এ কেমন ছুটি?

অলংকরণ : নাইমুর রহমান
অলংকরণ : নাইমুর রহমান

কিছুদিন আগে আমরা বলতাম ‘ছুটি কবে দেবে!’, ‘কী রকম স্কুলরে বাবা, ছুটিই দেয় না!’ আর এখন? এমনই ছুটি পেয়েছি যে মনে হচ্ছে কবে শেষ হবে! তবে পরিস্থিতি যেমনই হোক, জীবন তো আর থেমে থাকে না।
তাই আমরা সম্মুখীন হলাম এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার—অনলাইন ক্লাস। কখনো কি ভেবেছিলাম চোখের সামনে স্যার নেই, তবু ক্লাস হচ্ছে! পুরো পৃথিবীই অনলাইনে। পয়লা বৈশাখ অনলাইনেই পালন করলাম। বাবা কবিতা আবৃত্তি করলেন। ঈদও এবার পালন করলাম অনলাইনেই! প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে, তারপর আপনজনদের সঙ্গে আড্ডা দিলাম সারা দিন। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। তবে লকডাউনটা একেবারে বেকার যাচ্ছে না।
আঁকাআঁকির হাতটাকে একটু ঝালিয়ে নিলাম। মায়ের কাছে রান্না শিখছি। ডিম ভাজা, রুটি ভাজা শিখে ফেলেছি। এখন টার্গেট খিচুড়ি রাঁধা। মা বলেছে শিখিয়ে দেবে। পছন্দের মুভিগুলো দেখছি। সবচেয়ে মজা পেলাম ‘ছিছোড়ে’ দেখে। কিন্তু খুব দুঃখের একটা অভিজ্ঞতাও হলো। এই ছবির অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত কিছুদিন আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেলেন। খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন। আমার খুব প্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি।
যাহোক, জাফর ইকবাল স্যারের কয়েকটি বিখ্যাত বইও পড়েছি এর মধ্যে। খুবই আনন্দ পেয়েছি তাঁর বই পড়ে।
স্যার কীভাবে এত সুন্দর করে লেখেন! অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আনিয়ে নিয়েছি স্টিফেন হকিংয়ের মাই ব্রিফ হিস্ট্রি আর বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা। এর আগেই পড়ে ফেলেছি বাবার কেনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বাবা বারবার বলেছিলেন সেটা পড়তে। কিন্তু স্কুলের পড়া আর হোমওয়ার্কের জন্য সময়ই পাচ্ছিলাম না। এই করোনা সেই সুযোগ করে দিল। এই বইটা পড়া আমার এক দারুণ অভিজ্ঞতা। কী অসাধারণ জীবন ছিল বঙ্গবন্ধুর! কেউ না পড়লে তা বুঝতেই পারবে না। আবুল বাসার অনূদিত মাই ব্রিফ হিস্ট্রি পড়ছি এখন। দারুণ লাগছে। শেষ হলেই ধরব কারাগারের রোজনামচা।
তবে এই করোনায় দুঃখের অভিজ্ঞতাও কম নয়। প্রতিদিন টেলিভিশনে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে একটুও ভালো লাগে না। স্কুলের বন্ধুদের খুব মিস করছি। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে না পারা আরও কষ্টের। সারা দিন বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। আমি মায়ের মোবাইল নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও এডিটিং শিখছি। এ জন্য মা একটু বকাবকিও করে। আমার মনে হচ্ছে করোনা না এলে এ রকম অভিজ্ঞতা নেওয়ার আমার সুযোগ হতো না।

লেখক : শিক্ষার্থী, সপ্তম শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা