চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নানা দৃশ্য
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নানা দৃশ্য

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পূর্ব লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী। এ উপলক্ষে ২৪ এপ্রিল রোববার পূর্ব লন্ডনের মালবারী স্কুলের হলরুম যেন হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস। স্বাধীনতা পরবর্তী ব্যাচ থেকে শুরু করে হালের নবীন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এ অনুষ্ঠান। গানের তালে তালে নেচে উঠেছেন সকলে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ধরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি ছালেহ আহমেদ। এরপর পবিত্র কোরআন, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের পর পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত।

কামরুন নাহার ও সরওয়ার হোসেনের যৌথ পরিচালনার শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুষঙ্গ। শিক্ষার্থীরা ভেসেছেন আবেগে, মজেছেন নস্টালজিয়ায়। স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মাবুদ, ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, রাজিব চক্রবর্তী, শাহিন আকতার, দেবাশীষ দাস, ব্যারিস্টার আবুল মনসুর, মুহিদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী, মাসুক আহমেদ, এনায়েত সরোয়ার, আবদুল আহাদ, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, দিলুয়ার আলী, আব্দুল হান্নান, রুহুল চৌধুরী, জেবুন্নেসা মিতা, নাজরাতুন নাজ, সুলতানা ইয়াসমিন, মেরিনা খানম, সাইফুদ্দিন চৌধুরী, আবু নসর তালুকদার ও সৈয়দ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এতে উঠে আসে অজানা প্রেমের কাহিনি, শাটল ট্রেনের স্মৃতি, ঝুপড়িতে বসে চা-শিঙারা খাওয়া, মেয়েদের হলের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, প্রেমিক জুটি রসায়নসহ অনেক রোমাঞ্চকর স্মৃতিকথা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রবাসে সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের করা এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্যের বন্ধন বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি প্রবাসী শিক্ষার্থীদের দেশের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নানা দৃশ্য
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নানা দৃশ্য

অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবদুল হান্নান, রুশনারা আলী এমপি, অধ্যাপক নুরন নবীসহ আরও অনেকে। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বারবার তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি নিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে গানে মেতে ওঠেন। মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, বিদেশে কর্মযজ্ঞে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এতজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। রুশনারা আলী এমপি বলেন, মালবারি স্কুলে আমি পড়ালেখা করেছি, এখানে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বড় আয়োজন আমাকে অভিভূত করেছে। ব্রিটেনের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লন্ডন আইকন কলেজের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. নুরুন নবী বলেন, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এ ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এ কে এম ইয়াহিয়া, ড. সাইফুল ইসলাম, ড. ফসিউল আলম, কিরণ বণিক শংকর, কায়সার রশিদ, প্রিয়রঞ্জন মহাজন, শায়েক আহমেদ সওদাগর, মোশতাক হোসেন চৌধুরী, প্রবক রঞ্জন দাস, বদরে আলম, আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহিদুল ইসলাম ও ফারজানা আফরোজার উপস্থাপনায় এতে সংগীত পরিবেশন করেন এরশাদ আনোয়ার, লাবণি বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম, শর্মিলা নন্দী, তোফায়েল আহমেদ, শিরিন তাজ বেগম, সাবিনা লুনা, উজ্জয়িনী রায়, মধুচ্ছন্দা দেওয়ান আহমেদ, নাসরিন আকতার ও সাদিয়া শরমিন প্রমুখ। কবিতা আবৃতি করেন ব্যারিস্টার ইউসুফ রেজা, শহিদুল ইসলাম, শাহ মুয়িজুর রহমান, দেবাশীষ দাস, আবদুল ওয়ালি, মতিউর রহমান ও রহিম উদ্দিন প্রমুখ। ফরেস্ট্রির শিক্ষার্থী ফারজানা আকতারের দুই মেয়ে মনোমুগ্ধকর নাচে মাতিয়ে তোলেন দর্শকদের।
এ ছাড়া র‍্যাফেল ড্রতে ছিল আইফোন, লন্ডন-সিলেট-লন্ডন বিমানের টিকিট পুরস্কার। ভবিষ্যতে আরও জমজমাট অনুষ্ঠান আয়োজনের ও দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের স্মৃতি নিয়ে সকলেই পথ ধরেন বাড়ির।