ভূত এসে দেখা করে গেল

‘জানতাম তুই ঠিক এখানে এসে বসে আছিস।’

ছোট মামার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। ‘আরে, তোমাকে না দেখে এলাম গভীর ঘুমে! মা বললেন, খানিক আগে জ্বর সেরেছে। জ্বর ছাড়ার পর মা তোমার শরীর মুছিয়ে দিয়েছেন। তারপর দুধ-রুটি খেয়ে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ।’

‘একদম ঠিক। আপার কাছে আমি এখনো তোর বয়সী। জ্বর ছাড়ার পর টাওয়েল ভিজিয়ে বুক-পিঠ মুছিয়ে দিলেন। তাতে যে কী আরাম পেলাম রে বাপ, বলে তোকে বোঝাতে পারব না। ওই আরামেই ঘুম এসে গেল। দুধ-রুটি খেতে খেতেই ঝিমোতে লাগলাম। খাওয়া শেষ, ঘুমে একেবারে কাদা হয়ে গেলাম।’

‘সেই ঘুম তাহলে ভাঙল কেন?’

ছোট মামা আমার পাশে বসলেন। ‘আর বলিসনে ভাগনে! ভারি মজার একটা স্বপ্ন দেখলাম। সব স্বপ্ন শেষ, ঘুমও শেষ। উঠে দেখি আপা বসে আছেন পাশে। বললাম, ভাগনেটা কোথায় গেল? বললেন, ওর ঘরে। গেলাম তোর ঘরে। গিয়ে দেখি তুই নেই। বুঝে গেলাম এ রকম জোছনা দেখে দুই নিশ্চয়ই পুকুরঘাটে চলে এসেছিস। ঘাটের বাঁধানো বেঞ্চিতে বসে জোছনা দেখছিস।’

‘হ্যাঁ, পড়তে ভালো লাগছিল না।’

‘কেন বাপ, কেন পড়তে তোমার ভালো লাগছিল না?’

ছোট মামা সব সময়ই এ রকম আদুরে আর মজাদার ভঙ্গিতে কথা বলেন। আমার খুব ভালো লাগে। বললাম, ‘তুমি বুঝতে পারছ না, কেন?’

‘না রে বাপ।’

‘তোমার জন্য।’

‘আমার জন্য?’

‘হ্যাঁ। পরশু আমাদের বাড়িতে এলে। তোমাকে দেখে মায়ের চেয়ে বেশি খুশি হলাম আমি। তুমি তো জানোই, তিন মামার মধ্যে তোমাকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি।’

‘তা জানি রে বাপ, তা জানি।’

‘ভাবলাম ছোট মামা এসেছেন, এখন কয়েকটা দিন খুব আনন্দ হবে। আমার স্কুল নেই। সামার ভ্যাকেশন শুরু হয়ে গেছে। দিনরাত আড্ডা দেব মামার সঙ্গে।’

‘আমিও তো তোর সামার ভ্যাকেশন হিসাব করেই এলাম রে বাপ। আমারও ওই একই হিসাব, দিনরাত মামা-ভাগনেতে বেশুমার আড্ডা দেব, মজা করব। দুপুরবেলা পুকুরে নেমে সাঁতার কাটব। এসপার-ওসপার করে ফেলব পুকুর। পূর্ণিমা সন্ধ্যায় এই পুকুরঘাটে এসে বসব। রাত বাড়তে থাকবে রাতের মতো, আমরা দুটিতে শুধুই আড্ডা দিয়ে যাব। চুটিয়ে আড্ডা বলতে যা বোঝায়, সেই আড্ডা।’

ছোট মামা তাঁর প্রাণখোলা হাসিটা হাসলেন। হে হে হে। ‘আমি তো এখন কাঠবেকার, বুঝলি না! কাঠবেকার কাকে বলে জানিস? শুকনো অকেজো কাঠের মতো যার দশা।’

‘তোমার অবস্থা অকেজো কাঠের মতো কেন হবে? তুমি এমবিএ শেষ করেছ, খুবই নামকরা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টার্নি করলে। সেই কোম্পানিতেই চাকরি ঠিক হয়ে আছে। রেজাল্ট বেরোলেই জয়েন করবে।’

‘তো এই সময়টায় বেকার না? কোনো কাজ নেই।’

‘বেকার কিন্তু কাঠবেকার না। মানে অকেজো কাঠের মতো দশা তোমার না।’

‘তা না। অকেজো কাঠ অদূর ভবিষ্যতে কেজো হয়ে যাবে। হা হা হা। তো এই কাঠবেকার, থুক্কু, বেকার অবস্থায় ভাবলাম, যাই আপার বাড়িতে, কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসি ‘প্রিয়’ ভাগনেটার সঙ্গে, আড্ডা-আনন্দ করে আসি। তোর এই প্রিয় নামটা আমার খুবই প্রিয় রে প্রিয় ভাগনে।’

মামা তারপর সাধু ভাষায় চলে গেলেন। ‘তুমি কি তাহা জানো প্রিয়?’

আমার প্রিয় নামটা নিয়ে এ রকম মজা সব সময়ই করেন ছোট মামা। আমার ভালো লাগে। হাসিমুখে বললাম, ‘তা আমি জানি। তোমার নামটাও আমার খুব পছন্দের। কিরণ। কিরণ খুব সুন্দর নাম।’

ছোট মামা খিক করে হাসলেন। এ রকম শব্দে তাঁকে কখনো হাসতে শুনিনি। শব্দটা কী রকম একটু কানে লাগল। ওই নিয়ে কথা বলার আগেই মামা বললেন, ‘কিরণ নামটার মজা কি জানিস বাপ? মজা হচ্ছে, কিরণ নামটা মেয়েদেরও হয়। কিরণ নামের একটা মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। আমি ফোন করেই বলি, কিরণ, আমি কিরণ। শুনে সেও মজা করে বলে, কিরণ বলছি, বলো কিরণ? খিক খিক খিক।’

মামার এই নতুন হাসিটা আমার একদম ভালো লাগছিল না। বলতে যাব সে কথা, বলা হলো না। বলতে গেলাম ওই কথা, মুখে এসে গেল অন্য কথা। ‘ওই কিরণ মেয়েটার সঙ্গে তোমার বিয়ে হলে খুব মজা হবে মামা। হ্যাজবেন্ড-ওয়াইফ দুজনের একই নাম। এ রকম ঘটনা পৃথিবীতে আর নেই। মামি তোমাকে ডাকবে কিরণ বলে, তুমি মামিকে ডাকবে কিরণ বলে। অদ্ভুত ঘটনা।’

‘পৃথিবীতে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে রে ভাগ্নে। এই যে ধর এত আশা নিয়ে তোদের বাড়িতে এলাম, যেদিন বিকেলে এলাম সেই বিকেল সন্ধ্যা আর রাতটা ভালো কাটল। পরদিন দুপুর পর্যন্তও ভালো। পুকুরে নেমে বার দু-তিনেক এসপার-ওসপার করলাম। বিকেলবেলাই জ্বর আসিয়া পড়িল। খিক খিক।’

ছোট মামার অচেনা হাসির সঙ্গে অচেনা একটা গন্ধও এল তাঁর মুখ থেকে। বিচ্ছিরি গন্ধ। আমার গা গুলিয়ে উঠল, বমি আসতে চাইল। বলতে চাইলাম কথাটা, ‘মামা, তোমার মুখ থেকে এমন গন্ধ আসছে কেন? কঠিন জ্বরে মানুষের মুখে বাজে গন্ধ হয় সেটা আমি জানি। কিন্তু এ রকম বীভৎস গন্ধ হয় তা জানি না।’

বলা হলো না। ঘটনা ঘটল আগের মতো। বলতে চাইলাম এক কথা বলে ফেললাম অন্য কথা। ‘মামা, তুমি এপার-ওপার না বলে এসপার-ওসপার বলছ কেন?’

‘মজা করে বলছি রে বাপ, মজা করে বলছি। ওই যে লোকে কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বলে না, এবার ওর এসপার-ওসপার করে ছাড়ব! ওই অর্থে, বুঝলি না? খিক খিক।’

এবারও মামার মুখ থেকে এল সেই বীভৎস গন্ধ। বলতে গেলাম কথাটা, তার আগেই মামা বললেন, ‘তুই তো আজিব টাইপের ভাগনে।’

আমি অবাক। ‘কী রকম?’

‘ক্লাস নাইনের ছাত্র, যার কোনো কিউরিসিটি নেই।’

‘কিউরিসিটি নেই মানে?’

‘এখনো জানতে চাইলি না, কী স্বপ্ন দেখিয়া ঘুম আমার ভাঙ্গিয়া গেল?’

মামার মুখ থেকে সমানে আসছে সেই গন্ধ। শুরুতে গন্ধটা আমি পাইনি। যখন ওই খিক খিক হাসি শুরু হলো তারপর থেকে গন্ধ বেড়েই চলেছে। এখন আর হাসিটা তেমন হাসছেন না মামা, কিন্তু মুখের বদ গন্ধে আমার বমি আসছে। না, কথাটা তাকে বলতেই হবে। মুখ মাত্র খুলেছি, তার আগেই মামা বললেন, ‘শোন ভাগনে, স্বপ্নের কথাটা শোন। স্বপ্ন দেখছি, তুই আর আমি এই ঘাটলায় এসে বসেছি। তোদের বাড়ির ঘর-দুয়ার, উঠান-বাগান আর গাছপালা, পুকুর আর সামনের ওই রাস্তায়, রাস্তার ধারের ওই বিশাল মাঠে ফক ফক করছে জোছনা। এখনকার মতো, ঠিক এখনকার মতো। একটু একটু হাওয়া আছে। চৈত্র মাসের এই হাওয়াকে বলে চৈতি হাওয়া, এ রকম জোছনাকে বলে চৈতালি জোছনা। চৈতালি জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। চৈতি হাওয়ায় কাঁপছে গাছের পাতা, পুকুরের পানি ঝিলমিল ঝিলমিল করছে, এ রকম পরিবেশে বসে আমি তোর সঙ্গে গল্প করছি। কিসের গল্প জানিস?’

