বাঘের জন্য সারা দিন

‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ সুরক্ষা করব’—স্লোগান নিয়ে দিনটি ছিল শুধুই বাঘের জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ১২ ফেব্রুয়ারি বসেছিল বাঘের মিলনমেলা। মাঠে বাঘ, স্টেজে বাঘ, মানুষের মুখ ও মুখোশে বাঘ। বাঘ ছিল শিশুদের কলম ও কালিতে, আঁকার খাতায়, বড়দের ক্যানভাসে, আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়। আর বিশাল এক বাঘরূপী বাস দাঁড়িয়ে ছিল চারুকলা অনুষদের মূল ফটকে।

বাঘ উত্সবে বিশাল এক বাঘরূপী বাস দাঁড়িয়ে ছিল চারুকলার মূল ফটকে
বাঘ উত্সবে বিশাল এক বাঘরূপী বাস দাঁড়িয়ে ছিল চারুকলার মূল ফটকে

ইউএসএইডের বাঘ রক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সচেতনতা বাড়াতে আয়োজিত হয় এ বাঘ উত্সব। বাংলাদেশ বন বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াইল্ডটিম উত্সবটি আয়োজন করে। সহযোগী হিসেবে ছিল কিশোর আলোও। ‘বাঘের জন্য সারা দিন’ শিরোনামে চারুকলার বকুলতলা সেজেছিল বর্ণিল সাজে। শুরুতে ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। ছোট্ট শিশুদের হাতে ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে উঠছিল কমলা কালো ডোরাকাটা বাঘের শরীর। চিত্রাঙ্কন শেষ হতে না হতেই শুরু হয় শিশুদের নাচ ও গানের আসর। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ‘বাঘের জন্য সারা দিন’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপরই শুরু হয় বাউল উত্সব।

চারুকলার অন্য পাশে ততক্ষণে দেশের নামকরা ১৫ জন চিত্রশিল্পী ইজেল আর রংতুলি নিয়ে সাজিয়ে ফেলেছেন তাঁদের নিজস্ব পৃথিবী। মাঠজুড়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে প্রমাণ সাইজের বাঘের প্রতিকৃতি। সবাই উত্সাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারুকলার এমাথা থেকে ওমাথা। সারিবদ্ধ স্টলগুলোতে ছিল মাটি দিয়ে বাঘ ও বাঘের মুখোশ তৈরির ব্যবস্থা, অরিগ্যামিসহ নানা কিছু। কিশোর আলোর স্টলে কিআর নতুন-পুরোনো সংখ্যা ও নানা সামগ্রী কিনতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

এত আয়োজনের মাঝে আলাদা করে নজর কেড়েছিল ‘টাইগার ক্যারাভ্যান’—বাঘের আদলে তৈরি একটি বাস। বাসটির ভেতরটা সাজানো হয়েছিল সুন্দরবনের আদলে। সেখানে বাঘ, হরিণ আর ম্যানগ্রোভ বনের এক ত্রিমাত্রিক আবহ তৈরি করা হয়েছিল, হঠাত্ করে মনে হয় সুন্দরবনেই বুঝি চলে এসেছি। শেষ বিকেলে শুরু হয় গানের উত্সব। জলের গান আর লালন ব্যান্ড মাঠভর্তি  মুগ্ধ শ্রোতাদের আলোড়িত করে।

উত্সবজুড়ে সবার মনে ছিল বাঘের জন্য অঢেল ভালোবাসা। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাই শপথ করে জীবন কখনোই বাঘের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না। একসময় বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই বাঘ ছিল। অথচ দেশে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ১০৬টি। বাঘ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে বাঘ সংরক্ষণ করা কঠিন। পরিস্থিতি এমনও হতে পারে যে, বাঘ না থাকলে বাঙালিদের বাঘের জাতি হিসেবে গর্ব করার আর কিছুই থাকবে না। তাই এখনই সময় এই প্রাণীটি রক্ষা করার। বাঘের এ মহাবিপন্ন সময়ে পাশে দাঁড়াতে হবে পুরো দেশের মানুষকে, এমনকি তোমাকেও।