লিসাদের পরিবার যেভাবে বিখ্যাত হয়ে গেল

অলংকরণ : মাহাতাব রশীদ
অলংকরণ : মাহাতাব রশীদ

লিসাদের বাসায় এত দিন কোনো মাইক্রোওয়েভ ওভেন ছিল না। বাসাটা খুব ছোট আর জিনিসপত্রে ঠাসা। একটা মাইক্রোওয়েভ কিনলে সেটা বসানোর জায়গা নেই।

তবু ঈদের বোনাসের টাকা বাঁচিয়ে এবার অবশেষে একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনেই ফেলা হলো। লিসার বাবা মনসুর আহমেদ ঠিক করেছিলেন খুব সাদামাটা ধরনের সস্তা একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনবেন, যেটা দিয়ে শুধু খাবার গরম করা যায়। কিন্তু ইলেকট্রনিকসের বিশাল শোরুমে এত চোখধাঁধানো মাইক্রোওয়েভ ওভেন থরে থরে সাজানো যে লিসারা তিনজনই মুগ্ধ হয়ে সেগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। তা ছাড়া ফিটফাট পোশাকের সেলসম্যান ছেলেটাও চৌকস কথার জাদুতে মনসুর আহমেদকে বেঁধে ফেলল। ফলে লিসারা যখন দোকানের সামনে থেকে বাসার উদ্দেশে স্কুটারে চড়ল, তখন তাদের কোলে নামকরা ব্র্যান্ডের বেশ দামি একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্যাকেট।   

বাসায় ফিরে প্যাকেট খুলে ওভেনটা বের করা হলো। কিন্তু কোথায় সেটা বসানো হবে? ছোট্ট রান্নাঘরে একটা বাড়তি কাঁটাচামচ রাখারই জায়গা নেই। লিসার মা বললেন, শোয়ার ঘরে ওয়ার্ডরোবের ওপরে রাখা হোক। কিন্তু মনসুর আহমেদের তাতে ঘোর আপত্তি। শোয়ার ঘরে রান্নার যন্ত্র? কাভি নেহি। অনেক ভেবেচিন্তে বসার ঘরে দরজার পাশে জুতার র্যাকটাকে বেছে নেওয়া হলো। আরেকটা সুবিধা হলো ওই র্যাকের ওপরই সুইচবোর্ড।

লিসার বাবা অতি সাবধানে ওভেনটা তুলে জুতার র্যাকের ওপর বসালেন। একে ওভেনটা বেশ ভারী, তার ওপর র্যাকটা নড়বড়ে আর সেটার একটা পাল্লা ভাঙা, ফলে লিসার বাবার আশঙ্কা হলো জুতার র্যাকটা না ভেঙে পড়ে যায়।

ভেঙে পড়ে গেল না। র্যাকের ওপর আঁটসাঁট হয়ে বসে গেল ওভেনটা।

ওভেন বসানো হলে লিসারা তিনজনই সেটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল বেশ কিছুক্ষণ। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কুচকুচে কালো রঙের যন্ত্রটার দিকে।

দোকানের সেলসম্যান ছেলেটার বক্তব্য অনুযায়ী এটাকে বলে স্মার্ট ওভেন। অন্য ওভেনগুলোর চেয়ে এটা আলাদা, একই সঙ্গে অনেক কাজের কাজি। যন্ত্রটার সারা গায়ে বিদঘুটে অনেকগুলো বাটন, তাতে নানা রকম কথা লেখা। সেলসম্যান বলেছে, শুধু খাবার গরম করা নয়, পৃথিবীর যেকোনো খাবার রান্না করা যাবে এতে—চিকেন গ্রিল, কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে কেক পেস্ট্রি পর্যন্ত সবকিছু।

লিসার বাবা বললেন, এত দিনে তাদের বাসায় একটা সত্যিকার কাজের যন্ত্র আনা হয়েছে। আগে কেন আনা হয়নি, ভেবে আফসোস হচ্ছে তার। এবার তাদের ছোট্ট বাসাটা একেবারে বদলে যাবে। নানা রকম শৌখিন খাবারদাবার রান্না হতে থাকবে। যন্ত্রের অভাবে কোনো ভালোমন্দ খাবারই তো তাদের বাসায় এত দিন রান্না হয়নি। শুধু মাছ-মাংস-ডাল-ভাত। মাছ-মাংস-ডাল-ভাত। কখনো-সখনো বাসায় বিশেষ কেউ বেড়াতে এলে চৌকির তলা থেকে ধুলোমাখা প্রেশার কুকারটা বের করে তাতে বিরিয়ানি চড়ানো হয়। বিরিয়ানিই এই বাসার একমাত্র শৌখিন রান্না।

