করোনা মহামারিতে খাদ্যসামগ্রী উপহার

অসহায় পরিবারকে খাদ্য উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
অসহায় পরিবারকে খাদ্য উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায় সেই ভাবনা থেকেই চার বন্ধু শাহিন (ফ্লোরিডা) , মুকিত (বার্লিন), জুয়েল ও সজীব (ঢাকা) মিলে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করি। নিজেদের ও কিছু ঘনিষ্ঠ জনদের সহায়তায় একটা ফান্ড গঠন করি এই মহামারি পরিস্থিতিতে সাময়িক দূর্দশায় পতিত মানুষদের জন্য খাদ্য উপহার (ত্রান/সহায়তা বলি না) দেওয়ার প্রস্তুতি নিই এবং পয়লা এপ্রিল প্রথম ধাপে ৪-৬ জন সদস্য বিশিষ্ট মোট ১১২টি পরিবারের জন্য আমরা ১ সপ্তাহের মৌলিক খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসাবে প্রদান করি। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ৮২৮ পরিবারকে।

প্রথম ধাপের ওই কয়টা ব্যাগ বিতরণ করতে গিয়ে আমরা অনুভব করি আরও বেশী মানুষের জন্য করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে আমাদেরই সম-ভাবনার আরও ৬ জন বন্ধু লগ্ন (মিশিগান), ঝর্ণা ও সোনিয়া (টরেন্টো), সলিল (নিউ ইয়র্ক), সাকিব (ঢাকা) এবং মিষ্টি (সিডনি)} কে যুক্ত করি। পাশাপাশি ফেসবুক ফান্ড রাইজিং, পে-পাল, ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও নগদ এর মাধ্যমে আমরা ফান্ড জড়ো করা শুরু করি। দেশ ও বিদেশে আমাদের বন্ধু, তাদের বন্ধু ও বন্ধুদের পরিবার থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২১৬টি পরিবার কে রমজানের শুরুর আগেই আমরা রমজানের ইফতার সামগ্রীসহ ১ সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসাবে দিতে সমর্থ হই।

রমজানের মাঝামাঝি সময়ে আমরা আমাদের তৃতীয় পর্যায়ে একইভাবে মৌলিক ইফতার সামগ্রী ও ১ সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী সহ মোট ৫০০টি পরিবার কে উপহার হিসাবে দিতে সমর্থ হই। এই তিন পর্যায় মিলিয়ে আমরা মোট ৮২৮ পরিবার, (আনুমানিক ৩৫০০+ মানুষ) কে আমাদের খাদ্য উপহার প্রদান করি। ঈদ-উল-ফিতর কে মাথায় রেখে আমরা এবার আমাদের চতুর্থ ধাপে ঈদের দিনের জন্য বিশেষ খাবার সহ মোট ৪৭৭ পরিবারকে ১ সপ্তাহের মৌলিক খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসাবে প্রদান করেছি।

একটি পরিবারের সাত দিনের খারারের জন্য আনষঙ্গিক জিনিসপত্র বিতরণের জন্য বস্তায় ভরা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
একটি পরিবারের সাত দিনের খারারের জন্য আনষঙ্গিক জিনিসপত্র বিতরণের জন্য বস্তায় ভরা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল; আমাদের বন্ধু মহল-এর মধ্যে কেউ দূর্দশায় থাকলে, তাদের আত্মীয় বা পরিচিতদের মধ্যে এমন কেউ যদি থেকে থাকেন, যারা আসলে রাস্তায় নেমে সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারেন না, আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে উপার্জন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করাটাও দূর্বিষহ হয়ে দাড়িয়েছে, তাদের ঘরে এই খাদ্য উপহারটা পৌছে দেওয়া।

এই প্রক্রিয়াতে বিতরণে আমাদের অনেক বন্ধুরা ওইসব মানুষদের তালিকা দিয়ে ও নীরবে তাদের ঘর পর্যন্ত আমাদের উপহারের ব্যাগগুলো পৌছে দিতে সার্বিক সহায়তা করেছে। আমরা আমাদের খাবারের ব্যাগগুলো আমাদের ঐসব বন্ধুদের কাছে পৌছে দিই, তারা সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের তালিকার দূর্দশাগ্রস্থ মানুষদের ঘর পর্যন্ত উপহারের ব্যাগগুলো পৌছে দেয়। মাঝে মাঝে দেশের বন্ধুরা নিজেরাও ওই মানুষগুলোর ঘর পর্যন্ত গিয়ে হাজির হই। মুখের ভাষায় বলে প্রকাশ করা সম্ভব না তখন ওই মানুষগুলোর চোখের ভাষা, কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।

অধিকাংশ সময় আমাদেরকে কিছুটা মন খারাপ করে ফেরত আসতে হয়, সেখানে অন্যদেরকে সহয়তা প্রদান করতে না পারার জন্য। সেই উপহার প্রদান করতে না পারা মানুষগুলোর কথা চিন্তা করেই আমাদের প্রতিটি ধাপ আগের থেকে বড় হচ্ছে, এবং আমরা আরও বেশী বেশী পরিবার কে উপহার প্রদান করতে পারছি।

পরিশেষে আমাদেরকে অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই, আমাদের সকল বন্ধু ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে, যাদের অংশগ্রহন ছাড়া আমাদের এই কয়েক জনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।