আম আঁটির ভেঁপু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়

আম আঁটির ভেঁপু

বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়

ভাষা: বাংলা

ধরন: উপন্যাস

প্রথম প্রকাশক: সিগনেট প্রেস, কলকাতা

বাংলাদেশ সংস্করণ: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

লেখক ও সমালোচক হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলেন, সত্যজিৎ রায়  পথের পাঁচালী  সিনেমা তৈরি না করলেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু বিভূতিভূষণ যদি বইটি না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার। বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়ের নাম যারা শুনেছ, তারা নিশ্চয়ই  পথের পাঁচালী র নামও শুনেছ। তাঁর এই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা বানিয়ে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ভারতরত্ন উপাধি। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদের মন্তব্য, সত্যজিৎ যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন।

যা-ই হোক, ১৯২৮ সালে একটি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল  পথের পাঁচালী । পরের বছর সেটি প্রকাশিত হয় বই আকারে। মূলত, উপন্যাসটি বড়দের জন্য লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ। কিন্তু ছোটদের মধ্যে বইটির চাহিদা লক্ষ করে একসময় একে কিশোর-উপযোগী এবং কিছুটা সংক্ষেপিত করেন লেখক। কিশোরদের জন্য প্রকাশিত বইটির নাম  আম আঁটির ভেঁপু

এই উপন্যাসের মূল চরিত্র অপু নামের এক গ্রাম্য বালক। শহর ছাড়িয়ে বহুদূরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম নিশ্চিন্দিপুর। বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মতোই তাদের নিশ্চিন্দিপুর। অপুর দিদি দুর্গা তার খেলার সাথি। গ্রামের সহজ-সরল পরিবেশে আর অতি দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠতে থাকে দুই ভাইবোন। অজানাকে জানার সহজাত নেশা তাদের। তাই মায়ের শাসন-বারণ উপেক্ষা করেও দুরন্ত দুর্গার হাত ধরে সে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। দিদির সঙ্গে ঝড়ের দিনে আম কুড়োনো, হইচই, চড়ুইভাতি, শরতের কাশবনের দীর্ঘ মাঠ পেরিয়ে রেলগাড়ি দেখা—এ রকম নানা অ্যাডভেঞ্চারের তার একমাত্র সাথি দিদি দুর্গা। চারপাশের ক্রমাগত বিস্ময়বোধ নিয়ে বড় হতে থাকে অপু। চরম দারিদ্র্য আর পাওয়া না-পাওয়ার বেদনার মধ্যেই তাদের জীবনে ঘটতে থাকে নানা অম্লমধুর ঘটনা। কিন্তু তার কাছের মানুষ এই দিদিই একদিন হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে। সেই কষ্টের স্মৃতি মুছতে না মুছতেই আরও পরিবর্তন আসে তার জীবনে। দারিদ্রে্যর কারণেই একসময় গ্রামের পাট চুকিয়ে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে তাদের চলে যেতে হয় কাশীতে।

সহজ-সরল ভাষায় বাংলাদেশের গ্রামের চিরায়ত গল্প শুনিয়েছেন বিভুতিভূষণ। তাঁর বলার ঢঙে কোনো অতিরঞ্জন নেই, নেই অতিকথনও। তাই সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবির সহজ-স্বাভাবিক প্রতিফলন ঘটেছে এই উপন্যাসে। অপুর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি দরিদ্র এক পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম উঠে এসেছে এতে। তাই একই সঙ্গে এই গল্প আনন্দের, এই গল্প দুঃখের আর কৈশোরের দুরন্ত নিষিদ্ধ অ্যাডভেঞ্জারের। এই গল্প পাওয়ার এবং একই সঙ্গে হারানোর। এই গল্প সোনালি শৈশবের। অপুর অবাক বিস্ময়ে বেড়ে ওঠার এই গল্প বাংলাদেশের সব গ্রাম্য বালকের, সবার।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র চিরায়ত বাংলা গ্রন্থমালা সিরিজের আওতায় এই বইটি প্রকাশ করেছে বেশ আগেই। বইটির চমৎকার প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী হাশেম খান। সংগ্রহে রাখার মতো একটা বই সন্দেহ নেই।