কী যেন নাম!

ধরো, কোনো একটা অনুষ্ঠান চলছে। হঠাৎই ‘আরে কী খবর, কেমন আছো’ বলে হাসিমুখে তোমার দিকে এগিয়ে এল কেউ। ‘তারপর, পড়ালেখা কেমন চলছে? তুমি তো দেখি আগের মতোই আছো। আগের বাসাতেই থাকো এখনো?...’ চলছে তাঁর আন্তরিক কথোপকথন। এদিকে তুমি মনে মনে ভাবছ, ‘কে যেন মানুষটা? দেখে এত চেনা চেনা লাগছে! কী যেন নাম তাঁর?!’

জেনে অবাক হবে, এমন বিড়ম্বনা রীতিমতো ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত’! সে প্রমাণ পাওয়া গেল ইন্টারনেট আর ভিনদেশি ম্যগাজিনগুলোতে। কীভাবে নাম মনে রাখা যায়, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। নাম মনে রাখার কিছু কিছু কৌশলও বাতলে দিয়েছেন তাঁরা। পদ্ধতিগুলো কিছুটা উদ্ভট মনে হলেও চাইলে প্রয়োগ করে দেখতে পারো। 

মিলের খোঁজ

কেউ নাম বললেই চট করে তাঁর নামের সঙ্গে একটা কিছু মিলিয়ে নিতে পারো, পরে যেন নামটা মনে পড়ে। যেমন ধরো, কারও নাম সাগর। সে তাঁর নামটা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তুমি মনে মনে একটা সমুদ্র কল্পনা করে ফেলো। কিংবা কারও নাম বকুল। তাঁর চেহারার পাশে মনে মনে একটা বকুল ফুলের ছবি এঁকে রাখো। আবার ধরো, কারও নাম রিয়াজ। তুমি চট করে চিত্রনায়ক রিয়াজকে একবার স্মরণ করে নাও। এটা হলো নাম মনে রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।

ছন্দ নয় মন্দ

মাঝেমধ্যে কিছু নাম কানে আসে, একটু অন্য রকম। ঠিক পরিচিত না। এ ধরনের নাম মনে রাখতে মনে মনে একটা ছন্দ বা ছড়া তৈরি করে রাখতে পারো। খুব যে দারুণ কিছু হতে হবে, তা নয়। মোটামুটি মনে রাখার মতো হলেই হলো। ধরো, কারও নাম তামনিয়া। মনে মনে তুমি ভেবে রাখলে, ‘তামনিয়া। একদিন তোমার বাসায় যাব ঝুড়ি ভরতি আম নিয়া!’ ব্যস, নামটা মনে রাখা বোধ হয় সহজ হবে।

চোখে চোখ

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের চোখ সহজে বদলায় না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চুল, চেহারার ধরন কিংবা কণ্ঠস্বর বদলে গেলেও চোখ একই রকম থাকে। তাই মানুষের চোখ খুব ভালোভাবে লক্ষ করো। হয়তো পরবর্তী সময় এতে তুমি সহজে মানুষটিকে চিনতে পারবে।

নাম ধরে ডাকি

সাধারণত কারও সঙ্গে প্রথম পরিচয় পর্বটা খুব ছোট্ট সময়ের জন্য হয়। এই অল্প সময়ের কথোপকথনেই তাঁর নামটা কয়েকবার উচ্চারণ করে নাও। ধরো, রুদ্র নামে কারও সঙ্গে তোমার পরিচয় হলো। ধরো কথার ফাঁকে ফাঁকেই বলছ, ‘রুদ্র, গতকাল বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন?...কিন্তু রুদ্র যা-ই বলেন, নাসির হোসেন ওই শটটা না খেললেও পারত।...আমার কি মনে হয় জানেন রুদ্র, রুবেল হোসেনকে দলে নেওয়া উচিত ছিল...’

হোমওয়ার্ক

হুম্, নাম মনে রাখার এই কঠিন বিদ্যা শিখতে হলেও তোমাকে হোমওয়ার্কও করতে হবে। টিভি দেখতে বসে অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, উপস্থাপক, খেলোয়াড়—এঁদের নাম মনে করতে চেষ্টা করো। চেনো, অথচ নাম মনে পড়ছে না, এমন হলে আশপাশের কারও কাছ থেকে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে নামটা জেনে নাও। এরপর চেহারার সঙ্গে নামটা খুব ভালো করে মনে রাখো।

বিশ্রাম

অধিকাংশ মানুষের মস্তিষ্ক দিনভর ব্যস্ত থাকে। ক্লান্তি মানুষের স্মৃতিগুলোকে ঝাপসা করে দেয়। তাই মস্তিষ্কের বিশ্রাম প্রয়োজন। পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম তোমার স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করবে।

মনোযোগ

কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় অবশ্যই তাঁর নামটা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কেউ তোমার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, আর তুমি মনে মনে আকাশ-পাতাল ভাবছ, তা হবে না।

সবার আগে যা প্রয়োজন, তা হলো নাম মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা। তুমি যদি ভাবো, উহ্‌, লোকের নাম মনে রাখতে আমার বয়েই গেছে! তাহলে কিন্তু ওপরের কোনো পদ্ধতিই কাজে লাগবে না!

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট ও উইকি হাউ