প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষ আইটি কর্মী গড়ে তোলার গল্প

প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষ আইটি কর্মী গড়ে তোলার গল্প
ছবি: সংগৃহীত

ইয়াসিন সাহেব (ছদ্মনাম) যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন কয়েক বছর হলো। দেশে থাকাকালে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। দেশে বেশ ভালোই ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে এসে ইয়াসিন সাহেব বুঝতে শুরু করলেন এখানকার জীবনযাত্রা অনেক কঠিন, যা দেশ থেকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব। সব কাজই নিজের করতে হয়। মাস শেষে টাকা জমানো তো দূরের কথা, সংসার নিয়ে মাস চালানোই দায়। তবু দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। মাঝেমধ্যে ইয়াসিন সাহেবের অনেক আফসোস হয় এই ভেবে যে উনি কেন আইটি রিলেটেড ফিল্ডে না পড়ে জেনারেল একটি বিষয়ে মাস্টার্স করেছিলেন। এটা শুধু ইয়াসিন সাহেবের গল্প নয়, প্রবাসে থাকা এ রকম হাজারো ইয়াসিনের গল্প।

আফসানা আপা (ছদ্মনাম) কানাডা এসেছেন কয়েক মাস হলো। দেশে থাকতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ করেছেন। বিয়ে হয়ে যায় কানাডায় অবস্থানরত এক প্রবাসীর সঙ্গে। আফসানা আপার কিছু স্মার্ট উচ্চশিক্ষিত আত্মীয় বেশ আগে থেকেই কানাডা-আমেরিকাতে স্থায়ীভাবে থাকেন। তাঁদের পরামর্শে আফসানা ভিসার হওয়ার আগেই সফটওয়্যার টেস্টিং কোর্সে ভর্তি হন, সেখান থেকেই জানতে পারেন কানাডাতে কীভাবে চাকরি খুঁজতে হয়, কীভাবে নর্থ আমেরিকান সিভি তৈরি করতে হয় ইত্যাদি। আফসানা এখন চাকরি করছেন একটি কানাডিয়ান টেক স্টার্টআপ কোম্পানিতে (সফটওয়্যার ফার্ম)। দেশ থেকে মাস্টার্স পাস করে কানাডায় ট্যাক্সি চালানো স্বামীকেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন একটি অনলাইন আইটি ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানে।

জেনারেল বিষয়ে পড়াশোনা করেও যে একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে আইটি কোর্স করে সফটওয়্যার টেস্টার, বিজনেস এনালিস্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্টসহ বহু চাকরি করা যায়, তা বাংলাদেশের হয়তো অনেকেই জানা নেই। অথচ ভারতীয়, ফিলিপাইন নাগরিকতা আমেরিকা/কানাডাতে হয়ে যাচ্ছেন প্রযুক্তি কর্মী। দুঃখের বিষয়, বহু বাংলাদেশি ভাইবোন দেশ থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে প্রবাসে এসে বছরের পর বছর অড জব করে যাচ্ছেন। এটি মেধা, সময় এবং অর্থের অপচয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশের মানুষ বিদেশে পরিচিত হচ্ছেন ‘মেধাবী’ আইটি কর্মী হিসেবে আর আমরা পরিচিত হচ্ছি ‘অদক্ষ শ্রমিক’ হিসেবে, যদিও মেধা–মননে আমরা তাঁদের সমান বা এগিয়ে।

আমেরিকার নিউ জার্সিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেপ সলিউশন ২০ বছর যাবৎ প্রবাসীদের দক্ষ আইটি কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। আমেরিকায় বসবাসরত দুজন প্রতিষ্ঠিত ‘টেপ সলিউশন’ বরাবরই প্রচারবিমুখ প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক লাভক্ষতি কখনোই টেপের কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। টেপের প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম ও রুহেল ইসলাম নিজ অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি আইটি কমিউনিটি গড়ে তোলা টেপ সলিউশনের অন্যতম মুখ্য লক্ষ্য। বাংলাদেশিদের একটি দক্ষ আইটি কর্মী জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করাই তাদের স্বপ্ন। তাদের অনুরোধ, টেপের কাছে না হোক অন্য জায়গা থেকে হলেও একটি আইটি কোর্স করে বিদেশে আসুন, না হলে বছরের পর বছর আপনার অড জব করে যাওয়া লাগবে এবং আমরা জাতি হিসেবে বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবেই পরিচিত হব। শুধু কোর্সই নয়, আইটি জব পাওয়ার আগপর্যন্ত টেপ তাদের শিক্ষার্থীদের সব ধরনের প্রফেশনাল সাপোর্ট দিয়ে থাকে (সিভি, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি, নেটওয়ার্কিং প্রভৃতি)।

নজরুল ইসলাম ও রুহেল ইসলাম তাঁদের ২০ বছরের ট্রেনিং এবং তিন দশকের প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশিদের মতো মেধাবী, বুদ্ধিমান জাতি দ্বিতীয়টি আছে কি না সন্দেহ। আমাদের এই মেধাকে যথাযথ খাতে (আইটি) কাজে লাগাতে হবে, দেখিয়ে দিতে হবে আমরাও পারি। একটি ভালো মোবাইল কিংবা গাড়ি কিনে আপনি আপনার জীবনকে গুণগত পরিবর্তন করতে পারবেন না, জীবন পরিবর্তন এর জন্য দরকার দক্ষতা আর মনোবল। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশিরা নিজেদেরকে একটি সুযোগ দেওয়ার মতো যথেষ্ট সাহস রাখি।’