এগিয়ে এল 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'

করোনার এই দুর্যোগের সময় দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে ‘Concerts for Bangladesh’। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাঙালি শিক্ষার্থীরা মিলে তৈরি করেছে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি অনুষ্ঠানের। উদ্দেশ্যে হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা। ইতিমধ্যেই কনসার্ট ফর বাংলাদেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষদের থেকে।

‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর সিরিজের শেষ কনসার্টটি ২৭ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় তাদের ফেসবুক পেজসহ (www.facebook.com/concertsforbangladesh/) তিন সংগঠনেরই পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের সঙ্গে থাকবে বাংলাদেশি ব্যান্ড মেঘদল ও চিত্রপট। এর আগে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সরাসরি সম্প্রচার করে তারা। সম্প্রতি তাদের অনুষ্ঠান দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। অনলাইন ফান্ড রেইজিং প্লাটফর্ম give.asia'য় তাদের তহবিলে জমা হয়েছে ২০০০ সিঙ্গাপুর ডলারেরও বেশি। তহবিলে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে নিজ উদ্যোগে তারা খাবার পৌঁছে দিয়েছে ঢাকা, শেরপুর, গাজীপুর, সোনারগাঁ এবং খাগড়াছড়ির চার শতাধিক মানুষের কাছে।

গত মে মাস থেকে শুরু করে তারা সর্বমোট ১৫ টি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লাইভে যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের তিরিশের বেশি শিল্পী এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’– এ। গানে অংশগ্রহণ করে সংগীতদল ঐক্যতান, অপনঘর, সমগীত, সভ্যতা, রেহান রাসুল, মেহতাব আলী নিয়াজী, নন্দিনী নেরুলা, অপূর্ব চক্রবর্তীসহ অনেকে।নাচে ছিলেন মোল্লা আফসার খান, জুয়ারিয়াহ মৌলি, ইমরান ইশতিয়াক, সিনথিয়া, জ্যোতিকা জোশি, অনুপমা ঝ, শুদ্ধ শ্রীময়ী দাস, অলকা দাস প্রান্তিসহ অনেকে। প্রবাসীদের মধ্যে দুটি গানের দল মাইগ্রান্টস ব্যান্ড সিঙ্গাপুর ও ড্রিমস আ্যরাইভড গান পরিবেশন করে। আবৃত্তি করেন শরীফ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর খান ও রিপন চৌধুরী। কলকাতা থেকে দ্য মিলিপুটসহ ছিলেন বাংলাদেশের আনুশেহ অনাদিল, জয় শাহরিয়ার, জন কবির আর অবন্তী সিঁথীসহ অনেকেই।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী বাংলাদেশি দিমিত্রা মেঘবতী। তিনি পড়াশুনা করছেন সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। দিমিত্রা মেঘবতী জানান, যুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের পয়লা আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই তাঁর এই আয়োজন।

দিমিত্রা মেঘবতী বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, আদিবাসী সম্প্রদায়, যৌনকর্মী এবং বাংলাদেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীকে সহায়তার লক্ষ্যেই আমাদের এই উদ্যোগ, দেশের বাইরে থেকেও আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
‘রোজার মাসে আমরা দুই বেলা চিড়া খাইয়া আছিলাম, আর কিছু চোখেও দেখি নাই।’ ত্রাণ দিতে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের এভাবেই কষ্টের কথা বলেছিলেন অসহায় স্বামীহীন এক নারী। তাঁর কাছে পৌঁছানো খাবারের ব্যাগটি তাঁর সন্তানদের আহারের জোগান দেবে ১২-১৫ দিন। খাবারের প্যাকেট হাতে পেয়ে অন্তত ১০-১৫ দিন তাঁর শিশুরা ক্ষুধার্ত থাকবে না ভেবেই তাঁর মুখে ফুটে উঠেছিল হাসি। খাবারের ব্যাগে ছিল চাল, আলু, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশের আয়োজনে সহযোগিতা করছেন বাংলাদেশের Travelettes of Bangladesh—ভ্রমণকন্যা, যুক্তরাষ্ট্রের Bengalis of New York এবং Children of 1971 নামের তিনটি সংগঠন।

ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যার সহপ্রতিষ্ঠাতা মানসি সাহা জানান, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে বাংলাদেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। নিজ উদ্যোগে আমরা খাবার পৌঁছে দিয়েছি সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকার মানুষের কাছে।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশের টিমের সদস্যরা হলেন রায়হানুর কবির, নিউৎস রাজেশ, সুদেষ্ণা অধিকারী, মেহতাজ হক, কে. এন. রাহুল কার্তিক, মুসাররাত বিনতে সালাম ও হাবিবা আফরোজ।