'কতশত অভিযোগের সেই ব্যস্ত জীবনটাই চাই'

লেখক
লেখক

জীবনটা অনেক দিন ধরে কোথায় যেন থমকে গেছে কেমন যেন অবরুদ্ধ হয়ে আছে পুরো পৃথিবী। প্রযুক্তির জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা দুনিয়ায় ফেসবুক খুললেই চোখে পড়ে আকুতি— ‘কেউ কি একটি আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?’ পুরো দেশে এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা আইসিইউ বেডের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। জীবন বাঁচাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় ছোটাছুটি করেও মিলছে না একটা আইসিইউ বেড। অক্সিজেন না পেয়েও মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। প্রতিদিন পৃথিবীর এই মৃত্যুপুরীর যোগ হচ্ছে অনেক সংখ্যা। শুধু যার আপনজন, তার হারাচ্ছে সংখ্যার চেয়েও বেশি কিছু।

লকডাউনে আমরা সবাই গৃহবন্দী সবাই সময় কাটাচ্ছি যার যার নীড়ে প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাচ্ছি না ভিড়ে। মানুষ আসলে জন্মগতভাবেই চিন্তাশীল এবং সৃষ্টিশীল। যেকোনো পরিস্থিতিতেই তার সৃষ্টিশীলতা থেমে থাকে না। মানুষ যখন বদ্ধ থাকে তখনো তার সৃষ্টিশীলতা বদ্ধ থাকে না। তবে বাসায় যত কাজই করি কেমন জানি একঘেয়েমি লাগছে। এই জীবন যত আরামেরই হোক, এই জীবনটা কখনো স্বাভাবিক না। করোনা ভাইরাস এসে সামাজিক মেলামেশাটুকুও কুড়িয়ে-কাঁচিয়ে নিয়ে চলে গেছে। রয়ে গেছে নিঃসীম একাকিত্ব।

একদিন সকালে ঘুম ভাঙলে দেখব সব ঠিক হয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে যাব গন্তব্যে, ব্যস্ত হব কাজে। আবার হয়তো অভিযোগ করব, ক্লান্ত হয়ে ব্যস্ততা থেকে একটু বিশ্রামের জন্য ছুটি খুঁজব। একটু ছুটি মিললেই ট্যুরের প্ল্যানিং করব আপন দেশে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যাওয়ার। কত দিন কাছের মানুষগুলোকে দেখি না। খুব শিগগিরই হয়তো দেখা হবে। হাসিমুখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরব মানুষগুলোকে!! স্রষ্টার কাছে মিনতি করি, আমাদের শত অভিযোগের ওই ব্যস্ত জীবনটাই ফিরিয়ে দাও।

নিকোলাস চ্যামফোর্ট বলেছেন, ‘যে-দিনটিতে হাসা গেল না, সে দিনটাই সবচেয়ে ব্যর্থ।’ মাস্ক পরে মুখ বন্ধ করে নয় প্রাণ খুলে প্রিয় মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাসিতে মেতে উঠব। সে হাসিতে করোনার জীবাণু জড়ানোর আতঙ্ক থাকবে না।

বিজ্ঞানীরা একযোগে কাজ করছেন, শিগগিরই হয়তো মিলবে করোনার ভ্যাকসিন। মানুষ শেষ পর্যন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিতবেই। করোনার এই দুঃসময়কে জয় করে মানুষ আবার উঠে দাঁড়াবে, আবার আঁধার কেটে গিয়ে আলোর প্রদীপ জ্বলে উঠবে সে প্রত্যাশা করি।

*পিএইচডি অধ্যয়নরত, সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রান্স