খেলাধুলা ও শিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্মাননার লিগ আইভি লিগ

একটা সময় বলা হতো, ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’। সে কথা আজকাল কেমন যেন একটুখানি সেকেলে মনে হয়। তাই একটু সংশোধন করে বলা হয়, ‘দ্য অ্যাপ্লিকেশন অব নলেজ ইজ পাওয়ার’। আসলেই তাই। আজ আধুনিক বিশ্বের বড় বড় শক্তির আধার হলো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আজকের শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে এ দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এতখানি এগিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল শক্তি কিন্তু তাদের একেকটি সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এতক্ষণে হয়তো একটুখানি ভাবনা আপনার আপন মনের জগতে জেগে উঠেছে। সেটাই তো স্বাভাবিক। হয়তো আপনি ভাবছেন তাহলে কেমন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিল। অন্তত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্মেষে। তার মূলেও রয়েছে এক গবেষণার ঐকতান। একতা, ভালোবাসা, বিশ্বাস। আজ তাহলে সেটা নিয়ে একটুখানি গল্প করা যেতে পারে।

খেলাধুলা ও শিক্ষাসংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ঐকতানের সর্বোচ্চ উদাহরণ হলো আইভি লিগ। আইভি লিগের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ১. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ২. ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩. প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ৪. ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ৫. কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৬. কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ৭. ডার্টমাউথ কলেজ, ৮. ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়।

আইভি লিগ অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রচলন হয় খেলাধুলাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বোঝানোর জন্য, যারা মূলত আইভি লিগ অ্যাথলেটিক কনফারেন্স আয়োজন করে। খেলাধুলার মানের দিক থেকে আইভি লিগ এতটায় উচ্চতায় যে কিছু কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আইভি লিগের দলগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রতিযোগিতা হয়। তবে এখনকার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আইভি লিগ মানেই অত্যন্ত সম্মানজনক একটি লিগ এবং বাছাইকৃত সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য ‘আইভি প্লাস’ টার্ম দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বোঝানো হয়। আইভি প্লাসের অন্তর্ভুক্ত হলেও শেষ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় মূল আইভি লিগের অন্তর্ভুক্ত না। যে নামই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে সারা বিশ্বের মেধাবীদের মিলনমেলায়। বাংলাদেশের দামাল ছেলেমেয়েরাও এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছেন।

আইভি লিগের কথা বললে প্রথমে চলে আসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। হার্ভার্ডের সুনাম রয়েছে প্রায় নক্ষত্রের সমান। সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানকার ল্যাবগুলোতে। ক্লাসরুমে পেতে পারেন বিশ্ববিখ্যাত স্কলার এবং নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের। বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সম্পত্তি ও মূলধনের দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬০ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছে। সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ সম্মাননা পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১২৪ জন। বারাক ওবামা, মার্ক জাকারবার্গ, ন্যাটালি পোর্টম্যান, আল গোর, মিট রমনি, বিল গেটস, হেনরি কিসিঞ্জার, মাইকেল ব্লুমবার্গ এবং টি এস ইলিয়ট এর দীর্ঘ তালিকার বিখ্যাত অ্যালামনাই রয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের।

আইভি লিগের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়েই সবচেয়ে কম টিউশন ফি এবং গ্র্যাজুয়েটরা সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং ও বৈশ্বিক বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থানের যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাল্লা দেয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শতকরা ৬.৪ আবেদন গৃহীত হয়। ১৭৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক শাসনামলের চিহ্ন বহন করে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ জন নোবেল পেয়েছেন এবং ৭ জন পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা এখান থেকে তাঁদের পড়ালেখা শেষ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্রিন্সটন গ্র্যাজুয়েট।

আইভি লিগের সদস্যদের মধ্যে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে সুখী মনে করা হয়। হার্ভার্ড ও প্রিন্সটনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায়ই শীর্ষ অবস্থানে পাওয়া যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি চমৎকার তথ্য হলো, এখানে প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক রয়েছে। গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রায় ২০ বিলিয়নের ইউএস ডলার আর্থিক অনুদান রয়েছে। ১৭০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয়। মেরিল স্ট্রিট, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, জর্জ ডব্লিউ বুশ, হিলারি ক্লিনটনের মতো বিখ্যাত অ্যালামনাই রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রায় ৩৫ জন নোবেল পুরস্কার জিতেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়েল থেকে গ্র্যাজুয়েট করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেল জিতেছেন, তিনিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

