নানা রঙের পাতা

গ্রীষ্মকালে পাতা সবুজ রং ধারণ করে
গ্রীষ্মকালে পাতা সবুজ রং ধারণ করে

বিচিত্র এই পৃথিবী, বিচিত্র তার রং। পৃথিবীর মাঝে কত যে রহস্য রয়েছে, তা গুনে শেষ করা না গেলেও পৃথিবীর রং যে বদলায়, তা আমরা অবলোকন করি নিত্য।

শরৎ শুরু হওয়ার পর পাতা হয়ে যায় এ রকম লাল বর্ণ
শরৎ শুরু হওয়ার পর পাতা হয়ে যায় এ রকম লাল বর্ণ

পৃথিবী নানা রং ধারণ করে নানা মাসে। বাংলাদেশের ছয় ঋতু নিয়ে আসে ছয় ধরনের মাত্রা। কখনো নিয়ে আসে মঙ্গল, কখনো বা অমঙ্গলের হাতছানি। কথা হলো, পৃথিবীর সব দেশেই কী সব ঋতুর রং এক? মিল কিছুটা থাকলেও কখনো কখনো তার ভিন্নতা দেখা যায়।
এই যেমন আমেরিকায় রয়েছে চারটি ঋতু। এই চার ঋতু নিয়ে আসে চার ধরনের রং এবং মাত্রা। গ্রীষ্ম (সামার), বসন্ত (স্প্রিং), শরৎ (ফল) ও শীত (উইন্টার)। এখন এখানে চলছে শরৎকাল। এ সময়টায় প্রকৃতি ধারণ করে নানা রং-ঢং। এই তো কিছুদিন আগেও গাছে গাছে ছিল সবুজ পাতার সমারোহ। যেই না শুরু হয়েছে শরৎকাল, আর যায় কোথায়? প্রকৃতি তখন গুনে গুনে নানা রং ধারণ করে। শরৎকাল মূলত শুরু হয় সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ থেকে। ঠিক এই সময় গাছের পাতায় দেখা দেয় লাল বর্ণ, একই পাতা এর কিছুদিন পরে হয়ে যায় সোনালি, তারপর হলুদ। এই সময় উত্তুরি হাওয়ার সঙ্গে নেমে আসে শীত এবং পাতাকুল এক এক করে ঝরে পড়ে মাটিতে। এই পাতা পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সব গাছ পাতাশূন্য হয়ে পড়ে। চারদিকে পাতার স্তূপ। যাঁদের বাড়ি আছে, তাঁদের বাড়ির আঙিনায় অবশ্যই গাছ আছে। তাঁদের প্রায় প্রতিদিন বাড়ির আঙিনা ও মানুষের চলাচলের রাস্তা পরিষ্কার করে এক জায়গায় স্তূপাকারে রাখতে হয়। একটা সময় কাউন্টির কর্মীরা স্তূপ করে রাখা পাতা নিয়ে যায়।
শরৎকালের পরে শীতকাল আসে ডিসেম্বরের ২১ তারিখে। তখন শীতের কী প্রচণ্ড দাপাদাপি। সঙ্গে দেখা দেয় তুষার। শুধু কী তুষার? তুষারের পাশাপাশি ঝড়। আমেরিকাতে এ সময় অনেক বড় বড় তুষার-ঝড় মানুষের জীবনযাত্রা লন্ডভন্ড করে দেয়। রাস্তাঘাট তুষারে ঢেকে যায়। নুয়ে পড়ে বড় বড় গাছ। আর বিদ্যুৎ সমস্যা তো হরহামেশা। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ আসতে সাত থেকে দশ দিন চলে যায়। তখন মনে হয় বাংলাদেশ অনেক ভালো। আমেরিকায় এ রকম দুর্যোগের ভুক্তভোগী আমি নিজেও কয়েকবার হয়েছি! বাড়ি-গাড়িতে হিটিং ছাড়া চলা দায়।
এপ্রিলের ২১/২২ তারিখে আসে বসন্ত। গাছে গাছে দেখা দেয় কচি পাতা। শীতটাও সামান্য কমে আসে। তার পরও তুষার মাঝে মাঝে হানা দেয়। মরা মাঠে দেখা দেয় সবুজের উঁকিঝুঁকি। বসন্তের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে চেরি ফুলের উৎসব চলে। ১৫ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে সব উৎসব শেষ।

শীতের আগে পাতা প্রথমে হলুদ, পরে সোনালি রং ধারণ করে
শীতের আগে পাতা প্রথমে হলুদ, পরে সোনালি রং ধারণ করে

আমেরিকার মানুষের কামনা-বাসনার সময় হলো সামার বা গ্রীষ্মে। জুন মাসের ২১ থেকে গ্রীষ্ম শুরু। এ সময় গরম পড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শুরুতে এতই গরম থাকে তখন হিট স্ট্রোকে অনেকে মারাও যায়। এ সময় চারদিকে সবুজ আর সবুজ। কিছুদিন আগেও যে গাছগুলোকে মরা মনে হতো, তখন তা জীবন্ত সবুজ পল্লবে ছাওয়া। এই সামারকে ঘিরে আমেরিকানদের থাকে কত আয়োজন। দল বেঁধে পিকনিক। সমুদ্র স্নান, সুইমিং, বোটিং, ফিশিং, ক্যাম্প—আরও কত কী। বন্ধ থাকায় ফাঁকা হয়ে যায় স্কুল-কলেজের খোলা প্রান্তর। অবশ্য কিছু কিছু স্কুলে এক মাসের জন্য সামার ক্লাসের আয়োজন করে থাকে।
এভাবেই প্রকৃতি তার নিয়মে রং বদলায়। এর সঙ্গে বদলায় মানুষের চাহিদা ও মনের রং।
সুবীর কাস্মীর পেরেরা
মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র