দ্য সং অব স্প্যারো

দ্য সং অব স্প্যারো

পরিচালক: মজিদ মাজিদি

প্রথম প্রকাশ: ২০০৮, ইরান

ভাষা: ফারসি, ইংরেজি

ইরানের রাজধানী তেহরান ছাড়িয়ে মরুভূমির প্রান্তঘেঁষা দূর এক গ্রামে বাস করত মধ্যবয়স্ক করিম। স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে ছোট্ট প্রায় ভাঙাচোরা বাড়িতে ছিল তাদের বাস। গ্রামের এক উটপাখির খামারে কাজ করে সামান্য রোজগারে নুন আনতে পান্তা ফুরাত তাদের। একদিন করিমের ভুলে খামার থেকে পালিয়ে যায় এক উটপাখি। এই অপরাধে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় করিমকে। এবার পান্তা তো দূরের কথা নুন কিনতেও জেরবার হতে হয় করিম আর তার পরিবারকে।

এই ঘনঘোর বিপদের সময় তার মেয়ে হানিয়ার হেয়ারিং এইড হারিয়ে যায় বাড়ির পাশের এক ডোবায়। অবশ্য কাদা ঘাঁটাঘাঁটি করে সেটি উদ্ধার হলেও দেখা গেল, তা আর কাজ করছে না। বিনামূল্যে সেটি সারাই করতে পাশ্ববর্তী হাসপাতালে ছুটে যায় করিম। চিকিৎসকেরা জানায়, সেটি ঠিক করতে অন্তত চার মাস সময় লাগবে। কিন্তু তেহরানে গেলে এখই ঠিক করা সম্ভব। তবে তাতে খরচ পড়বে অনেক। ওদিকে সামনেই মেয়ের স্কুলে পরীক্ষা। দিশেহারা হয়ে পড়ে করিম।

বাধ্য হয়ে ভাঙাচোরা মোটরসাইকেলে চেপে মেয়ের হেয়ারিং এইড ঠিক করতে পাশাপাশি কাজের সন্ধানে একদিন তেহরানমুখী হয় করিম। কিন্তু সেটি ঠিক করার খরচ শুনে করিমের চক্ষু চড়কগাছ। অত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই তার। রাজধানীর গোলকধাঁধায় অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকে সে। কাজ খুঁজতে খুঁজতে আচমকাই রোজগারের পথ খুলে যায় তার। মোটরসাইকেলে যাত্রী আর মাল আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করে সে। উপরি পাওনা হিসেবে বেশ কিছু কাজের জিনিস হাতে আসতে থাকে করিমের। পরিবারে বেশ একটা আনন্দের হাওয়া বইতে থাকে। এভাবে কদিন মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু অত সুখ বোধ হয় লেখা ছিল না তাদের ললাটরেখায়। তাই হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে শয্যাশায়ী হয় করিম। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে লোকটি বিছানাবন্দী, ভাবো একবার। আবারও সেই আটপৌরে অভাব-অভিযোগ চেপে বসতে থাকে তাদের ওপর।

পরিবারের এই দুঃসময়ে ভীষণ কর্তব্যবোধ জেগে ওঠে করিমের কিশোর বয়সী ছেলে হোসেনের। পড়ালেখা বাদ দিয়ে হোসেন টাকা রোজগারের চিন্তায় মশগুল হয়ে পড়ে। করিমের তীব্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কয়েক বন্ধু মিলে নানা ধরনের কাজ শুরু করে তারা। একটি মাছের খামার বানানোর জন্য তারা আটঘাট বেঁধে নামে। সে জন্য বাড়ির পাশে একটি মজা ডোবা পরিষ্কার করে হোসেন আর তার দলবল। মাছের পোনা কিনতে রাস্তায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করে গোপনে টাকা জমাতে থাকে তারা। একদিন সবার টাকা দিয়ে শহর থেকে একঝাঁক মাছের পোনা কিনেও ফেলে হোসেন আর তার বন্ধুরা। চোখে-মুখে দুরন্ত সব স্বপ্ন আঁকতে আঁকতে শহর থেকে গ্রামে বাড়ির পথে ছুটতে থাকে তারা। কিন্তু হঠাৎ...! শেষ অংশটি আগেই বলে ছবি দেখার মজা নষ্ট করাটা বোধ হয় ঠিক হবে না।

নিম্নমধ্যবিত্ত একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট হাসি-কান্না মেশানো মজার সব ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে  দ্য সং অব স্প্যারো র আদ্যোপান্ত। রুপালি ফ্রেমে কৈশোরের একঝাঁক স্বপ্নের গল্প বুনেছেন ইরানের শক্তিশালী পরিচালক মজিদ মাজিদি। শিশু-কিশোরদের জন্য তাঁর নির্মিত চিলন্ড্রেন অব হ্যাভেন কালার অব প্যারাডাইজ বরন  (বৃষ্টি), পেদার (ফাদার/বাবা) ছবিগুলো যারা দেখেছ, তাদের কাছে অবশ্য তাঁকে নতুন করে পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই। এসব ছবির নির্মাণের জন্য তিনি সারা বিশ্বেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া দ্য সং অব স্প্যারো  তাঁর মুকুটে যোগ করেছিল আরেকটি পালক। সে বছরই সেরা বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে ৮১তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার জিতে নিয়েছিল ছবিটি। এ ছাড়া সে বছরই বার্লিনে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অর্জন করেছিল সিলভার বেয়ার। তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার, ছবিটি পেয়েছে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা। দ্য সং অব স্প্যারো  দেখলে আশা করি তুমিও একমত হবে অন্য দর্শকদের সঙ্গে।