আত্মরক্ষার এক শৈল্পিক খেলা কাপোয়েরা

কাপোয়েরা খেলার দৃশ্য
কাপোয়েরা খেলার দৃশ্য

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ হার্ড টার্গেট, স্ট্রিট ফাইটার, কিক বক্স-ইউনিভার্সেল সোলজার ও দ্য এক্সপ্যানডেবলস ২ ছায়াছবিতে বেলজিয়ান অভিনেতা ভ্যান ড্যামের মারামারি যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন। তেমনিভাবে মজা পেয়েছেন ব্লেড ১, ২, ৩ ছবিতে মার্কিন অভিনেতা স্নাইপের মারামারির কলাকৌশলে। ব্যবসা সফল এসব চলচ্চিত্রের মূলে রয়েছে এই দুই অভিনেতার ব্রাজিলিয়ান ফাইটিং স্টাইল। এই স্টাইলটির নাম কাপোয়েরা। কাপোয়েরা হলো আত্মরক্ষার এক শৈল্পিক সংস্কৃতি।

ফুটবলের পরে যে দুটি খেলা ব্রাজিলে সমধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার একটির নাম ব্রাজিলিয়ান জু-জুৎসু আর অন্যটি হলো কাপোয়েরা। কাপোয়েরা শব্দটি ব্রাজিলের আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের টুপি-গুয়ারানির নামক ভাষা থেকে এসেছে। ব্রাজিলের ইতিহাস আট হাজার বছরের পুরোনো হলেও পর্তুগিজ কূটনীতিক পেড্রো আলভারেস কাবাল ১৫০০ সালে ব্রাজিলের বাহিয়া স্টেটের পোর্তো সিগুরো শহরে পৌঁছান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিল আবিষ্কার করেন। এ সময় থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন শ বাইশ বছর ব্রাজিল পর্তুগালের কলোনি ছিল। ছোট দেশ হওয়ায় ব্রাজিলে কাজ করানোর জন্য পর্তুগিজরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ক্রীতদাস আমদানি করত। পরে অবশ্য ১৮৮৮ সালে ব্রাজিলের শেষ সম্রাট দ্বিতীয় পেড্রোর কন্যা প্রিন্সেস ইসাবেলের উদ্যোগে সোনালি আইনের মাধ্যমে ১৮৯০ সালে এ দেশ থেকে দাসপ্রথা চিরতরে দূর হয়। যাই হোক, পর্তুগিজরা অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও কঙ্গো থেকে এ দেশে যে সব দাস এনেছিল তাদেরই হাত ধরে ব্রাজিলে কাপোয়েরার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল।

কাপোয়েরা খেলার দৃশ্য
কাপোয়েরা খেলার দৃশ্য

১৮৯০ সালে আইন করে কাপোয়েরা নামক এই ফাইটিং স্টাইল ব্রাজিলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ তখন কাপোয়েরাতে সিদ্ধহস্ত অনেকে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো কাজে এ কৌশল ব্যবহার করত। ১৯১৮ সালে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও পুনরায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর প্রশিক্ষণ শুরু হয় আরও পরে। কাপোয়েরার অন্যতম প্রধান দুটি স্টাইলের একটি হলো অ্যাঙ্গোলান কাপোয়েরা। এই স্টাইলের জনক ছিলেন মেসত্রে পাসতিইয়া। আঞ্চলিক কাপোয়েরা নামে অন্য যে স্টাইলটি প্রচলিত ছিল তার জনক ছিলেন মিত্রে বিম্বা। এই মিস্ট্রে বিমবা ১৯৩৭ সালে ব্রাজিলের প্রথম স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট গুটুলিও ভার্গাসকে এই কৌশল দেখিয়ে মুগ্ধ করেন এবং ১৯৩৭ সালে প্রথম কাপোয়েরা রিজিওনাল শেখানোর একাডেমি খোলার অনুমতি পান। মেসত্রে পাসতিইয়া অবশ্য তার একাডেমি খোলেন ১৯৪২ সালে।
বাজনার তালে তালে নাচের ভঙ্গিতে আত্মরক্ষার চমৎকার এক কৌশল এই কাপোয়েরা। এই স্টাইলের প্রবাদ পুরুষ মিসত্রে আর্কোদেওনের মতে কাপোয়েরা হলো, A dance like a fight, a fight like a dance, a song...a way of life। এটি মূলত অ্যাফ্রো-ব্রাজিলিয়ান মার্শাল আর্ট, যা বর্তমানে ব্রাজিলের সংস্কৃতির একটি অন্যতম আকর্ষণ ও একটি জাতীয় খেলা। ইতিহাস বলে যে, এটিও ব্রাজিলের অন্যান্য অনেক সংস্কৃতির মতো ধার করা একটি সংস্কৃতি যা কালের বিবর্তনে ব্রাজিলের মূল সংস্কৃতির ধারায় মিশে গেছে।