এই বাদল দিনে-২

১.

বাংলাদেশের শহরকে এমনিতেই দম বন্ধ লাগে আহসানের। গ্রীষ্মের এই ছুটির সময়টা আরও অসহ্য মনে হয়। সময় কাটে না। সাধারণ দিনগুলোতে ক্লাস, সেমিনার এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে সময় চলে যায়। এর ভেতর বাড়তি ঝামেলা বাধাল বাসার কেয়ারটেকার আবুল। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ উধাও। একবার উধাও, তার মানে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আসছে না, এটা নিশ্চিত।

বাসার সবকিছু আবুলের দায়িত্বে। প্রথম আহসান ভেবেছিল আবুল চলে যাওয়াতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। জীবনের একটা লম্বা সময় কেটেছে একা একা উচ্চ শিক্ষার্থে দেশের বাইরে। অনেক দিন পর রান্নাঘরে ঢুকে সমস্যা বাধল প্রথম কাজেই। দিনে কয়েকবার চা-কফির নেশা। অনেক তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর পাওয়া গেল কফির বোতল। শেষ পর্যন্ত চিনির খোঁজ পাওয়াই গেল না। কফি বানাতে গিয়েই এই অবস্থা দেখে নিজে রান্না করার চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হলো। বাসা থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা খাবারের হোটেল আছে। আপাতত ওটাই ভরসা। আর সময় কাটানোর জন্য একটা তালিকা বানিয়ে সিনেমা দেখা শুরু করল। সকালের নাশতা করার পর কোরিয়ান সিনেমা। বিকেল বেলা স্প্যানিশ আর রাতের খাওয়ার পর হলিউড। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সময় প্রচুর সিনেমা দেখা হতো। এখন অবশ্য তেমন দেখা হয় না। তবু নীরস এই ছুটির দিনগুলো টানা সিনেমা দেখে কোনোভাবে কেটে যাচ্ছিল।

এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা বাল্যবন্ধু মাইনুলের ফোন। কয়েক বছর আগে ওখানকার একটা এনজিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল চালু করেছিল। ওই স্কুলের আইডিয়াটাও ছিল খুব সুন্দর। অনেকটা স্যাটেলাইটের মতো। স্কুলের একটা অফিস আছে জরুরি কাজ করার জন্য। আর ক্লাসরুম হিসেবে আছে কিছু নৌকা। শিক্ষক হিসেবে যাঁরা আছেন সবাই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী। নৌকাগুলো বর্ষার এই সময়গুলোতে দ্বীপের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়ি থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নৌকার ভেতর ক্লাস নেয়। মাইনুলের কথা থেকে জানা গেল, স্কুলের কার্যক্রমে কিছুটা ঝামেলা তৈরি হয়েছে। একটি বাচ্চা কোনোভাবে হারিয়ে গেছে। এখন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের চাপে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। সরকারিভাবেও এখানে কিছু করার সুযোগ নেই। ব্যক্তিগতভাবে এই স্কুলের সঙ্গে মাইনুল জড়িত। তাই মাইনুলের চাওয়া, সময় থাকলে যেন সুনামগঞ্জ ঘুরে যায়। সঙ্গে এ-ও জানাল, এখন হাওর পানিতে টইটুম্বুর। নৌকা-বিলাসের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না।

সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওর দেশের অন্যগুলোর থেকে একদম আলাদা। একপাশে রয়েছে সবুজের চাদর বিছানো মেঘালয়ের হিমালয় পর্বতমালা। আর অন্য পাশে দিগন্তজোড়া পানি। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর জলজ গাছগাছালি। তাই প্রস্তাব লুফে নিতে দেরি করল না আহসান। আবুলের জন্য একটা চিরকুট দরজায় ঝুলিয়ে পরদিন সকালেই রওনা হয়ে গেল। কমলাপুর থেকে কালিনি এক্সপ্রেসযোগে সিলেট। সিলেট স্টেশনে রিসিভ করার জন্য মাইনুল গাড়ি নিয়ে তৈরি থাকবে।

ট্রেন থেকে নেমে চারদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখল। অনেক দিন পর সিলেটে আসা। প্রথমবার সিলেট আসা হয়েছিল চা-বাগান, জাফলং, সারিঘাট দেখার জন্য। কপাল মন্দ ছিল। আসার দিন ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল টানা বৃষ্টি। তাই যখনই সিলেটের কথা মনে আসে, চোখে ভাসে বৃষ্টিস্নাত সিলেট শহর। চা-পাতার শহর। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছেলেবেলা কেটেছে এই শহরে। ভাবতেই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে এই শহরের প্রতি। ট্রেন স্টেশন থেকে বের হতেই দেখল মাইনুল দাঁড়িয়ে আছে। সময় বেশি না থাকায় শহরের একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে দ্রুত রওনা হয়ে গেল। সিলেট শহর থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। যদিও রাস্তা তেমন ভালো নয়। তবে রাস্তার দুপাশ খুবই উপভোগ্য। দুপাশে সারিবদ্ধভাবে বিশাল বিশাল সব গাছপালা। কখনো চোখে পড়ে দিগন্ত বিস্তৃত হাওর। আঁকাবাঁকা নামবিহীন অনেক নদী। যেন ছায়াসুনিবিড় প্রকৃতির মায়া ছড়ানো সর্বত্র।

সুনামগঞ্জ শহরে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এল। থাকার জায়গা হিসেবে ঠিক করা হয়েছে সুরমা নদীর ওপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলো। আহসানের বুদ্ধিতেই এটা করা হয়েছে। কয়েকটা দিন একদম শহরের বাইরে কাটাতে চায় সে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু চারপাশ ঘুরে দেখল। গ্রামীণ জীবন যে এখনো এত সাধারণ রয়ে গেছে, এখানে না এলে বোঝাই যেত না। রাতের খাবার পর ডাকবাংলোর ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল আহসান। পাশ থেকেই শুরু হয়েছে বিশাল হাওর। সেখান থেকে এক কলতান সুরে ঢেউয়ের শব্দ আসছে। দূরের মাছ ধরার নৌকার বাতির আলো দেখে মনে হচ্ছে যেন হাওরের পানিতে অনেক তারা জ্বলছে।

রাতে ঘুমের ভেতর কিছু সুন্দর স্বপ্ন দেখল আহসান। এখানে সে একা আসেনি। মিলিও সঙ্গে এসেছে। একসঙ্গে নৌকায় করে ঘুরতে বেরিয়েছে দুজন। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আহসান মিলিকে ডাকছে নৌকার ছইয়ের ভেতরে চলে আসার জন্য। মিলি আসছে না। খিলখিল করে হাসছে সে। যেন এক কিশোরী। তার হাসির শব্দ বৃষ্টি আর ঢেউয়ের সঙ্গে সুর হয়ে মিশে যাচ্ছে।

২.

লম্বা একটা ঘুম দিয়ে সকালে যখন ঘুম ভাঙল, ততক্ষণে মাইনুল এসে হাজির। নাশতা শেষ করে রওনা হয়ে গেল স্কুলের কার্যক্রম দেখতে। স্কুলের অফিস একটু বর্ডারের পাশে। যে পাশটায় জাদুকাঁটা নদী শুরু হয়েছে, তার পশ্চিম পাশে। বারিক টিলার ওপর। নদীর এপারে বিশ্বম্ভরপুরের রাস্তাঘাট তেমন ভালো নয়। এদিকে চলাচলের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো মোটরসাইকেল। এখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। অনেকটা শহর অঞ্চলের রিকশার মতো। স্কুলের অফিসে এসে একটু চমকে গেল আহসান। এত সুন্দর একটা জায়গা। দেখল স্কুল অফিসকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দোকানপাট গড়ে উঠেছে। বোঝাই যাচ্ছে, এনজিওর কাজ ভালোভাবেই চলছে। এনজিও কর্মী, ভাসমান স্কুল কমিটির সবাই অপেক্ষায় ছিলেন আহসানকে স্বাগত জানানোর জন্য। এখানে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। এটা এঁদের চোখেমুখেই ফুটে উঠেছে। কিছুক্ষণের ভেতর এক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোবহান আলী হাজির। মাইনুল আগেই বলে রেখেছিল আহসানকে। সোবহান আলী খুবই ধূর্ত লোক। সে প্রথম থেকেই এই স্কুলের বিরুদ্ধে ছিল। প্রথম আড়ালে আবডালে বিরোধিতা করত। এখন প্রকাশ্যে এই স্কুলের বিরোধিতায় উঠেপরে লেগেছে।

—স্যার আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আপনি আসার খবর শুনে সব কাজ ফেলে রেখে চলে এলাম।

সোবহান সাহেব খুব হাসিখুশি ভাবে আহসান এসে জড়িয়ে ধরল।

—ধন্যবাদ কষ্ট করে আসার জন্য।

আহসান সৌজন্যমূলক জবাব দিল।

—স্যার, এরা এই গ্রামের যুবসমাজ। এরা আপনাকে ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে চায়।

