মেঘের পৃথিবী

সাদা রঙের বিশাল ভালুকছানাটা মাকে বলল, ‘মা মা, আমি কি এখন একটু অনেক দৌড়ে দৌড়ে খেলতে পারি?’

ভালুকের মা খুবই সন্দেহপ্রবণ মহিলা। ছানার আবদার শুনে হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চারদিক দেখতে থাকল। প্রথমে স্কুলের মাঠটার দিকে তাকাল। অনেকগুলো ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ফুটবল খেলছে। যতটা না খেলছে, তার চেয়ে বেশি হইচই করছে। এই তো এইমাত্র একটা গোল হলো। মেয়ে দলের চিত্কারে কান পাতা দায়। একটা ছেলে চিত্কার করে বলছে, ‘হয় নাই হয় নাই গোল হয় নাই, অফসাইড অফসাইড।’ দেখতে দেখতে এদের মধ্যে মারামারি বেধে গেল। না, স্কুলের মাঠ থেকে কোনো সমস্যা নেই। খেলা নিয়ে এরা এত ব্যস্ত যে কারও সময়ই হবে না এখন আকাশের দিকে তাকানোর। জোন ক্লিয়ার।

এরপর সে তাকাল নদীর ঘাটটার দিকে। সেই কখন দুপুর গড়িয়েছে। এই বিকেলবেলাতেও একদল পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বুঝল ছেলেপিলেগুলো পানির মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে। না, এরাও এখন আকাশের দিকে তাকাবে না। এই জোনও ক্লিয়ার। তাহলে বোধ হয় ওকে বলাই যায় দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে।

সে মুখে বলল, ‘হ্যাঁ বাবুসোনা, তুমি এখন দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে পারো।’ আর তখনই দেখল, ধানখেতের মাঝে একটা ছেলে অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই মা ভালুক তার ছানাকে বলল, ‘না না না, খবরদার, এখন দৌড়ে দৌড়ে খেলো না। নিচে একটা বাচ্চা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।’

আকাশ থেকে অনেক নিচে ওই গ্রামটারই অন্য এক সবুজ মাঠের প্রান্তে তখন একটা বাচ্চা খেলছিল। হঠাত্ খেলা থামিয়ে সে তার বাবাকে আকাশের দিকে হাত দিয়ে তাক করে বলল, ‘বাবা, আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো?’

বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখল না। তখন বাচ্চাটা দূর আকাশে হাত উঁচিয়ে বলল, ‘ওই যে দেখো বাবা, মেঘটা একটা সত্যিকারের ভালুকছানা। কেমন দৌড়ে দৌড়ে খেলছে।’

বাবা তাকিয়ে দেখে বলল, আরে তাই তো। কী অবাক কাণ্ড। এটা তো একটা সত্যিকারের ভালুকছানা।

মূল কথা: আকাশে মেঘের মধ্যে নানা ধরণের প্রাণী ঘাপটি মেরে বসবাস করে। কিন্তু তাদের দিকে কেউ হা করে তাকিয়ে থাকলে তারা খুব লজ্জা পায়। তখন তারা আর আকাশে দৌড়াদৌড়ি করে খেলে না। ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে খেলে। তাই তোমরা কেউ অনেকক্ষণ আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকো না।    

অলংকরণ: জুনায়েদ