অ্যালকেমির জগতে

অ্যালকেমি, এক রহস্যময় বিদ্যা। কোনো একটা পদার্থকে ভেঙে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য এক পদার্থে রূপান্তর করাই হচ্ছে এই বিদ্যার মূল বৈশিষ্ট্য। জাদু নয়, এ এক ধরনের বিজ্ঞান। এ কাজে যারা দক্ষ এবং এ নিয়ে যারা গবেষণা করছে, তাদের ডাকা হয় অ্যালকেমিস্ট বলে। অ্যালকেমিস্টের সাহাযে্য শূন্য থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। এর প্রধান ও বেসিক ল হচ্ছে কোনো কিছু তৈরি করতে অবশ্যই এর সমপরিমাণ ও সমবৈশিষ্টে্যর পদার্থ বিসর্জন দিতে হবে। আর যারা এই নিয়মের অন্যথা করবে, তাদের বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে।

এডওয়ার্ড ও আলফানসো এলরিক। অ্যামেস্ট্রি দেশের মাতৃহারা দুই কিশোর অ্যালকেমিস্ট। তারা একদিন এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক অ্যালকেমি ব্যবহার করে তারা ফিরিয়ে আনতে চায় তাদের মৃত মাকে, যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ফলাফল হয় ভয়ানক। এড হারায় তার এক পা, আলফানসো হারায় তার পুরো শরীর। এড তার এক হাত বিসর্জন দিয়ে আলের আতÄাকে বেঁধে রাখে একটা লোহার বর্মে। এর কিছুদিন পরে রয় মাস্টাং নামের এক মিলিটারি অ্যালকেমিস্ট, বিভীষিকায় ডুবে থাকা এই দুই ভাইকে প্রস্তাব দেয় অ্যামেস্ট্রির সেনাবাহিনীতে অ্যালকেমিস্ট হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য। কারণ, এর মাধ্যমেই তারা খঁুজতে পারবে কিংবদন্তির ‘ফিলোসফার স্টোন’। কেবল এই পাথরেরই ক্ষমতা আছে তাদের আগের মতো স্বাভাবিক মানুষ বানিয়ে দেওয়ার। শুরু হয় স্টেট অ্যালকেমিস্ট হিসেবে দুই ভাইয়ের নতুন অভিযান। কিন্তু তারা কি জানে, সামান্য এই পাথর খঁুজতে গিয়ে কত বড় ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা? কী হচ্ছে এই দেশে? কেন বিভিন্ন জায়গায় নানা কারণে বাধছে ভয়াবহ সংঘর্ষ? কেন এক সিরিয়াল কিলার খঁুজে বের করে খুন করছে স্টেট অ্যালকেমিস্টদের? কেন এত দিন ধরে নিরুদ্দেশ এড আর আলের বা হোয়েনহেইম? আর প্রচণ্ড শক্তিশালী হোমুনকুলাসরাই (কৃত্রিম মানুষ) বা এল কোত্থেকে? তবে কি ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে সামনে?

মোটা দাগে এই হচ্ছে ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট: ব্রাদারহুদ আনিমের কাহিনি। ধারণা করা হয়, যদি বিশ্বের সেরা আনিমের নাম সিরিয়াল করে লেখা হয়, তাহলে ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট অবশ্যই সেরা পাঁচে জায়গা করে নেবে। এর প্রথম কারণ হচ্ছে এর অসাধারণ গল্প। পুরো গল্পের কোথাও একবারের জন্যও মনে হয়নি যে গল্প ঝুলে যাচ্ছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা এই অ্যানিমের মূল শক্তি। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। এটি কোনো ওয়ানম্যান শো নয়। দুই অ্যালকেমিস্ট ভাইয়ের পাশাপাশি গল্পের প্রতিটি চরিত্রেরই আছে নিখঁুত ডিটেইল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসাধারণ সব টুইস্ট, রুদ্ধশ্বাস সাসপেন্স আর দম আটকানো সব অ্যাকশন সিকোয়েন্স। এতে যেমন অসম্ভব মজার মজার মুহূর্ত আছে, তেমনি আছে কিছু শকিং ও ট্র্যাজিক মুহূর্তও। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, যারা এখনো অ্যানিমে দেখা শুরু করেননি এবং যাঁরা নিয়মিত অ্যানিমে, দেখেন, সবার কাছেই এই আনিমে ভালো লাগবে, সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।

 ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট: ব্রাদারহুড  প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। এর আগে  ২০০৩ সালে  ফুল মেটাল অ্যালকেমিস্ট  নামের আরেকটি সিরিজ প্রকাশিত হয়। কিন্তু হিরোমু আরাকাওয়ার যেই কমিকস (মাঙ্গা) অবলম্বনে এই সিরিজ বানানো হয়েছে, সেটি শুরুতে কমিকসের কাহিনি অনুসরণ করলেও পরে এ থেকে সরে আসে এবং কাহিনিকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে  কনকোয়ার অব সিমবালা  নামের একটা মুভির মাধ্যমে এই সিরিজের ইতি টানা হয়। অন্যদিকে ব্রাদারহুড সিরিজ হিরোমুর কমিকসকে সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করেছে। এই দুই সিরিজ নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকতে পারে যে আসলে কোনোটি আসল। দুটো সিরিজই আসল এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে অ্যানিমে ভক্তদের কাছে ব্রাদারহুড সিরিজই বেশি ভোট পেয়ে আসছে এর গল্পের বুনন ও ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের জন্য।