অনুপ্রেরণা পাই মায়ের বকাঝকা থেকে
সামিয়া শারমিন
এসএসসি পরীক্ষার্থী, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা (স্কুলের তারকা, জানুয়ারি- ২০১৪)
মায়ের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মেয়ে একজন বড় আঁকিয়ে হবে। পিকাসো, ভ্যান গঘ, ভিঞ্চি কিংবা জয়নুল আবেদিনের মতো তার আঁকা ছবিও দেশে-বিদেশে ঠাঁই করে নিবে স্থান। তাই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিলেন শিল্পকলা একাডেমীতে। প্রতিদিন মায়ের হাত ধরে মেয়েটি আঁকাআঁকি শিখতে গেলেও তাকে খুজে পাওয়া যেত নাচের ক্লাসে। চুপিসারে গিয়ে মেয়েটি নাচের ক্লাসে বসে থাকত আর গভীর মনোযোগে নাচ দেখত। মা বুঝলেন, মেয়ের আঁকাআঁকিতে মন নেই। তাই তাকে তিনি এবার ভর্তি করালেন নাচের ক্লাসে। তখন বয়স মাত্র চার। সেই বয়স থেকেই শুরু হয়েছিল সামিয়া শারমিনের (বিভা) পথচলা। নাচের পাশাপাশি সে সমানভাবে পারদর্শী অভিনয়, আবৃত্তি, উপস্থাপনা আর খেলাধুলায়। প্রতিবছর স্কুলে নাচ, অভিনয়, আবৃত্তিতে প্রথম পুরস্কারটা তার ঝুলিতেই ওঠে। স্কুলে এক নামে পরিচিত বিভা ২০১০ সালে মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় স্থান করে নিয়েছিল সেরা এগারোতে। সেই খুশিতে স্কুল থেকে তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল একটা মস্ত বড় কম্পিউটার। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আয়োজিত ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার-২০১৩’তেও প্রথম হয়েছিল সে। প্রথম হয়েছিল আন্তস্কুল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপেও। তা ছাড়া, সে নিয়মিত অনুষ্ঠান করে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে। এত সব করেও কিন্তু সে তার পড়াশোনা রেখেছে ঠিকঠাক। তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বিভা প্রতিবছর ক্লাসে যেমন ভালো রেজাল্ট করে, তেমনি এসএসসি পরীক্ষায়ও করবে বলে সবার ধারণা। বড় হয়ে সে অনেক কিছুই হতে চায়, কিন্তু সবার আগে হতে চায় একজন ভালো মানুষ।
প্রশ্ন:
১. সকালে উঠিয়া বিভা মনে মনে বলে..?
উত্তর: সারা দিনে যেন একটা ভালো কাজ করি। আর দুষ্টামি একটু কম করি।
২. বিভাকে সবাই স্কুলের তারকা হিসেবেই জানে, সেই স্কুলের তারকা কি কখনো স্কুল পালিয়েছে?
উত্তর: চেষ্টা যে করিনি, তা নয়... কিন্তু সফল হইনি!
৩. আরেকবার জন্মালে কী হতে চাইবে?
উত্তর: আরও একবার কেন, হাজারবার জন্মালেও বিভাই হতে চাইব।
৪. তোমার এই পধচলার পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে কে?
উত্তর: মায়ের বকাঝকা আর নিজের শোককে শক্তিতে পরিণত করার সংকল্প।
৫. যে লেখকের লেখা তুমি বারবার পড়?
উত্তর: মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদ
৬. জীবনের আদর্শ কে?
উত্তর: আমার মা, যিনি আমাকে সব সময়ই একা পথ চলতে শিখিয়েছেন।
৭. তুমি জানলে, ঠিক আর দুই মিনিট পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন কী করবে?
উত্তর: অপেক্ষা করব, কীভাবে হবে তা দেখার জন্য।
৮. স্কুলের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা দুটি বিষয়ের নাম বলো।
উত্তর: খুব ভালো লাগে টিচারদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, ভালোবাসা, বকাঝকা আর বন্ধুদের।
খারাপ লাগে অলিম্পিয়াড, সায়েন্স ফেয়ারের মতন প্রতিযোগিতাগুলো না হওয়া।
৯. ‘কেউ জানল না’ বিভার সিক্রেট কী?
উত্তর: আমি সব্বাইকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কেউই তা জানে না।
১০. ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা..’ তুমি তো নাচতে জানো, তার পরও কোন দোষটা না থাকলে ভালো হতো?
উত্তর: সব্বাইকে খুব বিশ্বাস করাটা। কিন্তু আসলেই কি এটা আমার দোষ?
১১. ইশ! এমন যদি হতো?
উত্তর: ইচ্ছে হলেই আমি হতাম, নীল আকাশের মতো...
১২. বিভা মানে আলো, তুমি তোমার জীবনের কোন দিকটাকে সবচেয়ে বেশি আলোকিত দেখতে চাও?
উত্তর: যে দিকটি দিয়ে নিজের পাশাপাশি আরও অনেক মানুষের জীবন আলোকিত করতে পারব।
১৩. দেশের জন্য কিছু করতে বলা হলে সবার আগে কোন কাজটি করবে?
উত্তর: সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে সরাতে চাইব আর প্রতিটি শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইব, যাতে কোনো শিশুকে পথশিশু হতে না হয়।