আমার বোন চামেলী

‘এই মেয়েটা কে?’ রেগেমেগে নিকিতা জানতে চেয়েছিল।

আমি বললাম, ‘আমার বোন।’

‘ন্যাকামি করিস না তিথি, আমি জানি ও তোদের বাসার কাজের মেয়ে, স্কুলের রিহার্সেলে কাজের মেয়েটাও সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়?’

আমি চুপ মেরে গেলাম।

নিকিতার রাগ কিন্তু তখনও কমে নি। সে কাবেরী ম্যাডামকে বললো, ‘ম্যাডাম, এই মেয়েটা এখানে থাকলে আমি নাচ করব না।’

এবার আমিও বেঁকে বসলাম, ‘ম্যাডাম, ওকে আসতে না দিলে আমিও আর রিহার্সেলে আসব না।’

কাবেরী ম্যাডাম পড়েছেন মহা-ফাঁপড়ে। আর মাত্র চারদিন পর আমাদের স্কুলের অ্যানুয়েল ফাংশন। নিকিতা নাচ করছে, আর আমি গিটার বাজিয়ে গান গাইব, জাস্টিন বিবারের গান। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, স্কুল তাই বন্ধ। শুধু আমরা যে কজন অ্যানুয়েল ফাংশনে পারফর্ম করব, তাদেরই রিহার্সেলের জন্য আসতে হচ্ছে স্কুলে। কাবেরী ম্যাডাম আমাদের গানের টিচার। তিনি গানের রিহার্সেল করাচ্ছেন, আর নাচ শেখানোর জন্য অন্য স্কুল থেকে আনা হয়েছে ইভা টিচারকে।

নিকিতার রাগের কারণটা বলি। নিকিতা আর তৃষা দ্বৈত নাচে অংশ নিচ্ছে। নিকিতা সেজেছে বর, আর তৃষা বউ। ‘ওগো লাজরাঙা বউ তুমি মুখটা তোল না...’ গানের সঙ্গে নাচের ভঙ্গিতে নিকিতা তুলে ধরবে তৃষার মুখটা। এই অংশটা কিছুতেই ঠিকমতো করতে পারছিল না নিকিতা। ইভা টিচার বারবার দেখিয়ে দেন, কিন্তু নিকিতা নাচতে গিয়ে গোলমাল করে ফেলে। শেষের বার নিকিতা একই ভুল করেছে দেখে ফিক্ করে হেসে ফেলেছিল চামেলী। তাতেই ক্ষেপে গেছে নিকিতা।

কাবেরী ম্যাডাম চামেলীর কাছে গিয়ে একটু ধমকের গলায় বললেন, ‘অ্যাই মেয়ে, তুমি হাসছো কেন?’

চামেলীর মুখ শুকিয়ে গেছে, একবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাল, তারপর দুই কান ধরে বলল, ‘আর করব না ম্যাডাম।’

অকপটে অপরাধ স্বীকার করায় কাবেরী ম্যাডাম শান্ত হলেন, বললেন, ‘ও.কে লেটস স্টার্ট...।’

নিকিতারও রাগ কমলো মনে হয়, আবার রিহার্সেলে মনোযোগ দিল সে। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটু রাগ, একটু ব্যথা থেকেই গেল। নিকিতা ওভাবে বলল কেন? সবার সামনে চামেলীকে আমার বাসার কাজের মেয়ে বলাটা কি ঠিক হলো ওর? চামেলীকে আগে কখনো দেখে নি নিকিতা, কিন্তু আমি কি ওকে চামেলীর কথা বলি নি, ও জানে না চামেলী আমার বোন?

আমি কাবেরী ম্যাডামের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আজ আমি আর গাইতে পারব না ম্যাডাম, কাল আবার রিহার্সেলে আসব।’

ম্যাডাম কী বুঝলেন কে জানে, বললেন, ‘ঠিক আছে, বাসায় গিয়ে একটু প্র্যাকটিস করে নিও।’

চামেলী আমার বোন। গত পাঁচ বছর সে আমার সঙ্গে আছে। একসঙ্গে থাকে, খায় শোয়। আমরা দুজন সারাদিন রাজ্যের গল্প করি। শুধু আমি যখন পড়তে বসি বা আমার টিচার আসেন বাসায়, তখন সে আর ডিস্টার্ব করে না। তখন রান্নাঘরে বানু খালাকে এটা ওটা কাজে সাহায্য করে। চামেলী মাছ-সবজি কুটতে পারে, কাপড় ধুতে পারে, শুধু রান্নাটা করতে পারে না। চামেলী অবশ্য বলে, ‘আমি পারব।’

বানু খালা হেসে বলে, ‘দরকার নাই, সব কাজ তুই পারলে আমার কাজ কী?’

চামেলী যখন আমাদের বাসায় এসেছিল তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তার আগে আমি খুব একা ছিলাম। স্কুল থেকে ফিরলে বানু খালা গোসল করিয়ে খাইয়ে দিত। আব্বু আর মাম্মি অফিসে থাকতো সারা দিন, আমি ময়না পাখির সঙ্গে কথা বলতাম। ময়না পাখিটা শুধু দুটো কথা জানতো, ‘আমার নাম ময়না’ আর ‘কেমন আছ সিরাজ?’ আমি ওর সঙ্গে কত কথা যে বলতাম, ও আগামাথা কিছু বুঝত না, শুধু বলত, ‘আমার নাম ময়না’, আর ‘কেমন আছ সিরাজ।’ এই সিরাজটা কে আমি জানি না। আব্বু বলেছিল, এই পাখিটার মালিক ছিল সিরাজ নামের একটা ছেলে। সে তাকে কথা বলা শিখিয়েছিল। পরে আব্বু ওর কাছ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে ময়নাটাকে কিনে নিয়েছিল।

সেই থেকে ময়না থাকে আমার সঙ্গে। আমি ওকে কথা বলা শেখাতে অনেক চেষ্টা করেছি, পারি নি। তবু আমার একা সময়ে ও ছিল আমার বন্ধু। একদিন ময়নাটা হঠাৎ মরে গেল। আমার আম্মু তো মারা গিয়েছিল খুব ছোটবেলায়, কেউ মারা গেলে কেমন লাগে সেটা তখন আমি জানতাম না। ময়না পাখিটা মারা যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম। সারাটা দিন আমার বুক ব্যথায় টনটন করতো, রাতে ঘুমের মধ্যে চমকে উঠতাম, মনে হতো, আমার ময়না পাখিটা কোথায় যেন কথা বলছে, ‘কেমন আছ সিরাজ?’

আমার খুব জ্বর হয়েছিল, আমি জ্বরের ঘোরে ময়না ময়না বলে কাঁদতাম। ওই সময় আমাদের বাসায় চামেলী না এলে আমিও হয়তো আম্মুর মতো, ময়না পাখির মতো মরে যেতাম।

আমাদের ড্রাইভার রমজান চাচা ওদের গ্রাম থেকে চামেলীকে এনে দিয়েছিল। আমার চেয়ে বছর/ছমাসের ছোট হবে। এক মাথা জট পাকানো চুল, নোংরা জামা, নাক বেয়ে সিকনি ঝরছে। দেখে প্রথমে খুব ঘেন্না হয়েছিল। ওমা, বানু খালা সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়ে আমার একটা পুরনো জামা যখন পরিয়ে দিল, তখন আমি এক্কেবারে অবাক! কী ফুটফুটে চেহারা। আমাদের খুব ভাব হয়ে গেল।

আমার আর চামেলীর জীবনে একটা খুব বড় মিল আছে। ওর আম্মুও ছোটবেলায় মারা গেছে, ওর আব্বুও আবার একটা বিয়ে করেছে। তবে ওর নতুন আম্মুটা নাকি ওকে খুব মারতো, আমার মাম্মী একটু রাগী, কিন্তু আমাকে কখনো মারে না। বরং জামা-কাপড় খেলনা কিনে দেয়, বার্থডের দিন কেক কিনে আনে, ওইদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলে উইশ করে যায়। শুধু মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে ঝগড়া হলে মাম্মি রেগেমেগে ‘তোমার মেয়ে, তোমার মেয়ে...’ কী কী যেন বলে, আমি আড়াল থেকে শুনেছি।

তো চামেলীকে পেয়ে আমি ময়নার কথা ভুলে গেলাম। আমার খুব আনন্দের দিন কাটতে লাগল। আমরা দুজন বিকেলে হাউজিংয়ের খেলার মাঠে দোলনায় দুলি, সি-স খেলি। সবচেয়ে মজা হয় রাতে ঘুমোতে গেলে। আমরা দুজন অনেক রাত অব্দি জেগে কথা বলি। আমি বলি স্কুলের গল্প, চামেলী তার গ্রামের গল্প। যেন সারা দিনের জমানো সব কথা রাতে রাতে হরবর করে বলে ফেলি আমরা। এরমধ্যে একদিন মাম্মি টের পেল আমরা অনেক রাত জেগে কথা বলি। আমার ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে বলল, ‘তোমরা কি দুজনে একই খাটে শোও?’

