মুক্তা চক্রবর্তীর ভিন্ন আয়োজন 'চিত্রশিল্পের সাথে বেঁচে থাকা' লন্ডনে শুরু

ব্রিটিশ বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর ব্যতিক্রম ধর্মী শিল্পভাবনা ‘চিত্রশিল্পের সাথে বেঁচে থাকা’ শুরু হলো। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর ব্যতিক্রম ধর্মী শিল্পভাবনা ‘চিত্রশিল্পের সাথে বেঁচে থাকা’ শুরু হলো। ছবি: সংগৃহীত

করোনায় আক্রান্ত সময়ে বেঁচে থাকার রসদ হিসেবে শিল্পকে ঘরবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর ব্যতিক্রম ধর্মী শিল্পভাবনা ‘Stay Alive With Fine Arts’ বা চিত্রশিল্পের সাথে বেঁচে থাকা’ শুরু হলো আজ রোববার।

সুতপা চৌধুরীর উপস্থাপনায় শিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর নিজের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি লাইভে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং নাট্যনির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী, বার্মিংহাম থেকে অভিনেতা, নির্দেশক এবং লেখক মুরাদ খান এবং ঢাকা থেকে প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী এবং কমিউনিটি বেইজ শিল্প সংগঠন গিদরী বাউলের প্রধান কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা করোনাকালীন এবং করোনা–পরবর্তী সময়ে শিল্পী এবং সংগঠনের টিকে থাকা এবং অবস্থার সঙ্গে অভিযোজনের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে চিত্রশিল্পী মুক্তা চক্রবর্তী লিখিত বক্তৃতায় তাঁর এই ভিন্নধর্মী শিল্পভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই মহামারি অন্য সব পেশার মতো শিল্পী এবং শিল্পপ্রেমীদের জন্যও হতাশার কারণ। শিল্পীরা নিজেদের কাজ মানুষের সামনে তুলে ধরতে না পারলে যেমন একধরনের হতাশাগ্রস্ত হোন, ঠিক তেমনি শিল্প অনুরাগীরাও নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শিল্পের রস আস্বাদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিনের পর দিন ঘরে থেকে মানুষ মানসিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন। সেসব শিল্প অনুরাগী যাতে সহজেই ঘরে বসে শিল্পের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত রাখতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আঁকব সাতটি চিত্রকর্ম। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিজের আঁকা নির্বাচিত কিছু চিত্রকর্ম দিয়ে করবেন একটা ভার্চ্যুয়াল একজিবিশন। সেই সঙ্গে নতুন ধারার একটি শর্টফিল্ম তৈরি করে নিজের রংতুলিকে উপজীব্য করে তুলব।

নতুন ধারার এই ফিল্মকে ক্যানভাস ফিল্ম নাম দিয়ে শিল্পী জানালেন প্রতিটা চিত্রকর্মের একটা গল্প থাকে। প্রতিটা রং একেকটা অর্থ বহন করে, প্রতিটা তুলির আঁচড়ে থাকে এক–একটা কারণ। ক্যানভাস ফিল্মে উঠে আসবে একটি চিত্রকর্মের প্রতিটা আঁচড়, রেখা আর রঙের গল্প।

লোগো উন্মোচনের পরে করোনাকালীন বা করোনা–পরবর্তী সময়ে শিল্পী এবং শিল্প সংগঠনের অভিযোজন সম্পর্কে সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, হাততালি মুখর প্রসেনিয়াম ছাড়া যেখানে নাটক মঞ্চায়নের কথা কখনোই ভাবিনি, সেখানে আজকের বাস্তবতা ভিন্নভাবে মঞ্চনাটকের শিল্পভাবনা ভাবতে বাধ্য করছে।

অনুষ্ঠানের লাইভ অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
অনুষ্ঠানের লাইভ অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

মুরাদ খান বলেন, ‘আমরা ক মাস আগেও লাইভ সম্প্রচার নিয়ে ভাবিনি কিন্তু এখন ভাবছি। এই করোনা আক্রান্ত অস্বাভাবিক সময়ে ভিন্নভাবে মঞ্চায়ন বা শিল্পভাবনা ভাবতে হবে। সেই ভিন্ন ভাবনা থেকেই আমাদের কিছু কাজ ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে এবং অবস্থার সঙ্গে অভিযোজন করে টিকে থাকাটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। করোনাকালীন ঘরবন্দী সময়ে শিল্পানুরাগীসহ সব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন শিল্পভাবনার ভার্চ্যুয়াল বিস্তারকে তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী ও সময়োপযোগী বলে আখ্যায়িত করেন।

চিত্রশিল্পী কামরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা শিল্পের মূল কাজটা করেন, সেহেতু তাঁর প্রধান উদ্বেগ ছিল কীভাবে সবাইকে নিয়ে টিকে থাকবেন। ইতিমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই কিছু কাজ তাঁরা করছেন এবং অবশ্যই ভবিষ্যতে যদি এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তবে শিল্পীরা কীভাবে মোকাবিলা করবেন, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে।