হঠাৎ উৎসব

জন্মদিন কেক কাটার অনেক শখ আকবরের। ফাইল ছবি
জন্মদিন কেক কাটার অনেক শখ আকবরের। ফাইল ছবি

আকবর আলীর আজ জন্মদিন। সাদাসিধা মানুষ, নিঃসঙ্গ, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারত একজন। ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সটাতে অনেক মানুষেরই অনেক ধরনের দায়িত্ব থাকে; স্বপ্ন–আহ্লাদ থাকে। পরিবার–পরিজনের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা থাকে। শেষ বয়সে ছেলে-মেয়ের সফলতা দেখে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলার ইচ্ছা থাকে। 

সন্তানের উপার্জনে ভাগ বসানোর শখ না থাকলেও ছেলে-মেয়ে খুশি হয়ে একটা লুঙ্গি উপহার দিলেও পরম যত্নে লুঙ্গিটা পরিধানের জন্য আরও দুটো দিন বেশি বাঁচতে সাধ জাগে। সারাটা জীবন যাদের জন্য সব শখ–আহ্লাদ ত্যাগ করে জীবনের ঘানি টানতে টানতে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া, আজ তাদেরই জন্য, তাদের নিয়ে সুখে–শান্তিতে আর কটা দিন পৃথিবীর আলো দেখার জন্য ছটফট করে অবচেতন মন।


কিন্তু কজনেরই–বা সেই সুখ হয়? ষাটকে ছোঁয়ার আগেই কাউকে কাউকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিজনিত সব রোগ ছুঁয়ে ফেলে। তারপর ফিনাইল আর স্যালাইনের গন্ধমাখা হাসপাতালের বিছানাকে নিত্যসঙ্গী বানায়। কেউবা নিজেকে ছেলে আর ছেলে বউয়ের সংসারে উটকো ঝামেলা হিসেবে আবিষ্কার করেন। কারও জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী, অর্ধাঙ্গী সংসার জীবনের সব রাগের ঝাল মিটিয়ে আগেভাগেই আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান। কেউ কেউ জীবনের সব সঞ্চয়টুকু দিয়ে ছোট একটা নীড় তৈরি করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঠে নামে, কারও নীড় তৈরি হয়, কারও তৈরির মাঝ রাস্তাতেই যমদূতের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।


জীবন বিচিত্র। ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া দুষ্কর। তবু অনেকেই কিছু কিছু স্বপ্ন, শখ, আহ্লাদ, কষ্ট করে হলেও পূরণ করে ফেলেন। মৃত্যুর পর তাঁদের প্রিয়জনেরা এসব পাওয়া না–পাওয়ার গল্প করেন। স্বপ্নপূরণের গল্প শুনতে মন্দ লাগে না।
আকবর আলীর একটাই শখ। মৃত্যুর আগে একবার ঘটা করে জন্মদিন উদ্‌যাপন করবেন। খুবই সামান্য একটা ইচ্ছে। চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর হালকা সঞ্চয়ের টাকায় জীবন চলে যাচ্ছে। তাঁর তেমন কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা অভিলাষ নেই। দুকূলে পরিবার, পরিজন, আত্মীয় বলতেও কেউ নেই। সেই ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। বড় দুই বোন বিবাহিত, অসুস্থ মায়ের সঙ্গটুকুই ছিল একমাত্র সম্বল। কিন্তু কলেজ পার হতে না–হতেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাকে হারাতে হলো। বড় দুই বোন নিজেদের শ্বশুরবাড়ির বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াতে জড়াতে ভাইটাকে ভুলে না গেলেও ঠিকমতো খোঁজ রাখতে পারতেন না।


আকবর আলী মাঝে মাঝে বোনের বাড়ি বেড়াতে যেতেন। বোনদের সঙ্গে বয়সের অনেক পার্থক্য থাকায় সেভাবে সখ্য গড়ে ওঠেনি। মা মারা যাওয়ার পর মনে হলো, বোনেরাই তো আপন। কিন্তু বোনের বাড়িতে বোনের সঙ্গে বসে দুদণ্ড খোশগল্প করারও সুযোগ হতো না। গৃহস্থ বাড়ির শত কাজকর্মে বোনেরা ব্যস্ত। আকবরকে সন্তানের মতোই ভাবতেন তাঁরা। আকবর আসলে ভালো কিছু খেতে দেওয়াটাকেই মনে করতেন একমাত্র দায়িত্ব।

আকবর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে বোনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অযথা বকবক করে একসময় দরজার দিকে পা বাড়াতেন। যে নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বোনের বাড়ি যাওয়া, বোনের বাড়ি থেকে ফিরলে ও নিঃসঙ্গতা বহুমাত্রায় বেড়ে গিয়ে আকবরকে সারা রাত জ্বালাত। বেচারা আকবর তাই কোনোমতে একা একা নিজের পড়ালেখাটা শেষ করলেন। একলা পথ চলতে গিয়ে ওই পড়ালেখাকেই আপন মনে হতো। ছোটখাটো একটা চাকরিও পেয়ে গেলেন।
তারপর আর কী! বোনেরা দায়িত্ব বুঝে আকবরকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। আকবর ভেবেছিলেন, এবার বুঝি তাঁরও পরিবার হবে। একলা পথে একজন চিরসঙ্গী পাবেন।

আকবর কখনো খেয়াল করে দেখেননি তাঁর বউ ঠিক কতটা সুন্দরী! কিংবা আদৌ বউটির রং রূপ কতটুকু আছে! পোলাও কোরমা রাঁধতে পারেন কি না! ছোট মাছের পাতুরীর সঙ্গে পাতলা ডালের ব্যবস্থা রাখার বুদ্ধিটুকু আছে কি না!
আকবর শুধু চেয়েছিলেন ডাল ভাতটুকু একসঙ্গে বসে খেতে। একজন পাশে থাকলেই আকবর মন খুলে নিজের শখ–আহ্লাদগুলো পূরণ করতে পারতেন। বউটির শখ–আহ্লাদগুলোতেও ভালোবেসে ভাগ বসাতে পারতেন।
কিন্তু বিধি বাম! বছর ঘুরতে না–ঘুরতেই আকবরের বউটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলেন। আকবরের পরিবার পূর্ণ করার জন্য যার আসার কথা ছিল, সে ছোট প্রাণটি আসার আগেই পরিবার অপূর্ণ করে দিল!
না, এত মায়া জন্মায়নি আকবরের! তাই এমন কোনো গভীর কষ্টও পাননি। বাপ-মা মরা আকবর বউটিকে ঠিকমতো ভালোবাসতে পারার আগেই ভালোবাসার বন্ধন থেকে একদম মুক্তি পেয়ে গেল!
অনাগত সন্তানের জন্য ভালোবাসা সঞ্চয় হওয়ার আগেই অনাগত সন্তানও আকবরকে ভালোবাসা আর দায়িত্বের বোঝা থেকে কেমন যেন ছাড় দিয়ে দিল।

সে বছর ছিল বিয়ের পর আকবরের প্রথম জন্মদিন। তাঁর খুব সাধ ছিল বউ–বাচ্চা নিয়ে একটা কেক, কিছু মোমবাতি আর একটু ভালোমন্দ খেয়ে জন্মদিন উদ্‌যাপন করবেন!
কেউ হাততালি না দিলে কি জন্মদিনের কেক কাটা যায়? সারাটা জীবন কারও হাততালির প্রতীক্ষায় আকবর নিঃসঙ্গ জন্মদিনগুলো পার করেছেন। বোনেরা নিজেদের জন্মতারিখও জানে না, জন্মদিন তো দূরের কথা। আকবর তাই বোনদের কাছে গিয়ে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপন করবেন, সে আশা করতেও লজ্জা পেতেন।
ভেবেছিলেন, নিজের পরিবারের সঙ্গে নিজের মনের কথা বলবেন, আনন্দ করবেন! তা–ও হলো না।
আকবরের বোনেরা অবশ্য যে কটা দিন বেঁচে ছিলেন, তাঁকে আবারও বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু আকবরের মনে হতো, প্রকৃতি বুঝি তার জন্য নিঃসঙ্গতার ডায়েরি লিখে রেখেছেন। যদিও প্রকৃতির খেয়াল বোঝার সাধ্য কারও নেই, তবু

প্রকৃতির অপ্রকাশিত পরিকল্পনাকে আকবর সাদরে মেনে নিলেন।
চাকরি করতে করতে জীবনের শেষ পর্যায়ে কী করে পৌঁছালেন, নিজেও জানেন না। সেভাবে বন্ধু, সহকর্মী কখনো হয়ে ওঠেনি তাঁর। যে দু–একজন কাছের ছিল, তাঁদের কাছে সংসারের সমস্যা শুনতে শুনতে ভাবতেন ভালোই হয়েছে বিয়ে থা করে আর থিতু হতে হয়নি। অল্প বেতনের চাকরি দিয়ে এই যুগের বউ–বাচ্চার সাধ মেটানো বেশ কষ্টসাধ্যই হতো হয়তো।
কিংবা হয়তো স্বল্প বেতনে বেশ সুখে–শান্তিতেই থাকতে পারতেন! অতসবের যোগ–বিয়োগে যেতে চান না। যা হয়েছে বেশ হয়েছে। এত দিন ধরে চাকরি আর নিজের থাকা–খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন একটা কেক আর কয়েকটা মোমবাতির আলোয় কল্পনা করা হাততালির শব্দ।
কিন্তু দুই বছর ধরে অবসর জীবন যাপন করায় কোথা থেকে যেন জন্মদিনের ভূত আবার মাথায় চাড়া দিয়ে বসল! প্রথম দিকে নিজেরই লজ্জা পেত। বুড়ো হয়েছে, চুলে পাক ধরেছে, এক পা কবরে, তবু কী সব উদ্ভট খায়েশ!
কিন্তু এক মাস ধরে মনে হচ্ছে, পরের জন্মদিনটা যদি আর না আসে! বয়স তো কম হলো না। মরে যাওয়ার আগে নিজেই নিজের জন্য একটা কেক কেটে নিজেকেই নিজে হাততালি দিলে সমস্যা কোথায়? আর লজ্জাটাই–বা কার কাছে? তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করার মতোও তো কেউ নেই তাঁর পাশে!
অতঃপর যে ভাবনা, সেই মতো কাজ করতে নিজের সবচেয়ে ভালো শার্টটা পরে টাক মাথার যে অল্পবিস্তর আধা পাকা চুল আছে, তা যত্ন করে আঁচড়ে রওনা দিলেন কেকের দোকানে!
ঠিক করলেন শুধু কেক আর মোমবাতি নয়, কিছু বেলুনও কিনবেন। সাদা শোলায় নিজের নামও লিখিয়ে নেবেন!
‘শুভ জন্মদিন আকবর’
আর তা লিখতে গিয়েই আকবরের দেখা হলো আরেক আকবরের সঙ্গে। শোলার দোকানের বাচ্চা ছেলে, সাত–আট বছর হবে হয়তো, দোকানের মালিকের ফুটফরমাশ খাটে! ফোকলা দাঁতে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে,
‘আকবর কেডা? আমনের পোলার নামও তো আকবর! হি হি’

হাসিটাতে কী মায়া ছিল আকবর আলী জানেন না, তিনি বললেন,
‘আমার নামই আকবর’
‘হি হি, সত্যি? আমার মা কয় আমি রাজা আকবর! আমনে কি রাজা আকবর?’
বেশ খানিক সময় লাগল আকবরের ব্যাপারটা বুঝতে। অতঃপর মনে হলো, বাচ্চা আকবর সম্ভবত দিল্লির সম্রাট আকবরের কথা বলছে। কারও থেকে শুনেছে হয়তো।
‘আরে না ব্যাটা! আমি কেন রাজা হতে যাব? আমার নাম আকবর আলী!’
‘আমনের জন্মদিন আইজ?’
‘ওই আরকি! তা, তোর জন্মদিন কবে?’
‘হা হা হা...কিয়ের জন্মদিন? জন্মদিন কবে হয়? কেমনে বোঝা যায় জন্মদিন? মা তো আমারে কিছু কয় নাই।’
‘তোর বুঝি মাই সবকিছু বলে দেয়?’
‘হ, মায় বেবাক জিনিস জানে তো!’
‘কই তোর মা?’
‘দোকানের পেছনেই। ফুলের মালা বানায়। আর আমি এহানে দোকান গুছাই।’
‘বাপ কই তোর? ভাই–বোন?’

‘মায়ে কইসে বাপে ভাগসে। আমি একাই মায়ের রাজা। ভাই–বোন নাই। হি হি’
আকবর একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন ছোট আকবরের দিকে। কী খুশি, কী সুন্দর করে কথায় কথায় মুখভরা হাসি। মানুষ যে শত সমস্যার ভেতরেও এত নির্মল আনন্দে বেঁচে থাকতে পারে, তার কত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতক্ষণে ছেলেটা খেয়াল করল, আকবর আলীর হাতে কেকের বাক্স, ছোট একটা স্বচ্ছ পলিথিনের ভেতরে বেলুন মোমবাতি।
‘বাক্সে কেক? কখন খাইবেন? বেলুন ফুলাইতে পারেন? আমারে দেন, আমি ফুলায়ে দেই। আমার ম্যালা শক্তি!’
‘ওই বদের হাড্ডি, চুপ কর! কাস্টমারের লগে সারা দিন বকবক বকবক, যা দোকানটা ঝাড়ু দে!’

লেখক
লেখক

দোকানমালিকের এক ধমকে আকবর দৌড় দিল। আকবর আলী খেয়াল করলেন, তখনো বাচ্চা আকবরের মুখে হাসির ফোয়ারা! মালিকের সঙ্গে বিল মিটিয়ে শোলার তৈরি জন্মদিনের ব্যানারটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন। ফিরতে হবে, আকবরকে জানানো হলো না যে সে বেলুন ফোলাতে পারবে কি না! আজ এত বছর পরে আকবরের হাসির ভেতরে কেমন একটা আপন আপন গন্ধ পেল আকবর আলী। সারা জীবন যত চেষ্টা করেছে নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে, আজ কোনো চেষ্টা ছাড়াই নিজের এই সমস্যা কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
শাহবাগের ব্যস্ত রাস্তায় বাসের জন্য না দাঁড়িয়ে শোলার দোকানটির পেছনের ঝুপড়িতে চলে গেলেন আকবর আলী।
বেশ কিছু মহিলা ফুলের মালা গাঁথছে আর নিজেদের ভেতর কুটকুট করে কথা বলছে।
আকবর আলী কাছে গিয়ে বলল,
‘এখানে রাজা আকবরের মা কে?’
ক্ষণিকের জন্য থতমত খেয়ে সব মহিলা তাকাল আকবরের দিকে। আকবর আবার জিজ্ঞেস করলেন। ভয়ে ভয়ে ছোটখাটো এক মহিলা মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ালেন। যেন তাঁর রাজা আকবর না–জানি কোনো অপরাধ করেছে, সেই শাস্তি হয়তো এখন পেতে হবে তাঁকে!
‘রাজা আকবরকে একটু ডেকে আনেন। তার সাথে আমার কথা আছে।’
মহিলা যেন একদৌড় দিতে পারলে বাঁচে। এই ছেলের কারণে কত নালিশ যে শুনতে হয়। সারা দিন সব কাস্টমারের সঙ্গে বকবক করে। কাজে কোনো মন নেই। কাস্টমার থেকে এটা–সেটা চেয়ে বসে! কী লজ্জা!

আজ কী করেছে খোদা জানে, যে কাস্টমার দোকানের মালিককে নালিশ না দিয়ে আকবরের মায়ের কাছে চলে এল!

কান ধরে টানতে টানতে আকবরকে ধরে আনলেন তার মা! আকবরের চোখে পানি কিন্তু মুখে হাসি! চেঁচাতে লাগল, ‘কিচ্ছু চাই নাই মা। খালি কইসি বেলুন ফুলাইয়া দিমু। ট্যাকাও চাই নাই।’ আকবর আলী কাছে গিয়ে আকবরের মাথায় হাত রাখলেন।

‘রাজা আকবর! চোখের পানি মোছ। তুই কত বেলুন ফোলাতে পারিস আমি দেখব। এই নে, সব বেলুন ফোলা। আজ তোর জন্মদিন। তুই কেক কাটবি, মোমবাতি ফুঁ দিবি, আমরা সবাই হাততালি দিব। যা, তোর বন্ধুদেরকে ডাক!’

আশপাশের মহল হতবাক হবার আগেই ঘটনাটি বিশ্বাসযাগ্য করার জন্য আকবর আলী মাটিতেই বসে পড়ল। সে ভুলেই গেল যে সবচেয়ে ভালো শার্টটি আজ পরেছে!
কেকের বাক্স খুলে কেকটা বের করল। বেলুন বের করে নিজেই ফোলানো শুরু করল। ততক্ষণে রাজা আকবর বুঝে গেছে এই আয়োজন তার জন্য! হইহই করে সে আশপাশের সবাইকে ডাকতে লাগল। তার চোখেমুখে রাজ্যের খুশি!
বাচ্চাকাচ্চাদের চিৎকারে যেন টিকে থাকা দায়! আকবরের মাসহ অন্য মহিলারাও বেলুন ফোলাতে লাগল। চারদিকে উত্তেজনায় কেউ খেয়ালই করছে না যে কারও মালা গাঁথার কথা, কারও দোকান ঝাড়ু দেবার কথা, কারও মালা বিক্রি করার কথা! আজ এ মুহূর্তে যেন সবার ছুটি! পৃথিবী স্তব্ধ, প্রকৃতি থেমে গেছে!
ব্যস্ত নগরীর সাধারণ দিনে অনাকাঙ্ক্ষিত হঠাৎ এই জন্মোৎসবের আনন্দ যেন সবকিছু ছাড়িয়ে গেল। সবার চোখমুখ ঝলমল করছে।
চিৎকার করে সবাই গান গাচ্ছে, শুভ জন্মদিন আকবর!
রাজা আকবর কেক কাটছে। সবাই হাততালি দিচ্ছে। আকবর আলীও মনের আনন্দে হাততালি দিচ্ছেন। যে আনন্দ পেতে চেয়েছিলেন নিজের জন্মদিনে অন্যের হাততালি শুনে, সেই আনন্দের কয়েক শ গুণ বেশি তিনি পাচ্ছেন নিজের জন্মদিনে নিজেই সবার সঙ্গে হাততালিতে মিশে গিয়ে!


আকবরের হাসিটা আবার দেখলেন তিনি! বাচ্চাটা কেক নিয়ে এসেছে তাঁকে খাওয়াবে বলে! আকবর বুকে জড়িয়ে নিলেন ছেলেটাকে! নিজের চোখে আবিষ্কার করলেন লোনা জল।
সবাই ছেড়ে চলে গেলেও যে একা বেঁচে থাকতে নেই, শত শত একা মানুষের সঙ্গেও যে সঙ্গ পাতানো যায়, তা কেন এক দেরিতে বুঝলেন তিনি? অনেক অনেক দিন বাঁচতে ইচ্ছে হলো তাঁর!