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’

মাম্মি খুব রাগ করে বলল, ‘না এটা হয় না, আজ থেকে চামেলী নিচে বিছানা পেতে শোবে।’

চামেলীর তো কোনো কথাতেই না বলার অভ্যাস নেই, ও একটা পাটি বিছিয়ে তার ওপর কাঁথা পেতে মাটিতে শুয়ে পড়ল। আমার খুব কষ্ট হল। মাম্মী ঘুমোতে চলে যাওয়ার পর আমি খাট থেকে নেমে একটা বালিশ নিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। চামেলী খুব মানা করেছিল, আমি শুনি নি। সকালে মাম্মি তো রেগে লাল, আব্বুকে ডেকে দেখাল মেয়ের কাণ্ড। আমি বুদ্ধি করে বললাম, ‘আমার একা শুতে ভয় করে, ঘুমের মধ্যে ভয়ের স্বপ্ন দেখি।’

শেষে আব্বু বলল, ‘থাক্,  ওরা একসঙ্গে খাটেই ঘুমাক।’

ব্যস, আবার আমাদের মজা শুরু হলো, অনেক রাত অব্দি গল্পও চলতে লাগল।

চামেলী আমাকে কী যে ভালোবাসে! একবার মাম্মির আইপ্যাড হাত থেকে ফেলে ভেঙে ফেলেছিলাম আমি। জানতাম আইপ্যাডটা মাম্মির খুব প্রিয়। মিজান মামা বিদেশ থেকে এনেছিল। আব্বু আর মাম্মি অফিসে যাওয়ার পর ওটা ড্রয়ার থেকে বের করে নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। অফিস থেকে ফিরে ভাঙা আইপ্যাড দেখে কী চিৎকার মাম্মির। ‘কে ভেঙেছে কে ভেঙেছে’ বলে খুব শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। আমি খুব ভয় পেয়ে বলেছিলাম, ‘আমি না।’

‘তুই ভেঙেছিস?’ চামেলীকে জিজ্ঞেস করেছিল মাম্মি।

চামেলী মাথা নামিয়ে বলেছিল, ‘জ্বি আম্মা আমি ভাঙছি।’

ওর চুল মুঠো করে ধরে কী যে মার মেরেছিল মাম্মি। একটুও কাঁদে নি, চুপচাপ মেয়েটা আমার জন্য মার খেয়েছিল। সেদিন রাতে চামেলীকে জড়িয়ে ধরে আমি অনেক কেঁদেছি।

আরেকবার তো আমি নিজেই খুব কষ্ট দিয়েছিলাম ওকে। আমার নওশিন খালার গায়ে-হলুদের দিন সবাই পার্লারে গিয়ে সেজেছিল। আমি চামেলীকেও নিয়ে গিয়েছিলাম পার্লারে। ওর চেহারাটা তো খুব মিষ্টি, সাজার পর ওকে পরীর মতো লাগছিল। তো, গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই ওকে দেখে অবাক, ওমা এই মেয়েটা কে, কী সুন্দর লাগছে, কী মিষ্টি দেখাচ্ছে... এসব বলছিল। আর আমাকে যেন কেউ দেখছেই না। আমার ফুপাতো বোন পিয়া তো বলেই ফেলল, ‘তোমার সাজটা কিন্তু আজ ভালো হয় নি তিথি।’

খুব রাগ হয়েছিল আমার, আর সব রাগ গিয়ে পড়েছিল চামেলীর ওপর। আমি ওকে বলেছিলাম, ‘তোকে আর কোনো দিন পার্লারে নিয়ে যাব না।’

আমাকে খুব ভালোবাসে তো, আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে একটু কষ্ট পেয়েছিল বোধহয়, কিছুক্ষণ পর মুখটা ধুয়ে, খোলা চুলগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে এসে বলল, ‘তিথি আপু, এইবার দ্যাহো, আমারে আর সুন্দর লাগতেছে না।’

নিজের ওপর কী যে রাগ হয়েছিল আমার। কেন আমি ওকে এরকম বলতে গেলাম। জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, ‘চামেলী ডার্লিং, তুই সাজলেও সুন্দর, না সাজলেও সুন্দর।’

আশ্চর্য, এতো বকাঝকা আর মার খেয়েও যে মেয়েটা কাঁদে না, দেখলাম এই কথায় তার চোখ দুটো ছলছল করছে।

আমাকে ছেড়ে যেন একদণ্ড থাকতে চায় না। একবার ঈদের আগে ওর আব্বু এসেছিল বাড়িতে নিয়ে যেতে। অনেক বুঝিয়েও রাজি করাতে পারেনি। সত্যি বলতে কি, আমারও ওকে ছাড়া চলে না। ওর না হয় আর কেউ নেই, কিন্তু আমার তো অনেক বন্ধু। ক্লাসমেট বন্ধু, হাউজিংয়ের বন্ধু, তবু আমার বোন চামেলী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

সেদিন রিহার্সেলের সময় নিকিতার ব্যবহারে আমার রাগ হয়েছিল। কিন্তু চামেলী কেমন সহজ করে বলেছে ‘দোষটা আমার অইছে তিথি আপু, সবার সামনে হাইসা ফেলছি, বেচারি লজ্জা পাইছে না?’