আইভি লিগের সর্বোচ্চ তিনের পরেই ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার আগে ১৭৪০ সালে এই ঔপনিবেশিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার অন্যতম রূপক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সময়ই পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গুলিয়ে যায়, কিন্তু এর মিল একেবারেই নেই বললেই চলে।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়ারটন স্কুল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী বিজনেস স্কুল। এ ছাড়া আরও অনেক গ্র্যাজুয়েট ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামও ন্যাশনাল র‍্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। স্পেস এক্স ও টেসলার মতো বিখ্যাত কোম্পানির সিইও ইলন মাস্ক এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিখ্যাত ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট এখান থেকে পড়ালেখা করেছেন। এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৯ জন নোবেল জয় করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন।

আইভি লিগের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিশালী দিক হলো এর বৈচিত্র্য। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমৃদ্ধ ইথাকা শহর এবং সৌন্দর্যময় ক্যাম্পাস এই বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে আইভি লিগের সবচেয়ে জমকালো ক্যাম্পাস। ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৫০ জন নোবেল বিজয়ীর কোনো না কোনোভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতে বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি রতন টাটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উল্লেখযোগ্য অ্যালামনাই।

একাডেমিক র‍্যাঙ্কিংয়ের দিকে শীর্ষ অবস্থানে থাকা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিউইয়র্ক সিটিতে হওয়ার জন্য অনেক শিক্ষার্থী বেশি পছন্দ করে থাকেন। তা ছাড়া যাঁরা একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাস ও একই সঙ্গে ব্যস্ত শহরের স্বাদ নিতে চান, এমন শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে থাকে। ১৯০১ সাল থেকে যখন নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়, তখন থেকে এ পর্যন্ত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। আর এই সংখ্যা নিয়ে নোবেল জেতার দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান দ্বিতীয়। আরও একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মাননা হলো পুলিৎজার, যা সাংবাদিক নোবেল হিসেবে পরিচিত। এই পুলিৎজার পুরস্কারের প্রশাসনিক সব কাজ করে থাকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কলাম্বিয়াতে মেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ ছিল না।

বৈচিত্র্য, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং একাডেমিক দিক বিবেচনায় আনলে, প্রথম ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই ডার্থমাউথ কলেজের অবস্থান। শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ সময় কাটানোর জন্য হ্যানোভার শহর হয়তোবা অনেকেরই পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকবে না, কিন্তু গ্রিক নান্দনিক সৌন্দর্য ও ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্যতার দিক থেকে নিঃসন্দেহে মনোমুগ্ধকর। এটা আইভি লিগের সবচেয়ে ছোট কলেজ, যেখানে স্নাতক পর্যায়ে চার হাজার এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারপরও কলেজটির পাঠ্যক্রমের ব্যাপকতা নিয়ে তালিকায় থাকা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গর্ব করার মতো। এ ছাড়া অনেক শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও এই কলেজে শিল্পকলাচর্চার সুযোগ অনেক বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন নোবেল জিতেছেন।

আইভি লিগের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে করা হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথলেটরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক ভালোবাসেন। হ্যারি পটারখ্যাত অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। আইভি লিগের তালিকার মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকেই সবচেয়ে উদার বা স্বাধীন মনে করা হয়।

পড়ালেখার দিক থেকেও কিছুটা নমনীয়তা রয়েছে, কারণ এখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের নিজেদের মতো করে পাঠ্যক্রম তৈরি করে নিতে পারেন। ভ্যান উইকেল গেটস নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, যা বছরে দুইবার খোলা হয়ে থাকে, নতুন ছাত্রদের বরণ করে নেওয়ার জন্য এবং যখন তাঁদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়।
লেখক: শহিদুল কাদের ও সিরাজুন মনিরা, অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আলাবামা, আমেরিকা।

References:
1. https://en.wikipedia.org/wiki/Ivy_League
2. https://ivyleague.com/
3. https://blog.prepscholar.com/ivy-league-rankings
4. https://www.thoughtco.com/ivy-league-schools-787004
5. https://www.collegexpress.com/articles-and-advice/admission/articles/find-college/whats-so-special-about-ivy-league/
6. https://www.mim-essay.com/list-of-ivy-league-universities/