অধিনায়কের জন্মদিন

ছবি: ফেসবুক থেকে
ছবি: ফেসবুক থেকে

মাশরাফি বিন মুর্তজাকে মুঠোফোনে বার্তা দেওয়া হলো, এশিয়া কাপ বা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন তাঁকে করা হবে না। অধিনায়ক তখন দুবাইয়ের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। তাঁর ভাবনাজুড়ে এশিয়া কাপ। সিরিজ বা টুর্নামেন্ট চলা সময়ে সংবাদ সম্মেলনের বাইরে খেলোয়াড়দের সাধারণত কথা বলা নিষেধ। যখন নিশ্চয়তা দেওয়া হলো এশিয়া কাপ নিয়ে কোনো কথা নয়, মাশরাফি আগ্রহভরে জানতে চাইলেন, ‘বিষয়টা কী?’
বিষয়টা শুনে একটু অবাকই হলেন! চুপ থাকলেন খানিকক্ষণ। এশিয়া কাপের ডামাডোলে কোনো সাংবাদিক তাঁর জন্মদিন প্রসঙ্গে কথা বলবেন, মাশরাফি বোধ হয় ভাবতেই পারেননি। ৫ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। মাশরাফির জন্মদিন উপলক্ষে একটা লেখা প্রকাশ করতে চায় কিশোর আলো। বিষয়টি জানাতেই হাসলেন অধিনায়ক, ‘জন্মদিন তো পালন করি না ভাই! ঘটা করে, হইচই করে আমার কিছুই পালন করা হয় না। তবে এই দিনে ভক্তরা হয়তো বাসায় আসে। নানা জায়গা থেকে অনেক শুভেচ্ছা-টুভেচ্ছা পাই, এতটুকুই।’
৫ অক্টোবর, ১৯৮৩। শরতের সকালে মাত্রই পূর্ণ বিকাশে আলো ছড়াতে শুরু করেছে সুয্যি মামা। তখনই হামিদা ও গোলাম মুর্তজার ঘর আলো করে এলেন তিনি। বড় আদর করে ছেলেটার নাম রাখা হলো কৌশিক। নড়াইলের সেই কৌশিক পরে পরিচিত হলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা নামে; অমিত প্রতিভা, বুদ্ধি, অদম্য সাহস আর সাফল্য দিয়ে জিতে নিলেন অযুত-নিযুত হৃদয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে।

ছবি: ফেসবুক থেকে


মাশরাফির শৈশব অনেকটা নানাবাড়িকেন্দ্রিক। ছেলের জন্মের পর মা হামিদা মুর্তজা একটু অসুস্থ ছিলেন। মেয়ে ও মেয়ের ছেলেকে তাই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন নানি খালেদা রহমান। অবশ্য মাশরাফির বাবার বাসা আর নানার বাসার দূরত্ব পাঁচ মিনিটেরও নয়। শুরুতে সাময়িক ব্যবস্থা হলেও পরে নানার বাড়ি হয়ে গেল মাশরাফির আসল ঠিকানা।
যত ব্যস্তই থাকুন, একটু সময় মিললেই মাশরাফি ছুটে যান নড়াইলে। সেখানে পড়ে আছে তাঁর দুরন্ত শৈশব, সোনাঝরা সব দিন। ফুরসত মিললেই মাশরাফির চোখে চিত্রিত হয় চিত্রা নদীর স্রোত ভেঙে সোজা নদী পার হওয়ার দৃশ্য, ছেলেবেলায় যেটি ছিল তাঁর নিত্যকার কাজ। মাঝেমধ্যে নদীর এপার-ওপার করতেন কোনো বন্ধুকে কাঁধে নিয়ে, নদী যেন তাঁর পোষ মানা কেউ! একই রকম দখল বৃক্ষরাজির ওপর। আম-জাম-লিচু-নারকেল—সব গাছেই তাঁর শাখামৃগের মতো বিচরণ। গভীর রাতে ফল পাড়তে যাওয়া তো নিত্য ঘটনা।
শৈশবের দস্যিপনা আর চিত্রাপাড়ের দিনগুলো কখন তাঁকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটি মাশরাফি নিজেও জানেন না। মাশরাফি এতটুকু জানেন, খেলাটা তিনি ভালোবাসেন হৃদয় নিংড়ে। সেই ভালোবাসা থেকে ক্রিকেটই হয়ে গেছে পেশা। ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর গত ১৭ বছরে মাশরাফি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। যদিও তাঁর দীর্ঘ পথ চলাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। বারবার চোট নামের শত্রু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সামনে। তবু থামেনি মাশরাফির অগ্রযাত্রা। ক্রিকেটে ভর করেই তাঁর জীবনে ঘটেছে সত্য সুন্দরের আবাহন।

ছবি: ফেসবুক থেকে


দেখতে দেখতে জীবনের ৩৪টি সিঁড়ি পার করে ফেলেছেন। পা দিচ্ছেন ৩৫ নম্বরে। প্রায়ই বলেন, জীবন নিয়ে তাঁর কোনো আফসোস নেই, নেই অতৃপ্তি। বরং জীবন তাঁকে দিয়েছে অনেক। যদি জানতে চাই, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী? মাশরাফি দুবার না ভেবে বলেন, ‘জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার দুই সন্তান।’
ওহ, তোমাদের বলা হয়নি, ৫ অক্টোবর কিন্তু মাশরাফির ছেলে সাহিল মুর্তজারও জন্মদিন। বাবা-ছেলের জন্মদিন একই দিন হলেও বাড়িতে এ নিয়ে বাড়তি কোনো আয়োজন হয় না। পিতা-পুত্রের কারও জন্মদিনই ঘটা করে উদ্‌যাপিত হয় না। অধিনায়কের আগ্রহ না থাকতে পারে, ভক্ত-সমর্থকদের এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। মাশরাফি অবশ্য এটা স্বাভাবিকভাবেই দেখেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই, ভক্তরা নানা কিছুই করে। আমি উদ্‌যাপন করি না বলে অন্যরা এটা উপলক্ষে কিছু করবে না, এমন কোনো কথা নেই।’
জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে এলেন। জীবনের নিয়মেই তাকাতে হয় সামনে। কিন্তু সেই দৃষ্টিটা তাঁর কত সামনে, সেটি অবশ্য বলেন না মাশরাফি, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই ভাবিনি, এখনো ভাবি না। পরিকল্পনা করে চলতে পারি না।’
তবে জন্মদিনের শুভক্ষণে তোমাদের প্রতি মাশরাফির একটা বার্তা আছে, ‘সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো । ভালো ভালো কাজ করো নিজের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য।’
কী, অধিনায়কের কথা মনে থাকবে তো?