জন্মদিনে কেক কেন কাটি, মোমবাতি কেন নেভাই?

কেক চাই, কেক। কিন্তু মুখ ফুটে কি বলা যায়? তবু মনটা আঁকুপাঁকু করে কখন সবাই আমাকে কেকের সামনে দাঁড় করাবে? এরপর সুর করে বলতে থাকবে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। আর আমি এক ফুঁতে সব মোমবাতি নিভিয়ে এক কোপে আস্ত কেকটা কাটব। জন্মদিনের দিন যদি একটা আস্ত কেক কাটা না যায়, তবে অন্যদিনের চেয়ে এই দিনটা আলাদা হলো কী করে? তাই লম্বা হোক বা খাটো হোক, গোলগাল হোক বা চ্যাপ্টা হোক জন্মদিনে কেক চাই-ই চাই। ভ্যানিলা কেক, চকোলেট কেক, চিজ কেক, ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক। উফফ! কেকের কথা মনে হতেই জিবে পানি চলে আসে। তাই জন্মদিনের দাওয়াত খেতেও মজা।

বহু বহু আগে থেকেই কিন্তু জন্মদিন পালন হতো। রাজা-বাদশাহদের যুগে তাদের জন্মদিন খুব জাঁকজমক করে পালন করা হতো। কারণ, তখন এমনটা ভাবা হতো যে বড় বড় মানুষদের পিছে সব সময় দুষ্ট আত্মা বা অশুভ শক্তি ঘুরঘুর করে। নতুন বছরে রাজা-মহারাজার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তাই শয়তান তাড়াতেই জন্মদিন করা হতো। তবে অনেক বছর আগে থেকেই কেকের প্রচলন রয়েছে।

প্রাচীনকালে গ্রিকরা প্রায় চাঁদের মতো গোল আকৃতি দিয়ে কেক বানাত। সেই কেকটা বানানো হতো চাঁদের দেবী আর্তেমিসের জন্য। মধ্যযুগে জার্মানরা যিশুর জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য ময়দা দিয়ে এমনভাবে কেক তৈরি করত যে দেখে মনে হতো শিশু যিশুকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। ধীরে ধীরে একসময় ছোট শিশুদের জন্মদিন পালন করা শুরু হয়। এটাকে বলা হতো কিন্ডারফেস্ট। কিন্ডার মানে শিশু আর ফেস্ট মানে উৎসব। তারা মনে করত, এর মাধ্যমে তাদের সন্তানদের পবিত্র আত্মাকে দুষ্ট আত্মা থেকে রক্ষা করা যাবে। আবার, প্রাচীন রোমানরা তিন ধরনের জন্মদিন পালন করত।

ব্যক্তিগত জন্মদিন যেটা তাদের বন্ধু ও আত্মীয়দের নিয়ে উদ্যাপন করত, শহরের এবং দেবতাদের জন্মদিন, আর অন্যটা হলো অতীত ও বর্তমানের সম্রাট এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন। তবে বহু বহু বছর আগে সব দেশেই যে কেক কেটে জন্মদিন পালন করত তা নয়। যেমন রাশিয়ায় জন্মদিনে ফলের তৈরি পাই (এক ধরনের পিঠা) দেওয়া হতো সবাইকে। কোরিয়ায় খাওয়ানো হতো স্যুপ। তবে এখন প্রায় সব দেশেই জন্মদিনে কেক কাটার রীতি বেশি প্রচলিত।

এ তো গেল কেকের কথা। তবে কেকের ওপর কেনই বা মোমবাতি বসাতে হবে, আর কেন এত ফুঁ-টু দিয়ে গান গেয়ে কেক কাটতে হবে? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে।

প্রাচীন গ্রিকদের চাঁদের দেবীর কথা তো শুনলে। সেই আর্তেমিসের জন্মদিন উপলক্ষে তার জন্য তৈরি করা কেকটা যেন চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করে, সে জন্য কেকের গায়ে অনেকগুলো জ্বলন্ত মোমবাতি বসিয়ে দেওয়া হতো। গ্রিকরা মনে করত, ওপর থেকে আর্তেমিস তাদের কেকটাকে দেখতে পাচ্ছেন। এরপর সবাই মিলে প্রার্থনা করে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিত। আর ভাবত যে সেই মোমবাতির ধোঁয়া তাদের প্রার্থনা নিয়ে দেবতার কাছে চলে যাচ্ছে। জার্মানরাও মোমবাতি ব্যবহার করত কেকের ওপর। ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে কেকের চারপাশটা সাজিয়ে দিত আর মাঝখানে থাকত একটা বড় মোমবাতি। এই বড় মোমবাতিতে ১২টা দাগ টানা ছিল। এ দিয়ে বছরের ১২  মাস বোঝানো হতো। এটাকে তারা বলত লাইট অব লাইফ। কেক দেখতে যেমনই হোক, কেকের ওপর মোমবাতি না থাকলে যেন কেকের সৌন্দর্য পূর্ণতা পায় না।

ধীরে ধীরে প্রচলন হতে থাকে যে যার জন্মদিন কেকের ওপর তার বয়সের সমানসংখ্যক মোমবাতির চেয়ে একটা বেশি থাকতে হবে। নতুন একটা বছরের জন্য অতিরিক্ত একটা মোমবাতি। অর্থাৎ, দুই বছর বয়স পুরো হয়ে কেউ এখন তিনে পা দিচ্ছে, তখন কেকের ওপর তিনটা মোমবাতি। কিন্তু বয়স্কদের জন্য কম মোমবাতি ব্যবহার করা হয়। যেমন যার বয়স ৫০ বছর হতে চলেছে, তার জন্য পাঁচটা মোমবাতি। যার জন্মদিন সে মনে মনে একটা উইশ করে মোমবাতি নেভাবে। বলা হয়ে থাকে যে এক ফুঁতে সমস্ত মোমবাতি নেভাতে পারলে তোমার চাওয়া পূর্ণ হবে। তবে তুমি কী চাইছ, সেটা কাউকে বলা যাবে না, তাহলে কিন্তু সেটা পূরণ হবে না।

চলো সবাই মিলে গেয়ে উঠি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
চলো সবাই মিলে গেয়ে উঠি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...

আচ্ছা এখন বলো তো, সুর করে এই যে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গাও, এটা কে লিখেছে? চিন্তায় পড়ে গেলে? আসলে মূল গানটা ছিল গুড মর্নিং টু ইউ।

গানটা তৈরি করেছিল দুই আমেরিকান বোন প্যাটি হিল ও মিলড্রেড হিল। পরবর্তী সময়ে সুর ঠিক রেখেই গানের কথাটা পরিবর্তন করে হয়ে গেল হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। আর এর পর থেকেই কেকের ওপর হ্যাপি বার্থডে লেখাটা বেশ জনপ্রিয় হতে লাগল। আর জন্মদিনে হইহুল্লোড় করা অবশ্যই ভালো।

কারণ মনে করা হতো, জন্মদিনের দিন দুষ্ট আত্মা যার জন্মদিন, তার সঙ্গে দেখা করতে আসে।

তাই যত হইচই করা যাবে দুষ্ট আত্মা ভয় পেয়ে তত দূরে ভেগে যাবে।

বছরের একটা দিন বলে কথা, তাই জন্মদিনটা কেক, মোমবাতি আর বন্ধুদের সঙ্গে হইচই করেই কাটুক!