আজ কানাডায় ভোট

নির্বাচনী প্রচারণায় কনজারভেটিভ পার্টি প্রধান
নির্বাচনী প্রচারণায় কনজারভেটিভ পার্টি প্রধান

আজ কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টের (জাতীয় সংসদ) নির্বাচন। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে এই নির্বাচনী প্রচারণা। কানাডার ইতিহাসে এটা দীর্ঘতম নির্বাচনী প্রচারণা। ফলে নির্বাচনের আগে যে জনমত জরিপ করা হয় তা প্রায়ই একবার এদিক তো আরেকবার উল্টোদিকে ধাবিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে অন্যান্যবারের মতো জনগণের হেলথ ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা ইস্যু কিংবা চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ইস্যুগুলোকে ছাপিয়ে এবার যে ইস্যুগুলোকে সামনে আনা হয়েছে, তা হলো পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাস করা দুটো বিতর্কিত বিল যাকে বলা হয় বিল সি ৫১ ও সি ২৪। যেখানে ইমিগ্রান্টদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে বলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ ছাড়া যে নন ইস্যুকে ইস্যু বানানো হয়েছে তা হলো মুসলমান মেয়েদের মুখমণ্ডল আবৃত করা নিকাব নিয়ে।

রাজনীতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না, আবার রাজনীতির কিছু নষ্ট দিক রয়েছে, যেটা পৃথিবীর সকল দেশেই কম বেশি বিদ্যমান। আমেরিকার বুশ নেতৃত্বের যে রাজনীতি, তারা যেমন জনপ্রিয়তা হারিয়ে, শুধুমাত্র নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে জঙ্গি ইস্যু সামনে নিয়ে আসে, কানাডাতেও তেমনি করা হয়েছে। অন্য জাতীয় ইস্যুগুলো বাদ দিয়ে কে নিকাব পড়বে কী পড়বে না সেই সব ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। যদিও এখানকার আদালত সেগুলোকে বাতিল করে দিয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় লিবারেল পার্টি প্রধান
নির্বাচনী প্রচারণায় লিবারেল পার্টি প্রধান

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর যেসব জনমত যাচাই করা হয় তাতে প্রথমবারের মতো নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এনডিপি এগিয়ে ছিল। এখন লিবারেল পার্টি এগিয়ে। মাঝে কনজারভেটিভ এগিয়ে ছিল।
এখানে গত ছয় মাস আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু হলেও রাজপথে কোনো মিছিল দেখা যায়নি। প্রতিপক্ষের কোনো সমাবেশ ভন্ডুল করে দেওয়া হয়নি। কোনো দেয়ালে চিকা মারা হয়নি। আমার বাসার সামনে পোস্টার লাগাতে অনুমতি চেয়েছিল এখানকার সরকারি দল। আমি অনুমতি দিইনি। কানাডার নির্বাচনের প্রচার চলছে টেলিফোন ও রেডিও-টিভিতে, আর দলীয় প্রধানের এক প্রদেশ থেকে আর এক প্রদেশে ঝটিকা ইনডোর সমাবেশের মাধ্যমে।
দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে এসেছে নির্বাচনের তারিখ। স্মরণকালের বৃহত্তম সংখ্যক মানুষ নিজেদের ভোট আগেই দিয়ে ফেলেছেন অ্যাডভান্স পোলিংয়ের (আগাম ভোট) মাধ্যমে। গত লং উইকেন্ডের তিন দিন দুপুর বারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা ছিল অ্যাডভান্স নির্বাচনী বুথগুলো। আমি নিজেও পরিবার নিয়ে ভোট দিয়ে ফেলেছি। ভোট দিতে যাওয়ার পথে কোনো জোর-জবরদস্তির মুখে পড়তে হয়নি। এমনকি কোনো প্রচারণার মধ্যেও না। ফেসবুক, টিভি, টুইটার, রেডিও, পত্র-পত্রিকার বাইরের মানুষেরা টেরও পাচ্ছেন না যে এ দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় এনডিপি পার্টি প্রধান
নির্বাচনী প্রচারণায় এনডিপি পার্টি প্রধান

তারপরও আজকের এই নির্বাচনই সিদ্ধান্ত দেবে আগামী চার বছর কোন দল কানাডা পরিচালনা করবে। কার নেতৃত্বে দেশ চলবে। বিতর্কিত বিলগুলো বাতিল হবে কী হবে না, মানুষজন যার যা খুশিমতো পোশাক পরিধান করতে পারবে কী পারবে না, এই দেশে নতুন নতুন ইমিগ্রান্ট আসবে কী আসবে না। সবকিছুরই সিদ্ধান্ত দেবেন এই দেশের জনগণ। আর তা একমাত্র আগামীকালের ভোটের মাধ্যমে। যে ভোটে কারও ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এমনকি সরকারি দল যদি হেরেও যায়, গভীর রাতেই দেখা যাবে তারা হার মেনে নিয়েছে, বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এটাই গণতন্ত্র। এই কারণেই কানাডা পৃথিবীর মহান দেশ। এই কারণেই পৃথিবীর অনেকেই নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ করে কানাডা চলে আসতে চায়। এই কানাডার ওপর যদি কোনো দিন কোনো স্বৈরাচারের ভূত আছর করে, সেদিন আর কেউ এই দেশে আসতে চাইবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সে স্বৈরাচার যে নামেরই হোক, যে পোশাক পরিধান করেই আসুক না কেন!