মামার মুখের গন্ধে আমার তখন এমন অবস্থা, আমি একেবারে আড়ষ্ঠ হয়ে গেছি, আমি যেন নড়াচড়া করতে পারছি না। কী রকম একটা ঘোরও যেন লেগেছে আমার। ওই অবস্থায় বললাম, ‘জানি। ভূতের গল্প।’

‘রাইট। আমি তোকে নয় রকম ভূতের নাম বলছি— ১. পেতনি ২. শাঁখচুন্নি ৩. স্কন্ধকাটা ৪. জম্বি ৫. ব্রহ্মদৈত্য ৬. মেছোভূত ৭. পোল্টারগাইস্ট ৮. ডাইনি ৯. ভ্যাম্পায়ার। কোন ভূতের কী চরিত্র, কার কী রকম আচরণ, কে কী করে, কে কীভাবে ভূত হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের বাইরেও বহু রকমের ভূত আছে। তাদের নাম দিতে পারেনি মানুষ। তাদের সব আচরণ সম্বন্ধে ধারণাও নেই মানুষের। এসব বলে এই এভাবে তোর কাঁধে আমি হাত রাখলাম, হাত রেখে বললাম, বাড়ি যা ভাগনে। আমি একটু রাস্তার ওদিক দিয়ে ওই মাঠের দিকে যাই। জোছনা দেখে আসি। ফিরতে অনেক রাত হবে, এ জন্য তোকে নিচ্ছি না। খিক খিক।’

কথা বলতে বলতে আমার কাঁধে হাত রেখেছেন মামা। আমি এমন করে কেঁপে উঠলাম, যেন মানুষের হাত না, যেন বরফের তৈরি একটি হাত কেউ আমার কাঁধে রেখেছে। একদিকে ও রকম অচেনা হাসি আর মুখের বধ গন্ধ, আরেক দিকে এমন হিম ঠান্ডা হাত, ছোট মামার ঘটনা কী? জ্বর ছেড়ে গেলে কারও এ রকম হয়? হাসি বদলে যায়, মুখে হয় বাজে গন্ধ, হাত হয়ে যায় বরফের হাত!

মামাকে এসব জিজ্ঞেস করতেই হবে। কোনো না কোনোভাবে জানতেই হবে, ছোট মামার ঘটনা কী।

কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয় না। তার আগেই মামা উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন, ‘যা যা, বাড়ি যা বাপ, বাড়ি যা। আমি ঘুরে আসছি।’

মামা হন হন করে হাঁটতে লাগলেন। হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্রনাথের গান ধরলেন। ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।’ দেখতে দেখতে রাস্তায় চলে গেলেন মামা। একবারও পেছন ফিরে তাকালেন না মামা, ওপারের ধু ধু মাঠে নেমে গেলেন। ফকফকে জোছনায় আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি মামা হেঁটে যাচ্ছেন।

যাক, যেখানে ইচ্ছা যাক। যতখানি ইচ্ছা ঘুরে আসুক, দেখে আসুক পূর্ণিমা জোছনায় ভেসে যাওয়া গ্রাম আর গ্রামের মাঠ। ফিরে আসার পর তার ওই নতুন খিক খিক হাসিটার কথা জিজ্ঞেস করব, মুখের গন্ধ আর বরফ শীতল হাতের কথা জিজ্ঞেস করব। এক দিনের জ্বরে এমন বদল কেন ঘটল মামার!

নাকি আমার সঙ্গে মজা করার জন্য ওই খিক খিক হাসিটা মামা হেসেছেন?

মুখের গন্ধটা কি কোনো ওষুধের গন্ধ?

কী এমন ওষুধ তাঁকে দেওয়া হয়েছে যে ওষুধের অমন পচা গন্ধ? জ্বরের ওষুধে এমন গন্ধ হতে পারে?

আর ওই বরফ শীতল হাত? এমন ঠান্ডা হাত মানুষের হতে পারে?