এই বলে সোবহান সাহেব কয়েকবার ইশারা করল তার সঙ্গের একজনকে। কয়েকটি ছেলে এসে আহসানের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিল। এই মালা পরানোর ব্যাপারটায় আহসানের খুব অস্বস্তি বোধ হতে লাগল। কাঁচা ফুলের গন্ধটা বেশ কড়া লাগছে। সে ভালো করে লক্ষ করল সোবহান সাহেবকে। মাঝবয়সী ছোটখাটো একজন মানুষ। কাঁচা-পাকা দাড়ি, মেহেদি দেওয়া। মাথার চুল নিপুণভাবে আঁচড়ানো। ঠোঁট-মুখ লাল, বিরামহীনভাবে পান খাওয়ার অভ্যাস আছে, সেটা বোঝা যায়। তবে হাসলে লোকটার ভেতর একটা ধুরন্ধর ভাব চলে আসছে।

আহসান একটু চুপ থেকে সোবহান সাহেবকে লক্ষ করে বলল,

—চেয়ারম্যান সাহেব, আপনাদের স্কুল দেখতে এসেছিলাম। শহর থেকে অনেক শুনি আপনাদের এলাকার এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। তাই ভাবলাম এই গরমের ছুটিতে কয়েক দিন ঘুরে যাই।

শুনে সোবহান সাহেব একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিল। তবে তার চোখেমুখে একটা অস্থির ভাব আহসানের চোখ এড়াল না।

—আমরা তো সবাই আগ্রহ করে চেয়েছিলাম এই এনজিওর কাজ ভালোভাবে চলুক। কিন্তু একটা বাচ্চা হারিয়ে গেছে। ভাবেন তো কী কাণ্ড! এলাকার সব গণ্যমান্য ব্যক্তির চাওয়া এই স্কুলের কাজ বন্ধ হোক।

—স্কুল বন্ধ হলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? যে ছেলেটা হারিয়েছে তার কী হবে?

আহসান একটু বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

সোবহান একটা ধূর্তের হাসি দিল।

—স্যার, যে ছেলেটা হারিয়েছে তার বাপ ফজলু আমার জমি চাষবাস করে খায়। আমি না বললে সে মামলা মোকদ্দমা কিছুই করবে না।

সঙ্গের একজনকে ইশারা দিল, যা আহসানের চোখ এড়াল না। পাশ থেকে একজন বলল,

—চেয়ারম্যান সাব ঠিকই কইছে। ফজলুর বাপ-মা দুইটাই অইছে আমাদের চেয়ারম্যান সাব।

সোবহান সাহেব একটা দিলখোলা হাসি দিল।

—আসলে এই এলাকার সবাই আমারে খুব মায়া করে। তিন তিনবার চেয়ারম্যানি জিতাইছে।

আহসান এবার কিছুটা রাগমিশ্রিত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—তাহলে তো এই স্কুলের কাজে আপনার আরও খুশি হওয়ার কথা। আপনার এলাকায় শিক্ষার হার বাড়ছে।

সোবহান সাহেব গ্রামের রাজনীতি করা মানুষ। হুট করে রেগে যাওয়ার লোক না। পকেট থেকে একটা পানের কৌটা বের করল।

একটু সময় নিয়ে আয়েশ করে পান খাওয়া শেষ করে আহসানের কথার জবাব দিল,

—আসলে স্যার, এই বারিক টিলার ওপর কিছু গারো পরিবার বসবাস করে। এরাও চায় না এইখানে স্কুল, দোকান এসব হোক। এই স্কুলের কারণে এখানে শহর থেকে টেলিভিশনের, খবরের কাগজের সাংবাদিকদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তার ওপর শহর থেকে কলেজ-ভার্সিটির পোলাপান এসে এখানে তাঁবু টাঙিয়ে রাতে থাকে।

—চেয়ারম্যান সাহেব, ওই কলেজ-ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা এখানে আসে স্বেচ্ছায় এই স্কুলের জন্য কাজ করতে। এইদিকে থাকার ভালো জায়গা নেই তাই কয়েক দিন তাঁবু টানিয়ে থাকে। সোবহান সাহেবের অভিযোগের জবাব পাশ থেকে মাইনুল দিল।

—এই জায়গাটাও তো ভালা না। একটু আজুইরা। কয়েকবার লাশও পাওয়া গেছে এই টিলা এলাকায়। সোবহান সাহেবের লোকজনের ভেতরের একজন এটা যোগ করল।

