রাজার সম্মান

মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা
মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা

আমি নিয়মিত জুমার নামাজ পড়ি কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ—মসজিদ নেগেরাতে। খোলামেলা বিশাল আয়তনের এ মসজিদে নামাজ পড়ে ভালো লাগে। মালয়েশিয়ার অনেক ভিভিআইপি ও ভিআইপি দেখি এখানে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নিয়মিত এখানেই জুমার নামাজ পড়েন—যদি দূরে অন্য কোনো প্রোগ্রাম না থাকে।

একজন ভিআইপি
একজন ভিআইপি

গত ৩১ জুলাই ছিল শুক্রবার। বরাবরের মতো আমি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদ নেগেরাতে গেলাম। মাহাথির মোহাম্মদও এসেছেন জুমার নামাজে। কিন্তু দেখলাম মসজিদে অনেক পুলিশ ও অন্যান্য বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা নামাজ পড়তে এসেছেন। দেখে বুঝলাম তারা বেশির ভাগ উচ্চ পদের। অনুমান করলাম ভিভিআইপি কেউ এসেছেন মসজিদে।
আমার অনুমানই ঠিক। নামাজ শেষে দেখলাম ব্যাপার তাই-ই। মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছেন মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় ভিভিআইপি, দেশের সর্বক্ষমতা যার হাতে, যিনি সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত—মালয়েশিয়ার রাজা। রাজা তুয়াংকু আবদুল হালিম। রাজা ছাড়াও এসেছেন সরকারের নবনিযুক্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী জাহিদ হামিদিসহ নবনিযুক্ত অন্যান্য মন্ত্রীরা। মানে অনেক ভিআইপি মসজিদে এসেছেন।
নামাজ শেষে নামাজের স্থান থেকে গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত পুলিশ, রাজার নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চপদস্থ সব কর্মকর্তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সালাম ও কুর্নিশ করছেন রাজাকে। বয়োবৃদ্ধ হলেও রাজা লাল গালিচায় হাঁটছেন একজন সবল মানুষের মতো। সবাই হাত ধরে ধরে চুমু দিচ্ছেন আর সম্মান জানাচ্ছেন। এত এত সম্মান জানাচ্ছেন, যা না দেখলে অকল্পনীয়। যা দেখলাম তাতে রাজার মর্যাদার কাছে প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তেমন বড় কেউ নন। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদ সাধারণ পথে নিত্যদিনের মতো দেশি-বিদেশি ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলার আবদার মিটিয়ে মৃদু পায়ে হেঁটে গেলেন নিচে, যেখান থেকে গাড়িতে উঠবেন। প্রথমে রাজা, এরপর নতুন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীর গাড়ি চলে যাওয়ার পরে বের হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গাড়িটি।
আমি মালয়েশিয়ার আগের দুজন রাজাকেও দেখেছিলাম। তবে রাজার এত সম্মান আগে উপলব্ধি করতে পারিনি। যা সেদিন দেখলাম ও বুঝলাম। আর ক্ষমতায় থাকা আর অবসরে যাওয়ার মধ্যে ক্ষমতার যে বিরাট পার্থক্য ও পুলিশ প্রটোকলের প্রকারভেদ, বুঝলাম আরেকবার।

লেখক ও অন্যান্য
লেখক ও অন্যান্য

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে ১৪ প্রদেশে ১৪ জন সুলতান আছেন। বলতে গেলে প্রদেশগুলোর মালিকই হচ্ছেন সুলতানরা। তারা রাজ পরিবার। শুধু প্রদেশে নয়, সারা দেশেই তারা সর্বোচ্চ সম্মানিত। ১৪ জন সুলতানের মধ্য থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর একজন দেশের রাজা নির্বাচিত হন। সুলতানরাই ঠিক করেন কে রাজা হবেন। জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এই প্রক্রিয়ায়। শুধু রাজা নয় প্রদেশগুলোর সুলতানের ক্ষমতা, সম্মান ও প্রটোকল সবকিছু দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগে। সুলতান পরিবারের সদস্যরাও অনেক সম্মানের অধিকারী। সুলতানরা উত্তরাধিকার সূত্রে আসেন ক্ষমতায়।