ইতালিতে খুলে দেওয়া হলো ঐতিহ্যের পিসা টাওয়ার

খুলে দেওয়া হয়েছে ইতালির পিসা টাওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
খুলে দেওয়া হয়েছে ইতালির পিসা টাওয়ার। ছবি: সংগৃহীত

মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জনজীবন। করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। চালু হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এবার পর্যটকদের জন্য দীর্ঘ তিন মাস পর খুলে দেওয়া হচ্ছে ইতালির ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান পিসা টাওয়ার।

আজ মঙ্গলবার পর্যটকদের জন্য পিসা টাওয়ার খুললেও জারি করা হয়েছে কিছু নিয়ম। হেলানো টাওয়ারটিতে একসঙ্গে ১৫ জনের বেশি দর্শনার্থী থাকতে পারবেন না। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং সবার হাতে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকবে, যার মাধ্যমে একজনের থেকে আরেকজনের দূরত্ব মনিটর করা হবে। কেউ ১ মিটার কম দূরত্বে আরেকজনের কাছে গেলেই কর্তৃপক্ষের কাছে সিগন্যাল চলে যাবে।

ঐতিহ্যবাহী পিসা টাওয়ারের ইতিহাস

ইতালির প্রাচীন গৌরবময় প্রসিদ্ধ নগরী পিসা। এটি ইতালির টাস্কানি অঞ্চলে অবস্থিত। পিসা শহরেই ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। সেই প্রাচীন নগরীতে রয়েছে একটি হেলানো টাওয়ার। ইতালীয় ভাষায় Torre di Pisa অথবা Torre pendente di Pisa। পিসা শহরের ক্যাথিড্রাল স্কয়ারের তৃতীয় প্রাচীনতম স্থাপনা এই মিনার।

পিসা শহরের নামকরণ করা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দীতে। আর পিসা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে এই টাওয়ারটিকে পিসার টাওয়ার বলা হয়। তবে দিনে দিনে এর ক্রমাগতভাবে একদিকে হেলে পড়ার ফলে এটির নাম পিসার হেলান টাওয়ার হয়ে যায়।

ভূমি থেকে আটতলাবিশিষ্ট এ মিনারের উচ্চতা প্রায় ৫৬ মিটার, সর্বমোট ওজন প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বর্তমানে এটি হেলে রয়েছে প্রায় ৩.৯৯ ডিগ্রি কোণে। এর রয়েছে ২৯৪টি সিঁড়ি।

পিসার হেলানো টাওয়ারের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করেন প্রকৌশলী টমাসো পিসানো। ১১৭৩ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৩৭২ সালে। নির্মাণের প্রথম সময় থেকেই কাঠামোটি হেলে পড়তে শুরু করে।

১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এর ক্রমাগত হেলে পড়া রোধে কিছু কাজ করা হয়। এবং নিয়মিত এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রকৌশলীদের ধারণা, পরবর্তী ২০০ বছর পর্যন্ত টাওয়ারটি আর হেলে পড়বে না।

প্রায় কয়েক শতাব্দী আগে মানুষের ভুল নির্মাণ কৌশলে তৈরি পিসার মিনারকে করে তুলেছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। পিসা মিনারে শিল্পীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি এবং কারুকার্যের সুন্দরভাবে হেলানো আকৃতি দেখলে যে কারও হৃদয় জুড়িয়ে যাবে।

ঐতিহ্যবাহী সেন্টরানিয়াইজ ইলুমিনেশন উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছরই চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দিত আলোকসজ্জায় সাজানো হয় পিসা মিনারকে। পিসার এই হেলানো মিনারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রায় ৫০ লাখ পর্যটনপ্রেমী।