তবে লিসার বাবার এই আশাবাদ বাস্তবায়িত হলো না। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা খাবার বের করে গরম করা ছাড়া ওভেনটা আর কোনো কাজে ব্যবহার হয় না। লিসাদের বাসায় কারোরই সময় নেই। লিসার মা সকালে উঠেই অফিসের উদ্দেশে ছোটেন। লিসার বাবা আরেকটু বেলা করে বের হন বটে, কিন্তু ফেরেন রাত করে। ফলে অজস্র বিদঘুটে বাটন নিয়ে বসে থাকা ওভেনটার মাত্র দুটো বাটনেই চাপ পড়ে—‘স্টার্ট’ এবং ‘স্টপ’। আর তা ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া আর বাসায় ঢোকার মুহূর্তে র্যাক থেকে জুতা বের করা বা র্যাকে জুতা রাখার সময় লিসার বাবা শুরুর দিকে যেভাবে সমীহ ভরা চোখে কিছুক্ষণ ওভেনটার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, এখন আর সেভাবে তাকান না। লিসার মনে হলো, বাবা বোধ হয় ওভেনের উপস্থিতিই ভুলে গেছেন।

কিন্তু একদিন ব্যতিক্রম ঘটল। ছুটির আগের রাতে সোফায় বসে টেবিলে পা তুলে দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে লিসার বাবার চোখ পড়ল ওভেনটার দিকে। কালো রঙের নিরীহ ওভেনটা কেমন তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। লিসার বাবা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন এবং ঘোষণা দিলেন, ওভেনটায় পরদিনই তিনি চকলেট কেক বানাবেন। লিসা টের পেল বাবার এই অনুপ্রেরণার উত্স টিভির পর্দা। ওই মুহূর্তে টিভিতে রান্নার একটা অনুষ্ঠান চলছিল আর তাতে চকলেট কেক রান্না করা শেখানো হচ্ছিল। একজন পুরুষ শেফ বলছিলেন, চকলেট কেক বানাতে বেকিং ওভেনের দরকার নেই। যাঁদের বাসায় একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে, তাঁরাই পারবেন মাত্র পাঁচ মিনিটে সুস্বাদু একটা কেক বানিয়ে নিতে।

পরদিন সাপ্তাহিক ছুটি। লিসা আর লিসার মা গেল কেকের জিনিসপত্র কিনতে। তালিকা বানিয়ে দিয়েছেন লিসার বাবা নিজে। ইউটিউব ঘেঁটে কেকের উপকরণের তালিকা তৈরি করা হয়েছে: বেকিং পাউডার, ময়দা, আইসিং সুগার, কোকোয়া পাউডার, চকলেট স্লাইস ইত্যাদি নানান উপকরণ।

লিসার খুব উত্সাহ লাগছে। এই প্রথম তাদের বাসায় কেক তৈরি হচ্ছে। কেক যে বাসায় তৈরি করা যায়, এটাই লিসার ধারণা ছিল না। আর তা ছাড়া তাদের বাসায় এই প্রথম এমন একটা কিছু রান্না হচ্ছে, যার পুরোটা বাবার নিয়ন্ত্রণে। মা এখানে শুধুই দর্শক।

রাতের বেলা বাবা আয়োজন করে কেক বানাতে বসলেন। বসার ঘরে সোফার সামনে সেন্টার টেবিলটায় সবকিছু রাখা হলো। সোফায় বসে বাবা নানা রকম নির্দেশ দিচ্ছেন আর দুপাশে দাঁড়ানো লিসা ও তার মা এটা-সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। সেন্টার টেবিলের এক প্রান্তে একটা ল্যাপটপ রাখা। সেটায় ইউটিউবের রান্নার চ্যানেল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এক চায়নিজ মহিলা হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন কীভাবে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে অনায়াসে চকলেট কেক বানিয়ে নেওয়া যায়। মহিলা যা-যা করতে বলছেন, তাই তাই করা হচ্ছে।

বাবা কাজে নেমে শুরুতেই ঘোষণা দিলেন, কেক বানানো যে এমন ‘পিস অফ কেক’ বা পানির মতো সোজা ব্যাপার, এটা তাঁর আগে জানা ছিল না। এখন থেকে নিয়মিতই এ বাসায় কেক বানানো হবে। এমনকি লিসার আগামী জন্মদিনের কেকটাও বানানো হবে বাসায়।

