প্রতিটি বই-ই নতুন কিছু শেখাবে

জামিলুর রেজা চৌধুরী

আমার মনে হয়, এত বড় জীবনে, জীবনের নানা বাঁকে কোনো না কোনো বই পড়ে মন আলোড়িত হয়। বিশেষ একটি বইয়ের নাম বলা কঠিন। আমি যখন খুব ছোট, সে সময় দুনিয়ার সব আজব কাণ্ড বইটি পড়েছিলাম। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের নানা রেকর্ড নিয়ে বইটি লেখা হয়েছিল। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতাম। আরেকটু বড় হওয়ার পর ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে ভালো লাগল। একধরনের কল্পনাশক্তি তৈরি হয়েছিল বইটি পড়ার সময়। রাক্ষস আসবে, খেয়ে ফেলবে—বই পড়তে পড়তে নিজে নিজে কল্পনা করতাম ঘটনাগুলো।

১০ বছর বয়সে পড়েছিলাম ১০০টি গোয়েন্দা গল্প। ঢাকার গোপীবাগের বাসার কাছে ব্রাদার্স ইউনিয়নের লাইব্রেরি ছিল, সেখান থেকে নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটী রায় গোয়েন্দা সিরিজের বই নিয়ে পড়া হতো। কিরীটী রায়কে নায়ক মনে হতো আমার কাছে। একেকটা ঘটনা সুচারুভাবে বিশ্লেষণ করতেন।

নবম কি দশম শ্রেণিতে পড়ি, সেই সময় পড়েছিলাম শ্রীকান্ত। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় স্যার ক্লাসে শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত উপন্যাসের কিছু অংশ পড়িয়েছিলেন। বাকিটা আমি নিজে থেকে পড়ি। ইন্দ্রনাথের সাহসিকতা, বহুরূপী শ্রীকান্তের সমুদ্রযাত্রা আমার কিশোর মনকে খুব আলোড়িত করেছিল।

আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা (বর্তমানের এসএসসি) শেষ হলো। ছুটির সময়টা আমি সকালে নাশতা করে বই পড়তে তখনকার গণগ্রন্থাগার, এখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারে আসতাম। সারা দিন বই পড়ে বিকেলে বাড়ি যেতাম। আমাদের বাড়িতেও বই পড়ার অভ্যাস ছিল। আমার বাবা আবিদ রেজা চৌধুরী প্রকৌশলী হলেও খুব বই পড়তেন। রিডার্স ডাইজেস্ট-এর নানা রকম মজার ঘটনা, জোকস তিনি মজা করে গল্প করতেন। বাবার কারণে সেগুলোও পড়া হতো।

কলেজে ওঠার পর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল পড়ে ভালো লেগেছিল।

এটা ঠিক, চার্লস ডিকেন্স, জুল ভার্নের বই আমার মনকে নাড়া দিয়েছিল। আবার সমারসেট মমের ছোটগল্পগুলো মন ছুঁয়ে যেত। তাঁদের সাহিত্যিক ভাবনা, লেখক ভাবনা বা লেখনীর ধরন আমাকে অনেক কিছু ভাবাত।

আজকাল অটোবায়োগ্রাফি, বায়োগ্রাফি পড়তে বেশ ভালো লাগে। আসলে বই পড়ার কোনো বাছবিচার থাকতে নেই। সবই পড়তে হবে, প্রতিটি বই-ই নতুন কিছু ভাবাবে, শেখাবে।

লেখক : প্রকৌশলী, গবেষক ও শিক্ষাবিদ

অনুলিখন : তৌহিদা শিরোপা