ভূত আছে কি নেই, সেটি যতই বিতর্কিত বিষয় হোক না কেন, গল্পের বই, মুভি—সবকিছুতেই ভূতের দল জায়গা করে নিয়েছে। এমন অবস্থায় ভূত নিয়ে উৎসব হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশে দেশে এখন ভূত উৎসব হয়। সেখানে ভূত সেজে হইচই করে মানুষ। অনেকটা ধর্মীয় নিয়ম থেকে ভূত উৎসবের শুরু। মৃত বন্ধু, আত্মীয়স্বজন আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের আত্মার শান্তি প্রার্থনায় প্রচলন ঘটে এসবের। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ভূত উৎসবের খবর জানা যাক তাহলে।
দিয়া দে লস মুয়েরতস
স্প্যানিশ এই কথার মানে ‘মৃত আত্মাদের দিন’। আত্মাদের শান্তি প্রার্থনায় মেক্সিকোতে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর আয়োজন করা হয় এ উৎসব। ১ নভেম্বর ‘অল সেইন্টস ডে’ আর ২ নভেম্বর ‘অল সোলস ডে’ উদ্যাপনের মাধ্যমে শেষ হয় এটি। রোমান ক্যাথলিক, প্রাচীন মায়ান ও অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষ বিশ্বাস করত, মৃত মানুষের ওপারের জীবন শান্তিময় করতে এপারের মানুষের প্রার্থনার প্রয়োজন। অ্যাজটেক সভ্যতায় ‘মিকটেকাসিওয়াল্ট’ হলেন মৃতদের রানি। তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য মূলত এ উৎসবের প্রচলন। চিনির তৈরি চকলেটের খুলি আর গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সম্মান জানানো হয় তাকে। বিভিন্ন সমাধিসৌধে পালিত হয় উৎসবটি। উৎসবের দিনগুলোকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে মেক্সিকান সরকার। ইউনেসকোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে উৎসবটি।
হাংরি গোস্ট ফেস্টিভ্যাল
চীনের সংস্কৃতিতে এই উৎসব পরিচিত ‘ইউ লান’ বা ‘ঝং ইউন জি’ নামে। চৈনিক বর্ষপঞ্জিতে সপ্তম মাসটি গোস্ট মান্থ। আর এ মাসের ১৫তম দিনটি গোস্ট ডে বা ভূতের দিন হিসেবে প্রচলিত। তাদের বিশ্বাস, এই দিনে নরকের দরজা খুলে যায়। অপঘাতে মৃত মানুষের আত্মারা এ সময় ফিরে আসতে পারে ভেবে তাদের উদ্দেশে খাবার সাজিয়ে রাখে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা। তাদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনাও করে। মজার ব্যাপার হলো উৎসবে নাচ-গানের অনুষ্ঠানে প্রথম ৫০টি আসন রাখা হয় এসব আত্মার জন্য! তা ছাড়া ফানুস উড়িয়ে, পদ্ম ফুলের আকৃতির বাতি পানিতে ভাসিয়ে উদ্যাপিত হয় উৎসবটি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় এটি।
সাইয়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর যে হ্যালোইন উৎসব উদ্যাপিত হয়, তার রীতিটা এসেছে এই সাইয়ুন উৎসব থেকে। সামহাইয়ুন কিংবা অল হলোজ ইভ নামেও পরিচিত এটি। ইউরোপের আইরিশ, স্কটিশ কেল্টিকসহ বেশ কয়েকটি জাতির মানুষ এ উৎসব পালন করে। উৎসবের দিনটিতে অদ্ভুত সব ভুতুড়ে পোশাক পরে মানুষ। ভূতেরা যেন পিছু না নেয়, তার জন্যই মূলত অমন পোশাক পরা। ভূত সেজে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহারও নেয় তারা। রাতজুড়ে চলে হইহুল্লোড়।
বন
এই বন কিন্তু জঙ্গল নয়। এটি জাপানের ঐতিহ্যবাহী ভূত উৎসব, যা প্রতিবছর উদ্যাপিত হয়। লুনার বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাসটিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মৃত আত্মারা এপারের দুনিয়ায় আসে। তাদের স্বাগত জানানো হয় জাপানি ঐতিহ্যবাহী নাচ ‘বন অদোরি’ দিয়ে। ওপারের জীবনে আত্মারা যেন আবার ঠিকমতো ফিরে যায়, এ জন্য নদী কিংবা লেকের পানিতে পদ্ম ফুলের আকৃতির বাতি ভাসিয়ে দেয় তারা।
হ্যালোইন
এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, মার্কিনরা ফুর্তিবাজ হয় খুব। ভূত নিয়ে উৎসবে তাদের প্রার্থনা করার কিংবা ধর্মীয় ব্যাপারটা মুখ্য থাকে না। তাদের কাছে আনন্দটাই আসল। ভূত সেজে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার তুলে, ঘরবাড়ি সাজিয়ে এই উৎসব উদ্যাপিত হয় প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে।
গাইযাত্রা
নেপালীদের বিশ্বাস, গরু তাদের সাহায্যকারী দেবতা। মৃত ব্যক্তি কখনো ফিরে আসে না, তাই তাদের আত্মার শান্তির জন্য দেবতা গরুকে সন্তুষ্ট করতে নেপালে প্রতিবছর এ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। উৎসবে ১০-১২ বছরের একটি বালক গরুর বেশ ধরে, তাকে ঘিরে নাচ-গান ও খাবার পরিবেশন চলে।
ফামাদিহানা
মাদাগাস্কারের মানুষ মূলত এ উৎসব উদ্যাপন করে। মাদাগাসিরা মনে করে, পুরোপুরি শরীর মাটির সঙ্গে মিশে না গেলে ঠিকমতো স্বর্গে পৌঁছাতে পারে না আত্মা। আর তাই কঙ্কালটিকে নতুন কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে, এর সঙ্গে নেচে ও এদের খাবার পরিবেশন করে উৎসবটি উদ্যাপন করা হয়।
ভূতে বিশ্বাস থাকুক বা না থাকুক, এসব উৎসবে ঘুরতে যায় অনেক দর্শনার্থী। কে বলবে এসব উৎসবে ভূতরা যোগ দেয় না? কিংবা ভূতের দেশেও হয়তো মানুষ উৎসব হয়!