আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ - জুল ভার্ন

আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ

জুল ভার্ন

প্রথম প্রকাশ: ১৮৭৩ সাল, ফ্রান্স

ভাষা: বাংলা, ইংরেজি

এই বইয়ের কাহিনি উনিশ শতকের। তখন জলপথে যোগাযোগের বাহন বলতে পাল তোলা জাহাজ। বাষ্পীয় ইঞ্জিন সবে জায়গা করে নিতে শুরু করেছে রেলপথে আর সমুদ্রগামী জাহাজে। ঠিক এই সময়েই লন্ডনে বাস করতেন ফিলিয়াস ফগ। ধনী মানুষ তিনি। তাঁর সবকিছু মাপা মাপা। ভীষণ জেদি। আত্মসম্মান বোধটাও বেশ টনটনে। নিয়মের বাইরে খুব একটা চলেন না। প্রতিদিন নিয়ম করে লন্ডনের এক ক্লাবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি। নিয়মনীতির চক্ররে এভাবে ভালোই চলছিল সবকিছু। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় পত্রিকার একটা রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বিষয়, সবচেয়ে কম কত দিনে বিশ্ব ভ্রমণ করা সম্ভব। আড্ডার মধ্যে দুজন ফিচকে লোক থাকেই। তারা আলোচনায় তর্ক বাধিয়ে মজা পায়। সেভাবেই হঠাৎ সেদিনের সেই আলোচনা গড়াল তর্কে। ফিলিয়াস সাত-পাঁচ না ভেবেই দুম করে বলে বসলেন, পুরো পৃথিবী মাত্র আশি দিনের মধ্যে এক চক্কর দিতে পারবেন তিনি।

আড্ডার মাঝে আবার বাজি ধরার জন্যও কিছু লোক সব সময় মুখিয়ে থাকে। ফিলিয়াস ফগের কয়েক বন্ধু ঝটপট বাজিও ধরে ফেলল। দুই হাজার ডলার বাজি। লে ঠ্যালা! কারণ তাদের বিশ্বাস, সে যুগে এটা অসম্ভব। ফিলিয়াস ৮০ দিনের মধ্যে পৃথিবী এক চক্কর দিতে পারলে এই টাকা পাবেন তিনি। কিন্তু অর্থের লোভে নয়। তীক্ষ্ণ আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ফিলিয়াস ফগের ভীষণ আঁতে ঘা লাগল। অ্যাঁ, তার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না!

ফিলিয়াসের ভীষণ জেদ চেপে গেল। দুর্গম, অজানা, অচেনা পথে পদে পদে বিপদের হাতছানি। কিন্তু যা থাকে কুলকপালে ভেবে বাজি লাগিয়ে দিলেন একরোখা ফিলিয়াস ফগ। আগপিছু না ভেবে, শর্ত অনুযায়ী চাকরকে নিয়ে পরদিনই যাত্রা শুরু করলেন তিনি। এরপর শুরু হলো একটানা রুদ্ধশ্বাস দুঃসাহসী সব অভিযান। কখনো বেলুনে, কখনো জাহাজে, কখনো হাতির পিঠে কখনোবা স্রেফ পায়ে হেঁটে তিনি একসময় ভারতে পৌঁছান। সেখানে এক অসহায় মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান তাঁরা। পরে সে মেয়েটিও তাদের সফরসঙ্গী হয়। এরপর প্রাণ হাতে নিয়ে একে একে পার হতে থাকেন সাংহাই, প্রশান্ত মহাসাগর, নিউইয়র্ক, শিকাগো, লিভারপুল, আয়ারল্যান্ড। যাত্রাপথে নানা বিপদে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। তবে নাটকীয়ভাবে সেসব থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে অবশেষে নিজের শহরে ফিরে আসেন ফিলিয়াস। কিন্তু ততক্ষণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেছে ফিলিয়াসের। ভীষণ মুষড়ে পড়েন ফিলিয়াস। হতাশ হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু নাটকের আরও বাকি ছিল তখনো। শেষ পর্যন্ত ফিলিয়াসই জিতেছিলেন পুরো দুই হাজার ডলার। কিন্তু কীভাবে? সেটি আগেই বলে দিলে বইটি পড়ার আর মজা রইল কই!

এ মজার অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিটি লিখেছেন বিখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞান লেখক জুল ভার্ন। তাঁকে বলা হয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক। তাঁর কল্পনাশক্তি ছিল ঈর্ষণীয়। বাস্তবে উদ্ভাবনের অনেক আগেই তিনি কল্পনায় সাগরতলে সাবমেরিন চালিয়েছেন। মিসাইল আবিষ্কারের আগেই ছুড়েছেন মিসাইল। রকেটে করে মহাশূন্যে তথা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, অভিযানের গল্পগুলোতে নিখুঁতভাবে জায়গার বর্ণনা দিতেন জুল ভার্ন। পড়ে মনে হয়, তিনি নিজেই যেন সে জায়গায় ঘুরে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। বলা যায়, ভীষণ ঘরকুনো ছিলেন জুল ভার্ন। দীর্ঘ ৪০ বছর নিজের বাড়ির ছোট্ট এক চিলতে চিলেকোঠায় বসেই অধিকাংশ বই লিখেছেন। সেখান থেকে খুব একটা নড়াচড়ার নাম ছিল না। তবে সেই চিলেকোঠাতেই ঠাসা ছিল সারা বিশ্বের মানচিত্রসহ নানা নথিপত্র। সেসব দেখে আর পড়েই জনপ্রিয় সব বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর অভিযানের কাহিনি লিখে গেছেন জুল ভার্ন। তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ অন্যতম। বাংলায়  আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ নামে বইটি প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগেই। আর এ উপন্যাসটি অবলম্বনে এ পর্যন্ত ডজন খানেক মুভি বানানো হয়েছে দেশে দেশে। বইটি পড়ার পর, মুভিও দেখে নিতে পারো।