ঘোষণা দিয়ে দুহাতের তালু আচ্ছামতো ঘষে নিয়ে কাজে নামলেন লিসার বাবা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর ভ্রু কুঁচকে গেল। চীনা মহিলার মতো করেই সবকিছু মেশানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুই চীনা মহিলার মতো হচ্ছে না। যেমন ডিম ফেটে তাতে চিনিগুঁড়া মিশিয়ে চীনা মহিলা যখন ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার দিয়ে সেটা ব্লেন্ড করলেন, তখন সাদা রঙের একটা সুন্দর ক্রিমের মতো হলো। আর লিসার বাবা হাতে ধরা বাঁকানো শিকের ডিম ফেটানোর যন্ত্র দিয়ে ঘটঘট শব্দ তুলে একই কাজ করে গেলেও কিছুতেই সেটা সাদা ক্রিমের মতো হলো না। কেমন একটা হলদেটে চটচটে ক্বাথ হয়ে গেল। বাবা একবার লিসার দিকে আরেকবার লিসার মায়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিয়ে বললেন, ‘ময়দা!’ লিসা ময়দার প্যাকেট থেকে ময়দা ঢালল। লিসার বাবা বললেন, ‘বেকিং পাউডার!’ লিসার মা বেকিং পাউডার ঢেলে দিল। কোকোয়া পাউডারও মেশানো হলো চীনা মহিলার বাতলে দেওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে। আধা ঘণ্টা ধরে নানান কসরত করে অবশেষে গামলার মধ্যে একটা ডাউ বা দলাপাকানো জিনিস দাঁড়াল বটে, কিন্তু সেটার সঙ্গে ইউটিউব চ্যানেলের চীনা মহিলার দাঁড় করানো ডাউয়ের কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া গেল না। জিনিসটা কেমন কালচে আঠার দলার মতো হলো দেখতে।

লিসার বাবা বললেন, ‘দেখাটা জরুরি না। খেতে ভালো হলেই হলো।’

এবার বেকিংয়ের পালা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ঢুকিয়ে পাঁচ মিনিট রাখতে হবে। চীনা মহিলার নির্দেশ। লিসার বাবা একটা সিরামিকের গামলায় যত্নে ডাউ তুলে সেটা ওভেনের ভেতরে বসালেন। বাটনে পাঁচ মিনিট টাইমার সেট করে ডালা বন্ধ করা হলো। লিসারা তিনজনই ওভেনটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে উত্সুক চোখে তাকিয়ে থাকল।

ওভেনের ডালা স্বচ্ছ কাচের। ভেতরটা দেখা যায়। ভেতরে সিরামিকের গামলাটা স্লো মোশনে ঘুরছে। এক মিনিট পেরিয়ে গেল। দুই মিনিট। আড়াই মিনিটের মাথায় ডাউ বা দলাটা কেমন যেন একটু নড়ে উঠল। সেটার পিঠটা সামান্য ফুলে উঠল। দেখতে দেখতে ডাউয়ের বিভিন্ন অংশ একটু একটু ফুলে উঠছে। একেকটা অংশ একেকভাবে ফুলছে। তাতে বিদঘুটে একটা আকার দাঁড়াচ্ছে দলাটার। লিসার মনে হলো একটা স্থিতিস্থাপক প্রাণী যেন সিরামিকের গামলার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সে আড়চোখে একবার বাবার দিকে তাকাল। বাবার চোখেও চিন্তার ভ্রুকুটি।

পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল। ওভেন বন্ধ হয়ে ইন্ডিকেটর টি-টি-টি-টি শব্দ করছে। লিসার বাবা ওভেনের হাতলে হাত রাখলেন। লিসার কেমন যেন ইচ্ছা করল বাবাকে বলে ডালাটা না খুলতে। খুললেই ভেতর থেকে কোনো একটা বিপন্ন প্রাণীর জমাট বাঁধা আর্তচিত্কার যেন ছুটে বেরিয়ে আসবে।

বাবা ডালা খুলে তোয়ালে দিয়ে সিরামিকের গরম গামলাটা ধরলেন। সেটাকে বের করে এনে সেন্টার টেবিলটায় রাখা হলো। তারা তিনজনই নিচু সেন্টার টেবিলটাকে ঘিরে দাঁড়াল।

সিরামিকের গামলায় যে জিনিসটা দেখা যাচ্ছে, সেটাকে কোনোভাবেই কেক বলার কোনো উপায় নেই। চেহারাগতভাবে পৃথিবীতে কেকের সঙ্গেই সেটার সবচেয়ে অমিল। বলতে কি পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গেই সেটার কোনো মিল নেই। এমন কিম্ভূতকিমাকার জিনিস এর আগে লিসা দেখেনি। সিরামিকের বাটিটার পাশেই রাখা ল্যাপটপে ‘পজ’ হয়ে থাকা চীনা মহিলাটাও যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন জিনিসটার দিকে।