পরদিন থেকে আমরা দুজনে আবার এক সঙ্গে রিহার্সেলে যাই। আমি গান করি, নিকিতা-তৃষারা নাচ করে, চামেলী এক কোণে চুপচাপ বসে দেখে। হাসে না।

এরমধ্যে ঘটল আরেক কাণ্ড। ফাংশনের মাত্র একদিন বাকি। হঠাৎ খবর এল তৃষার চিকেন পক্স হয়েছে সে আর আসবে না, ফাংশনে নাচতে পারবে না। সবার মন খারাপ। সবচেয়ে মন খারাপ নিকিতার। তৃষা তার জুটি। এত দিন ধরে এক সঙ্গে রিহার্সেল করল, এখন তৃষার জন্য তারও আর নাচ করা হবে না। একদিনের মধ্যে আর কারো সঙ্গে জুটি বেঁধে নাচ তৈরি করাও তো সম্ভব না।

ইভা টিচার আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমরা কেউ চেষ্টা করে দেখবে?’

আমরা সবাই সমস্বরে বললাম, ‘না টিচার, না টিচার, পারব না...।’

হঠাৎ এক কোণে বসে থাকা চামেলী বলে উঠল, ‘আমারে নিবেন?’

সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল, বলে কী মেয়েটা! আমি ও অবাক। ইভা টিচার বললেন, ‘দেখি আসো তো তুমি। ’

ভয়ে আমার বুকটা ঢিবঢিব করছে।

সিডি প্লেয়ারে গান বেজে উঠল, ‘ওগো লাজরাঙা বউ তুমি মুখটা তোলো না।’ নিকিতার সঙ্গে কেমন সুন্দর তাল মিলিয়ে বউয়ের মতো নাচতে লাগল চামেলী।

বিস্ময়ে-আনন্দে ইভা টিচার বলে উঠলেন, ‘ওয়ান্ডাফুল! এই নাচ তুমি কোথায় শিখলে?’

‘এইখানে সবদিন আসছি তো... দেইখ্যা শিখছি।’

‘ভেরি গুড।’

গর্বে আনন্দে আমার মন ভরে যায়।

ফাংশনের দিন চামেলীকে বউয়ের মতো সাজিয়ে দিয়েছি আমি। লাল টুকটুকে শাড়ি, কানে দুল, গলায় মালা।

ফাংশনটা খুব সুন্দর হলো। স্কুলের ছাত্রীরা সবাই এসেছে, অনেকের বাবা-মাও এসেছেন। সবাই খুব হাততালি দিলো। আমার গানও মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে সবার মুখে বর-বউয়ের নাচের প্রশংসা।

ফাংশনে অতিথি হয়ে এসেছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বক্তৃতার পরে বললেন, বর-বউয়ের নাচটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে। প্রচন্ড করতালির মধ্যে তিনি নিকিতা আর তৃষার নাম ঘোষণা করলেন। নিকিতাকে, আর তৃষার নামে চামেলীকে তিনি গলায় মেডেল পরিয়ে দিলেন। আবেগে চামেলীকে জড়িয়ে ধরলাম আমি।

নিকিতা এসে চামেলীকে বলল, ‘থ্যাঙ্ক য়্যু।’

ওকে চমকে দিয়ে চামেলী বলল, ‘ইউ আর ওয়েলকাম।’

খুব খুশি হয়ে ফিরে আসছিলাম। হঠাৎ কাবেরী টিচার চামেলীকে ডেকে বললেন, ‘তোমার মেডেলটা দিয়ে যাও, তুমি তো স্কুলে পড় না, এটা আসলে তৃষার নামে তুমি পেয়েছ... এটা ওকেই দিতে হবে।’

আমি হতবাক, হা করে তাকিয়ে আছি ম্যাডামের দিকে। চামেলীর চোখে-মুখে কী ফুটে উঠল একটু বেদনার ছায়া? কোনো কথা না বলে মেডেলটা সে ফিরিয়ে দিল কাবেরী ম্যাডামকে।

ফেরার পথে গাড়িতে বসে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলাম দুজনে।

আমার মন খারাপ বুঝতে পেরেই বোধহয় চামেলী বলল, ‘মেডেল দিয়া আমি কি করুম তিথি আপু? আমি তো স্কুলে পড়ি না...।’

সত্যিই তো মেডেল দিয়ে কী করবে চামেলী? কিন্তু আমার কেন বুকটা টনটন করছে ব্যথায়? কেন চোখ ভেসে যাচ্ছে চোখের জলে?

অলংকরণঃ মিতু