—আজুইরা মানে বুঝলাম না? আহসান জিজ্ঞেস করল।

প্রশ্ন শুনে সোবহান সাহেব একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল।

—ওহ, এইটা আমাদের গাঁও গেরামের ভাষা স্যার। এই বারিক টিলায় অশরীরী জিনিস আছে। এটা এই এলাকার সবাই জানে।

—এর জন্য তো লাঊরের গড় বিজিবি ফাঁড়ি থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়। পাশ থেকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলল।

এরই মধ্যে সোবহান সাহেবের ফোন একের পর এক বেজেই যাচ্ছিল। একটা ফোন পেয়ে চেয়ারম্যান সাহেব একটু আড়ালে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলল। তারপর ফিরে এসে সঙ্গের সবাইকে মোটরসাইকেল তৈরি করতে বলে আহসানের কাছ থেকে বিদায় নিতে এল।

—স্যার, আজকে আমার উঠতে হয়। বাচ্চা ছেলেটির ব্যাপারে কী করা যায়, তা একটু ভেবে দেখবেন।

চেয়ারম্যান সাহেব তার মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে চলে গেল।

৩.

বারিক টিলা, জাদুকাঁটা নদী আর লাঊরের গড়ের আরেফিন শাহের মাজার ঘুরে ডাকবাংলোতে ফিরতে প্রায় রাত হয়ে গেছে। রাতের খাবার শেষ করে মাইনুল বিদায় নিল। সে সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে যাচ্ছে। কাল ডিসি অফিসে একটা জরুরি মিটিং। যাওয়ার আগে আহসানের জন্য এক ফ্লাস্ক-ভর্তি চা দিয়ে গেল। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই আহসানের বারবার চা খাওয়ার অভ্যাস, সে এটা খুব ভালো করেই জানে।

আহসান সারা দিনের ঘটনা নিয়ে একটা নোট করল। চেয়ারম্যান সোবহান সাহেব এবং এনজিও সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নিয়ে যা জানল, সব একে একে লিখে নিল। চেয়ারম্যান সাহেবের স্কুলের বিপক্ষে যাওয়ার যুক্তিগুলো ভাবল অনেকক্ষণ। কিছুই কূলকিনারা খুঁজে পেল না। বাধ্য হয়ে এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসল। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। হাওরের ঢেউয়ের সঙ্গে জোছনার আলো মিশে কেমন যেন অশরীরী লাগছে। কালো রঙের পানিতে চাঁদের আলোর ঝিলিক। এক অদ্ভুত আলো-আঁধার এর খেলা। এই প্রথম মনে হচ্ছে, হাওরের জলে অপার্থিব কিছু একটা মিশে আছে।

সারা দিনের ব্যস্ততায় শরীর একটু দুর্বল ছিল। তাই বিছানায় যাওয়ামাত্রই রাজ্যর ঘুম চলে এল। গত রাতের মতো আবার একই স্বপ্ন দেখল। মিলিকে নিয়ে হাওরের পানিতে নৌকা নিয়ে ঘুরতে গেছে। হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ঢেকে চারপাশ অন্ধকার করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড়। ঢেউয়ের দুলুনিতে নৌকা থেকে ছিটকে পানিতে পড়ে গেল আহসান। অনেক চেষ্টা করল সাঁতরে নৌকায় উঠে আসার। কিন্তু পারছে না। কেউ যেন দুহাত পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলেছে। দেখতে পেল, একটা ছায়া মূর্তির দিকে রাগতভাবে তাকিয়ে আছে মিলি। চোখেমুখে যেন রাগের আগুন বেরোচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল আহসান। এই প্রথম খুব অসহায় লাগছে তার। ডুবে যেতে যেতে দেখতে পেল, ছায়ামূর্তিটিকে বিদায় করে মিলি ছুটে আসছে তার দিকে। খুব দ্রুত এসে ধরে ফেলল আহসানকে। তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘আমি আছি তোমার কাছে।’

আহসানের ঘুম ভেঙে গেল। সারা শরীর ঘেমে ভিজে গেছে। জানালা দিয়ে আকাশপানে তাকাল। নিস্তব্ধ হাওরে চাঁদের আলোর তেজ আরও বেড়েছে। আর এদিকে এখনো যেন কানের ভেতর স্পষ্টভাবে বেজেই চলেছে মিলির ফিসফিসিয়ে বলা কথা। চলবে....

*লেখক: পিএইচডি স্টুডেন্ট ইন মলিকুলার মেডিসিন, ন্যাশনাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, তাইওয়ান।

আরও পড়ুন
এই বাদল দিনে