‘রান্নাঘর থেকে একটা নাইফ নিয়ে আয়,’ বললেন বাবা।

বাবার কথায় লিসা প্রথম টের পেল বাসার কেউই অনেকক্ষণ ধরে কোনো কথা বলেনি।

জিনিসটা দেখতে যত বিদঘুটেই হোক, সেটাকে কেকের মতোই নাইফ দিয়ে যত্ন করে কেটে টুকরো টুকরো করা হলো। দুই আঙুলে বাবাই প্রথম একটা টুকরো তুলে নিলেন। টুপ করে সেটা মুখে পুরে চিবাতে লাগলেন। লিসা আর তার মা উত্সুক চোখে তাকিয়ে থাকল। বোঝার চেষ্টা করল পরিস্থিতি। কিন্তু মনসুর সাহেবকে দেখে কিছু বোঝা গেল না। কেক মুখে পুরে তিনি স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকলেন তো বসেই থাকলেন।

অধৈর্য লিসা আর তার মা একটা করে টুকরো তুলে নিয়ে মুখে পুরল। লিসার মনে হলো...কী মনে হলো কীভাবে সে বোঝাবে! পৃথিবীর কোনো ভাষায় এটা বর্ণনা দেওয়া সম্ভব না। জিনিসটা খেতে খারাপ হয়েছে বলা যাবে না। আবার ভালো হয়েছেও বলা যাবে না। কেকটা না মিষ্টি, না টক, না ঝাল। চেনা কোনো স্বাদের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। লিসার মনে হলো অনেক লোক যেন তার মুখের ভেতরে হৈ-হল্লা করছে। কেমন শোরগোলের মতো। কথাগুলো শোনা যাচ্ছে না, তবে সেগুলোর স্বাদ যেন পাওয়া যাচ্ছে। পৃথিবীতে শব্দের যদি কোনো স্বাদ থাকে, তাহলে সেটা হয়তো এ রকম হতেও পারে।

লিসারা নিঃশব্দে পুরো কেকটা চেটেপুটে খেয়ে ফেলল। কেউ এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলল না।

পুরো পরিবার একটা বড় বিছানায় একসঙ্গে ঘুমায়। আজও তারা একসঙ্গে ঘুমাল। ঘুমের মধ্যে তারা তিনজনই দুঃস্বপ্ন দেখল। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। একটার পর একটা। আর সেগুলো এত ভয়াবহ যে বলেও বোঝানো যাবে না, লিখেও প্রকাশ করা যাবে না।

সকালে উঠে তিনজনই দেখল, তাদের মাথার চুলগুলো সব খাড়া খাড়া হয়ে গেছে। কিছুতেই নামানো যাচ্ছে না।

লিসারা ঠিক করল, আর কোনো দিনই তারা কেক বানানোর চেষ্টা করবে না।

কিন্তু পনেরো দিন পর আবার কেক বানানো হলো। এবারও সেটা আগের মতোই দেখতে হলো। এবারও চীনা মহিলা ল্যাপটপের ভেতর থেকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেন। আর এবারও দুঃস্বপ্ন দেখে লিসাদের সবার মাথার চুল খাড়া খাড়া হয়ে গেল।

এর পনেরো দিন পর রাত নয়টায় পুরো পরিবার যখন সোফায় বসে টিভিতে বানজি জাম্প দেখছে, তখন লিসার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ নেই, বুদ্ধিটা প্রথমে লিসার মাথাতেই এসেছিল। এই কেক বিক্রি করলে কেমন হয়? তারা বাজারে এমন একটা কেক ছাড়বে, যেটা খেলে দুঃস্বপ্ন দেখা যায়। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। গ্যারান্টিড। না হলে টাকা ফেরত।  

তিন মাসের মাথায় লিসাদের বাসার নিচতলায় একটা পেস্ট্রির দোকান চালু হলো। দোকানের নাম ‘নাইটমেয়ার পেস্ট্রি‘। লিসার বাবা-মা দোকান চালায়। স্কুল থেকে ফিরে লিসাও তাদের সাহায্য করতে নেমে পড়ে।

ছোট্ট অপরিসর দোকানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। জায়গা দেওয়া যায় না। ধীরে ধীরে দেখা গেল দোকানের সামনে অপেক্ষমাণ ক্রেতার লাইন দাঁড়িয়ে গেছে। একসময় লাইন এত লম্বা হয়ে গেল যে লিসাদের মহল্লা পেরিয়ে সেটা মেইন রোডে গিয়ে ঠেকল। ভিড় সামলাতে একসময় ট্রাফিক পুলিশকে নিযুক্ত করল পুলিশ বিভাগ।

লিসার ধারণাই ছিল না পৃথিবীতে এত মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। এখন সে রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝেই খাড়া চুলের লোকজন দেখতে পায়।