লাইফ ইজ বিউটিফুল

লাইফ ইজ বিউটিফুল

প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৭, ইতালি

ধরন: কমেডি-ড্রামা/যুদ্ধ

ভাষা: ইতালিয়ান/ইংরেজি

ব্যাপ্তি: ১১৬ মিনিট

সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিঃসন্দেহে মা। তার পরই বাবা। তবে  লা ভিটা ই বেলা  দেখলে তালিকাটা একটু পাল্টেও যেতে পারে। ওহ্‌! ভুলেই গিয়েছিলাম, তোমরা তো ইতালিয়ান বোঝো না।  লা ভিটা ই বেলা  ইংরেজিতে অনুবাদে দাঁড়ায়  লাইফ ইজ বিউটিফুল । সরল বাংলায় ‘জীবন সুন্দর’। ইতালিয়ান এ ছবিটির পরতে পরতে এ আপ্তবাক্যটি ছেলে জশুয়ার কাছে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বাবা গুইডো। অবশ্য এখানে ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকের মতো ছবিটির নামকরণের সার্থকতা নিয়ে আলোচনার চেয়ে দু-এক কথায় মূল কাহিনিটিই বলি।

ঘটনার শুরু সেই ১৯৩৯ সালে। তত দিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। এক পক্ষে হিটলারের জার্মানি, ইতালি, জাপান আর তুরস্ক। আরেক দিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ আরও কিছু দেশ। পরে তাতে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তার পরই তো হিরোশিমা আর নাগাসাকির অমানবিক সেই পারমাণবিক ট্র্যাজেডি। যা-ই হোক, ১৯৩৯ সালেই ফিরে যাই। সে সময় ইতালির ছোট্ট এক শহরে বাস করত হাসিখুশি আর আমুদে এক যুবক গুইডো। জাতে ইহুদি। সেই যুগে গোটা ইউরোপেই বৈষম্য, নির্যাতন আর অত্যাচারের শিকার ছিল ইহুদিরা। (ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজকের ফিলিস্তিনিদের অমানবিক অবস্থার জন্য দায়ী এককালের অত্যাচারিত এই ইহুদিরা।) ইহুদি হওয়ার অপরাধে দৈনন্দিন জীবনে নানা দুঃখ-কষ্ট আর শত অভাব ছিল গুইডোর। কিন্তু তার পরও জীবনকে উপভোগ্য করতে তাতে রাশি রাশি হাস্যরস যোগ করতে সিদ্ধহস্ত ছিল সে। সেই রসে ভিজে দর্শকও বাঁধভাঙা হাসিতে ফেটে পড়তে বাধ্য।

শহরের এক খ্িরষ্টান স্কুলশিক্ষিকাকে পছন্দ গুইডোর, যার নাম ডোরা। ঘটনাক্রমে দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু একে তো দুজনের ধর্ম আলাদা, তারপর গুইডো চালচুলোহীন নিধিরাম সরদার। অন্যদিকে ডোরাদের পরিবার উচ্চবিত্ত। তাই আপত্তি জানাল পরিবার। তবে সিনেমাটিক কায়দায় বিয়ে করে সংসার পাতে গুইডো আর ডোরা। বছর ঘুরতেই কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলে, জশুয়া। বেশ রূপকথার মতো ব্যাপার। ‘অতঃপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল!’—এই বাক্য দিয়ে এ লেখা শেষ করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু জীবন মোটেও রূপকথা নয়। আগেই বলেছি, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ-ধ্বংস আর নির্মম মৃত্যুর আঁচ লাগে মুসোলিনির ইতালিতেও। হিটলারের নাজিদের নেতৃত্বে ইতালিতে খোলা হতে থাকে ইহুদিদের অমানবিক নির্যাতনের জন্য কনসেনট্রেশন ক্যাম্প।

এর মধ্যেই আসে জশুয়ার চতুর্থ জন্মদিন। সেদিন বাড়িঘর সাজিয়েছে মা-বাবা। যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মধ্যেই এক টুকরা স্বর্গ সেদিন জশুয়াদের বাড়িতে। কিন্তু সেদিনই জার্মান সেনারা ইহুদিদের ট্রেন বোঝাই করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠাতে থাকে। ধরা পড়ে জশুয়া আর গুইডোও। শত শত লোকের সঙ্গে তারাও যেতে থাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। আর কোনো দিন তারা বেঁচে ফিরতে পারবে কি না, কেউ জানে না। কিন্তু শিশু জশুয়া তখনো আঁচ করতে পারেনি আসন্ন বিপদের। জীবন এত নির্মম হতে পারে, সেটি কি কোনো শিশু জানে! ছেলেকে ভালো রাখতে তাই কঠিন এক দায়িত্ব কাঁধে নেয় গুইডো। ক্যাম্পের কঠোর আর নির্মম বন্দিজীবনে শিশুপুত্রকে বাস্তবতা থেকে আড়াল করে সব ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে সে। তাতে যুদ্ধ আর বন্দিজীবনকে নতুন এক খেলা হিসেবে দেখতে থাকে জশুয়া। এভাবে শত কষ্ট আর অপমান সহ্য করে ছেলেকে বিপদ থেকে আগলাতে থাকে বাবা। কিন্তু একদিন গোপনে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে ফিরে আসার সময় সেনাদের হাতে ধরা পড়ে গুইডো। এর পরের গল্প বলে ছবি দেখার মজা নষ্ট করা ঠিক হবে না। তার চেয়ে সময় করে দেখে নিতে পারো যুদ্ধবিরোধী, মানবতাবাদী ছবিটি।

১৯৯৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গ্রান্ড প্রিক্স’ পেয়েছিল  লাইফ ইজ বিউটিফুল । একই বছর ছবিটি অস্কারে সাত বিষয়ে মনোনয়ন পায়। সংগীত, বিদেশি ভাষা আর সেরা অভিনেতা—এ তিন বিষয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নেয় ছবিটি। সাম্প্রতিক জরিপে ৮ শতাংশ ভোটে ইউরোপের সেরা ছবির আসন পেয়েছে  লাইফ ইজ বিউটিফুল । সত্যিই, জীবন বড়ই সুন্দর!