করোনা-পরিস্থিতিতে যুদ্ধাবস্থা ও একটি কবিতা

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯–এর আতঙ্ক। মানুষ মৃত্যুভয়ে শঙ্কিত। লকডাউন না হলেও মানুষ কার্যত গৃহবন্দী। যারা ঘরের বাইরে যাচ্ছে, তাদের চলাফেরা স্বনিয়ন্ত্রিত এবং বলতে গেলে সীমিত। এ ছাড়া উন্নত ও উন্নয়নশীল নির্বিশেষে সব দেশের মানুষের মধ্যে কমবেশি বিরাজ করছে নানান সমস্যা ও ঝুঁকি। যেমন জটিল রোগে ভোগা রোগীদের যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া, চাকরি বা ব্যবসা থেকে উপার্জন হ্রাস কিংবা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া, চাকরি থেকে ছাঁটাই এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে খাদ্যাভাব।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ এসব এক বা একাধিক সমস্যায় পতিত হয়েছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে যুদ্ধ চলমান এবং সম্প্রতি আরও কিছু অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সিরিয়ায় যুদ্ধ চলমান। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সে দেশের উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক নতুন সেনাবহর পাঠিয়েছে। একই সময়ে তুরস্ক ইরাকে বিমান হামলা চালিয়েছে। সৌদি জোট বিমান হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সানায়। আবার ইয়েমেন সৌদি আরবে পাল্টা হামলা করেছে। লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সৈন্যদের মুখোমুখি সংঘর্ষে সেনা হতাহত হয়েছেন। ভারতের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোতে পাকিস্তানি সেনারা মর্টারযোগে হামলা করেছেন।

যুদ্ধের কারণে বেশুমার নিরপরাধ নর-নারী ও শিশু বেঘোরে প্রাণ হারায়। যুদ্ধের ফলে অগণিত মানুষ পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। যুদ্ধের কারণে মানুষের সাজানো সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। যুদ্ধ মানুষের সহায়-সম্পত্তি ধ্বংস করে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয় এবং যুদ্ধ মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে দেশান্তরি হতে বাধ্য করে। মানবজীবনে যুদ্ধের এই শোচনীয় প্রভাব ও পরিণতি আমি আমার নিম্নের কবিতায় ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি :

যখন যুদ্ধ হয়

একদা কখনো আকাশ হতো নীল থেকে আরও নীল
হাওয়ায় মেঘমালা ভেসে ভেসে কোথা চলে যেত,
জ্যোৎস্নায় না জানি চাঁদ কোথা থেকে এত আলো পেত
উপকূল ঘিরে দেখা যেত দলে দলে কত গাঙচিল;

ঝিলের জলে ছিল সারসের দল, ভেসে বেড়াত আপনার মনে
কেউ কেউ সাথীরে ইশারায় কাছে ডেকে লয়,
তারপর দুজনে মিলে ডানা মেলে উড়ে যেত আকাশের পানে;
পাতার মতো দুটি পা গুটায়ে যতনে
ধবল দেহটিরে সটান করে উড়ে চলে
ঠিক যেভাবে উড়োজাহাজ উড়ে যায় শূন্যে।

নিসর্গের এত রূপ দেখা তো যায় না বহু দিন,
ভীষণ শব্দে দিগন্ত কাঁপিয়ে উড়ে যায় জেট ফাইটার
বোমার আঘাতে তছনছ হয় জনপদ,
গোলার কালো ধোঁয়ায় আকাশের নীলিমা হয় বিলীন।

ঘরছাড়া মানুষ ছুটে চলে অচেনা গন্তব্যে
কোনো নিভৃত গাঁয়ে, বুঝিবা নিরাপদ সেথা
রুগ্ন স্বজন পড়ে থাকে পিছনে
মানুষের মনে থাকে না কোনো মমতা।

সন্ধ্যা নামে নিঃশব্দে, হিংস্র শ্বাপদ নামে শিকারের খোঁজে
শত্রুসেনার দল লোকালয়ে দেয় হানা,
নিশাচর পাখি উড়ে যায় কেঁদে কেঁদে
কারফিউয়ের রাতে সার্চলাইটের মতো যেন জ্যোৎস্না।

যুদ্ধে নামে না শাসক দল, সুরক্ষিত বাংকারে
যুদ্ধের ছক আঁকে তারা, মানুষ কখনো চায়নি যুদ্ধ;
চায়নি অতি যত্নে গড়া তাদের সংসারে
ধ্বংস আসুক, প্রিয়জন নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি
কেউ কি হতে চায়? কেউ কি যেতে চায় দেশান্তরে?
শান্তির গৃহকোণ ছেড়ে, বিষয়সম্পত্তি ফেলে,
কেউ কি নিরুদ্দেশে যাত্রা করে?

যুদ্ধ মানেই শাসক দলের হারজিত খেলা,
পাখিদের স্বর্গরাজ্যে শকুনের আনাগোনা;
যুদ্ধ মানে মৃত্যু আর ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা,
নিঃস্ব হওয়া মানুষের দুঃখ ভোগ আর কান্না।