মার্ক টোয়েনের শহর

মার্ক টোয়েনের ছেলেবেলার বাড়ি
মার্ক টোয়েনের ছেলেবেলার বাড়ি

মিসিসিপি নদীর তীর ঘেঁষে মিজৌরি রাজ্যের ছোট্ট এক বন্দরনগরী হ্যানিবাল। নতুন একটা শহর হওয়ায় জনসংখ্যাও কম। ১৮৩৯ সালে ছোট্ট স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহোর্ন ক্লিমেন্স তাঁর পরিবারের সঙ্গে হ্যানিবালে বসবাস শুরু করেন। শৈশব, কৈশোর কাটে মিসিসিপি নদীর ছোট্ট এই শহরে। ১৮ বছর বয়সে স্যামুয়েল হ্যানিবাল ছেড়ে পাড়ি জমান অন্য রাজ্যে। কিন্তু হ্যানিবালের স্মৃতি তিনি ভোলেননি। শৈশব, কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত হ্যানিবালের কথা ফুটিয়ে তোলেন তাঁর ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অভ টম সয়ার’ ও ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ বইয়ে। মিজৌরির হ্যানিবালই বই দুটিতে বর্ণিত কল্পনার সেন্ট পিটার্সবার্গ। আর স্যামুয়েল ক্লিমেন্সই হলেন বিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েন। টোয়েনের বই দুটির মাধ্যমে ছোট্ট নগরী হ্যানিবাল পরিচিত হয়ে ওঠে বিশ্ববাসীর কাছে। 


তিনি বহুদিন আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও হ্যানিবালে মার্ক টোয়েন অমর। বিভিন্ন স্থাপনা ও আয়োজনের মাধ্যমে তিনি বেঁচে আছেন। 

টম-বেকি প্রতিযোগিতা

১৯৫৬ সালের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বেকি ও টম
১৯৫৬ সালের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বেকি ও টম

প্রতি চার বছরে একবার ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে হ্যানিবালে আয়োজন করা হয় টম-বেকি প্রতিযোগিতার। হ্যানিবালের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। প্রথমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে টম সয়ার ও মার্ক টোয়েন সম্পর্কিত ছোট্ট লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বাছাই হয়। এভাবে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল শেষ হলে ফাইনালে ৫ জন ছেলে ও ৫ জন মেয়ে টম ও বেকির সাজসজ্জায় তাদের ভূমিকায় অভিনয় করে। এভাবে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। 

১৯৫৬ সালে প্রথম এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আর সে বছর টম সয়ার ও বেকি থেচার নির্বাচিত হয় ক্রিস উইংকলার ও পারভা লু স্মিথ। কাকতালীয়ভাবে সে বছরই ডিজনিল্যান্ডে টম সয়্যার আইল্যান্ড স্থাপিত হয়। ওয়াল্ট ডিজনি টম-বেকি প্রতিযোগিতার কথা জানতে পেরে ক্রিস ও পারভাকে আমন্ত্রণ জানান টম সয়ার আইল্যান্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

ভক্তের কৃতজ্ঞতা

তখনকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আন্ডারউড ডেভিলড হ্যামের সভাপতি জর্জ সিবোল্ট একবার হ্যানিবালে গেলে মার্ক টোয়েনের বাড়িতে রাত যাপন করেন, যা বর্তমানে মার্ক টোয়েন জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মার্ক টোয়েনের শহরের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে তিনি প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাবেন। 
হ্যানিবালের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচনা ঘটেছিল একজন ব্যক্তি মার্ক টোয়েনের চরম ভক্ত ছিলেন বলে। ১৯৭৭ সালে আন্ডারউডের শাখা প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটির বিজ্ঞাপনেও বেশ কিছুদিন দেখা যায় টম সয়ার ও বেকি থেচারের ছবি।

আন্ডারউড ডেভিলস হ্যাম এর বিজ্ঞাপন
আন্ডারউড ডেভিলস হ্যাম এর বিজ্ঞাপন



হ্যানিবালের দ্বিশততমবর্ষীয় উৎসব

২০১৯ সালটা হ্যানিবালের জন্য বিশেষ একটা বছর ছিল। ২০১৯ সালে শহরটি ২০০ বছরে পদার্পণ করে। হ্যানিবালের দ্বিশততমবর্ষীয় উৎসবে টম সয়ার, হাক ফিন, বেকি, মার্ক টোয়েন নিয়ে আয়োজনগুলো ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য ও পৃথিবীর প্রায় ৬০টি দেশ থেকে উৎসবে এসেছিলেন বহু দর্শনার্থী। তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল মার্ক টোয়েন গুহা ভ্রমণ, যাতে রয়েছে মার্ক টোয়েনের স্বাক্ষর, টম-বেকি ফ্যাশন শো, মার্ক টোয়েন জাদুঘর পরিদর্শন, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়ার’ ও ‘অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’–এর ড্রামা শো। ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হ্যানিবালে শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল টম, বেকি, হাক ফিনের ছবিসংবলিত কার্ডগুলো।
‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়ার’ ও ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ কিশোর উপন্যাস দুটি মার্ক টোয়েনের অমর সৃষ্টি। ধারণা করা হয়, টম এবং হাক ফিন মার্ক টোয়েনেরই কিশোর রূপ। তিনি তাঁর উপন্যাসে যেমন হ্যানিবালকে নতুন এক পরিচয় দিয়েছেন, হ্যানিবালও তেমন তাদের শহরে বিভিন্নভাবে জীবিত রেখেছে মার্ক টোয়েনকে।

হ্যানিবল বর্তমানে সাহিত্যপ্রেমী পর্যটকদের ‘বাকেট লিস্ট’–এর একটি স্থান।

সূত্র : হ্যানিবাল বাইসেন্টেনিয়াল