না না, মামাকে জিজ্ঞেস না করে উপায় নেই। তিনি ছাড়া আমার এই কিউরিসিটি কেউ মেটাতে পারবেন না। রাতে যদি বেশি দেরি করে ফেরেন মামা, আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি, তাহলে কাল সকালেই তাঁকে ধরব। বলো মামা, তোমার ওই খিক খিক, মুখের গন্ধ আর বরফ শীতল হাতের রহস্য কী?

ছোট মামা যে ঘরে থাকছেন, বাড়িতে ঢুকে আনমনা ভঙ্গিতে সেই ঘরের দিকে গেছি, গিয়ে এমন করে চমকালাম, এমন করে কেঁপে উঠলাম, বলে বোঝাতে পারব না। যে দৃশ্য দেখে পুকুরঘাটে গিয়েছিলাম, ছোট মামার ঘরে হুবহু সেই দৃশ্য। মামা তাঁর বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছেন, মা বসে আছেন পাশে। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

আমি হতভম্বের মতো ঘরে ঢুকলাম।

মা বললেন, ‘জোছনা দেখা হলো?’

কোনো রকমে মাথা নেড়ে বললাম, ‘হয়েছে। কিন্তু ছোট মামা...।’

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বললেন, ‘জ্বর ছাড়ার পর ওই যে শরীর মুছিয়ে দিলাম, তার পর থেকে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একটুও নড়াচড়া নেই। আমিও তখন থেকে বসে আছি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। খুব খারাপ লাগছে, বুঝলি। এত দিন পরে এল আমার বাড়িতে, এসেই জ্বর বাঁধাল।’

আমার মনের মধ্যে তখন ব্যাপক তোলপাড়। বুঝতেই পারছি না কিছু। মামা যদি তখন থেকে ঘুমিয়েই থাকেন তাহলে আমার সঙ্গে পুকুরঘাটে এতক্ষণ কে ছিল? কে আমার সঙ্গে এত কথা বলল, কার পাশাপাশি বসে থাকলাম আমি! কে আমার কাঁধে হাত দিল? গান গাইতে গাইতে কে চলে গেল মাঠের দিকে!

এসব ভেবে আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কোন ফাঁকে। বড় করে একটা ঢোক গিললাম। আমার ঢোক গেলা দেখে মা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। ‘কী হয়েছে তোর?’

আমি কথা বলার আগেই নড়েচড়ে উঠলেন মামা, চোখ খুলে তাকালেন। দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে আরামের একটা শব্দ করে উঠে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ভারি আরামের একটা ঘুম দিলাম রে বাপ। ঘুমের চাপে জ্বর উধাও হয়ে গেছে। সেই সাধের ঘুম স্বপ্ন দেখে ভেঙে গেল।’

মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এক গ্লাস পানি দাও তো আপা। পানি খেয়ে স্বপ্নের কথাটা বলি।’

মা পানি দিলেন। ছোট মামা ঢক ঢক করে পানি খাচ্ছেন, আমি অপলক চোখে তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে। পানি শেষ করে তিনি আমার দিকে তাকালেন। ‘তোর ঘটনা কী? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে জীবনে প্রথমবার দেখছিস আমাকে! জ্বরে চেহারা একটু খারাপ হয়েছে, চিকনাইটা একটু কমেছে। এ জন্য কি এমন করে তাকিয়ে থাকতে হবে?’

মামার কথা শুনে হেসে ফেললেন মা। ‘নাহ্‌, তোর স্বভাবটা আর বদলাল না। সব সময় মজা।’

‘জ্বরে একটু বেশি কাতর হয়েছি গো আপা, এ জন্য মজাটাও প্রাণ খুলে করতে পারছি না। হালকার ওপর একটু করলাম।’

তারপর আমার দিকে তাকালেন মামা। ‘শোন ভাগনে, খুব ইন্টারেস্টিং স্বপ্ন। খুবই ইন্টারেস্টিং। দেখি তুই পুকুরঘাটে বসে জোছনা দেখছিস। আমি তোকে খুঁজতে খুঁজতে গেছি ওখানে। তারপর তোর সঙ্গে বসে গল্প করছি। খিক খিক করে অদ্ভুত একটা হাসি হাসছি। জীবনে এ রকম হাসি কোনো দিন হাসিনি। নয় রকম ভূতের নাম বললাম তোকে। একটা অদ্ভুত নাম এখনো মনে আছে। ‘জম্বি’। এমন বিচ্ছিরি একটা গন্ধ হচ্ছিল আমার মুখে, ছি! হাত হয়ে গেছে বরফের তৈরি হাত। সেই হাত তোর কাঁধে রাখলাম একবার। তারপর ‘জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’ গাইতে গাইতে মাঠের দিকে চলে গেলাম। কেমন স্বপ্ন বল? ইন্টারেস্টিং না?

এই অবস্থায় আমার কী বলার থাকতে পারে!

অলংকরণঃ তুলি