদের ২ হাজার ৪০০ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। বাকিদের এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ক্লাবগুলোতে যাওয়া প্রায় দেড় হাজার মানুষকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। দ্য কোরিয়া হ্যারাল্ড জানায়, ইথোয়ানের এই ক্লাব ও বারই এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এ ঘটনার পর থেকে সিউলে রাতকেন্দ্রিক সব বিনোদনকেন্দ্র অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে যাঁরা সেখানে গেছেন, তাঁদের ১৪ দিনের জন্য আইসোলেশনে থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে বলা হয়েছে।

শিগগিরই স্কুল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথাও ভাবছিল দেশটি। এমন সময়ই নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। যেকোনো সময় করোনাভাইরাস আবারও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন বলেন, পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে এটি শেষ হবে না। মহামারি প্রতিরোধে নিজেদের একটুও অসতর্ক হতে দেওয়া যাবে না। শেষ সময় পর্যন্ত সজাগ থাকতে হবে।

ইতিমধ্যে কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। যে তালিকায় দুজন বাংলাদেশির নামও আছে।