বিবর্ণ ঈদ ব্রিটেনে

অনেকে খোলা জায়গায় নামাজ পড়েছেন। ছবি: লেখক
অনেকে খোলা জায়গায় নামাজ পড়েছেন। ছবি: লেখক

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল, যুক্তরাজ্যএক নতুন ঈদের সঙ্গে পরিচিত হল ব্রিটেনের মুসলমানেরা। ২৪ মে ব্রিটেনে উৎযাপিত হলো মুসলমানদের সব চাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তবে এবারের ঈদ বলতে যা উৎযাপন করতে ব্রিটিশ মুসলমানেরা বাধ্য হয়েছে তা সারা জীবন মনে রাখবার মতো। আজন্ম ঈদ বলতে মুসলমানের যা জেনে এসেছে এবং পালন করে এসেছে এবার ছিল তার পুরো বিপরীত। তিন প্রজন্মের ব্রিটিশ মুসলমানেরা এই ঈদকে তাদের কাছে এক অপ্রত্যাশিত এবং বিবর্ণ ঈদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রথমত, রমজান মাসটি তাদের পালন করতে হয়েছে একেবারেই ঘরোয়াভাবে। মসজিদ যেতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, শুক্রবারের জুম্মার নামাজসহ হয়নি তারাবির নামাজ। ইত্তেকাফে বসতে পারেনি কোন ধর্ম প্রাণ মুসলমান। আর শেষ পেরেক হিসেবে তাদের অন্তরে গেথে যায় ঈদের নামাজ পড়তে না পারা। যদিও বিষয়টি আগে থেকেই অনুমিত ছিল। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মসজিদ খুলে দেওয়ার খবর আসায় ব্রিটিশ মুসলমানদের মনের কোনে আশা জাগতে শুরু করেছিল। হয়তো ঈদের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক ঘোষণা আসতে পারে।
হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে এবার ঈদ তার বিবর্নতা পূর্ণ করেছে। ঈদের মুল আনুষ্ঠানিকতা হল ঈদের নামাজ পরা, একে অপরকে জড়িয়ে ধরা আমরা যাকে কোলাকুলি বলি এবং অতঃপর স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা কুশল বিনিময় আর মিষ্টি মুখ। মরণ ঘাতি করোনা এবার কেড়ে নিয়েছে এর সব কিছুই। জীবন বাঁচাতে পৃথিবী ব্যাপী সামাজিক দূরত্বের যে বাধ্য বাধকতা তার অংশ হিসেবেই একটা ঈদ বিসর্জন দিতে হয়েছে আড়াই মিলিয়নের বেশি ব্রিটিশ মুসলমানকে। হতাশা থাকলেও অনেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে যে অন্তত আমাদের মরণ ভাইরাস করোনা থেকে মুক্ত রেখেছেন।

বন্ধু-স্বজনের সঙ্গে দূরত্ব মেনে আড্ডা দিয়েছেন অনেকে। ছবি: লেখক
বন্ধু-স্বজনের সঙ্গে দূরত্ব মেনে আড্ডা দিয়েছেন অনেকে। ছবি: লেখক

আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মসজিদে বা ঈদগাঁয়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি এবার ব্রিটেনে। ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলসহ ব্রিটেনের নেতৃত্ব দেওয়া সকল মুসলিম সংগঠন ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বিবৃতি প্রদান করেছে। ব্রিটেনের মুসলমানেরা এই নির্দেশনা মেনে নিজ পরিবারের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নিজ উদ্যোগে অল্প কিছু মানুষ নিয়ে খোলা আকাশের নিচে নামাজ পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। তবে এই সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য।
একেবারে নিকট আত্মীয় বা কাছের বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কেউ কারো সাথে দেখা করতে যাননি। বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে খোলা পার্ক বা ময়দানকে, তাও সামাজিক দুরুত্ব অনুসরণ করে। তবে আবার যেটি সব চাইতে বেশি হয়েছে তা হল ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ। ভার্চ্যুয়াল জগতের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রুপ চ্যাট ছিল সব চাইতে জনপ্রিয়।
ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এবং ব্রিটিশ লেবার পার্টি নেতা নাসরিন খান বলেন, এবারের ঈদ আমাদের লাইফ টাইম অভিজ্ঞতা। অতি সত্বর এই মহামারী কেটে যাবে এবং আমরা অবশ্যই আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে যেতে পারব ইনশা আল্লাহ। এই বিশেষ পরিস্থিতে আমাদের আইন মান্য করে চলতে হবে যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটে। তিনি সবাইকে ঈদুল ফেতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।