বিশ্বের কূটনীতিকদের মিলনস্থলে বাংলাদেশের আম্রপালি

আম্রপালি সুইস নাগরিকের হাতে। ছবি: বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
আম্রপালি সুইস নাগরিকের হাতে। ছবি: বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জেনেভা, সুইজারল্যান্ড

বাংলাদেশের আম আজ শোভা পাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বাজারে। যে আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’, যে মধুর অনুভূতি সৃষ্টি করত শৈশবে বাংলার প্রত্যেক শিশুর মনে। সেই মধুর স্মৃতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্তরে গেঁথে রয়েছে এখনো, যা অনুধাবন করা যায় আজ দেশের আম হাতে পেয়ে তাদের অভিব্যক্তিতে। ২০ বছর যাবত সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী একজন প্রবাসী জেনেভার দোকানে ‘Bangladeshi Mangoes’ লেখা মোড়ক দেখে আনন্দিত। কেনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যে আমের স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম এ দেশে এসে, বাংলাদেশ মিশন তার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

কিন্তু বিষয়টি তেমন সহজ ছিল না। জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বছরখানেক আগে এ নিয়ে কাজ শুরু করে। নিবিড় পর্যালোচনা করা হয় সুইস বাজারে বিদ্যমান কৃষিপণ্য, তথা ফলমূল আমদানির গতিপ্রকৃতি। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দেশের মানুষ ফলমূল ও সবজির প্রায় অর্ধেকের মতো পণ্য আমদানি করে। অধিকাংশই আমদানি করা হয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে। বাংলাদেশের আম রপ্তানির বিষয়টি মাথায় রেখে সুইস বাজারে খুচরা বিপণনকারীদের কাছে পণ্য সরবারহ করা হয়। আমসহ অন্যান্য ফলমূল ও সবজি আমদানি করতে আগ্রহী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের আগ্রহী রপ্তানিকারকদের যোগাযোগ স্থাপনে মিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে সুইস বাজারব্যবস্থা–সংক্রান্ত তথ্য, কৃষিপণ্য; তথা আম আমদানিতে আমদানিকারকদের প্রতিপালনীয় বিধিবিধান, পণ্যের গুণাগুণ, প্যাকেজিং, লেবেলিং ইত্যাদি তথ্য আগ্রহী রপ্তানিকারকদের সরবরাহ করার পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাস অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে।

সাধারণত মুক্তবাজার অর্থনীতির বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থায় সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে ব্যবসায়িক গোপনীয়তার জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষত তাদের কর্ণধারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ দুরূহ হলেও প্রাথমিকভাবে দুজন সুইস আমদানিকারকের সঙ্গে মিশন সরাসরি যোগাযোগ করে। উভয়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে বাংলাদেশি আমের গুণাগুণ ও সুইস বাজারে তার সম্ভাব্য চাহিদাসংক্রান্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এদের মধ্যে একজন আমদানিকারক আগ্রহ প্রকাশ করেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৪ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে পৌঁছায় বাংলাদেশের আম ‘আম্রপালি’। বিশ্বের প্রায় সব দেশের কূটনীতিকদের মিলনস্থল জেনেভায় আম্রপালি এখন কূটনীতিকসহ সুইসবাসীকে পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা বার্তা।

আম রপ্তানির এই সার্বিক প্রক্রিয়ায় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন জেনেভার বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান। তিনি জানান, কোভিড-১৯–এর ক্রান্তিকালে সুইজারল্যান্ডের মতো বাজারে বাংলাদেশের আম আমদানির এই শুভ সূচনা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। গতানুগতিক পণ্যের বাইরে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যতালিকায় আম্রপালি শুধু এক বৈচিত্র্যের সূচনা নয়, এটি বাংলাদেশি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায়ও অবদান রাখবে। তিনি পণ্যমান ও গুণাগুণ বজায় রেখে স্থাপিত ব্যবসায়িক সম্পর্কটি পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি