‘বঙ্গবন্ধু পিয়ারে ট্রুডো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র’ স্থাপন হচ্ছে

কৃষিক্ষেত্রে উন্নততর গবেষণা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীল খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাংলাদেশে ‘বঙ্গবন্ধু পিয়ারে ট্রুডো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র’ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি (জিআইএফএস) বঙ্গবন্ধু গবেষণা চেয়ার স্থাপনের ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ কানাডার মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, প্রযুক্তি বিনিময়, উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি পাবে।

অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নামে কানাডার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা চেয়ার স্থাপন এবং কানাডার সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাস্কাচুয়ানে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে হাইকমিশনার মিজানুর রহমান অংশ নেন এবং সে বৈঠকেই হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রটির নামকরণ বঙ্গবন্ধু-পিয়ারে ট্রুডো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র করার প্রস্তাব করা হয়।

সাস্কাচুয়ান প্রদেশের কৃষিমন্ত্রী ডেভিড মেরিট গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ভ্রমণ এসে জিআইএফএস এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কানাডা-বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলা করার কাজে এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কৃষি গবেষণাকেন্দ্রটি স্থাপনের বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনার জন্য ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ হাইকমিশন অটোয়া একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে। কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলভমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি), জিআইএফএস এবং বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ডেভিড হার্টম্যান জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর উক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ বঙ্গবন্ধু-পিয়ারে ট্রুডো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি উভয় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে কানাডা সরকারের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। কানাডার কৃষি উপমন্ত্রী ক্রিস ফোর্বস উভয় দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা এবং কৃষিজাত পণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফ, বিএআরসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এস এম বখতিয়ার, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. গিয়াসউদ্দিন মিয়া, জিআইএফএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফভেন ওয়েব, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বিভাগের পরিচালক স্টিভ ভিসচার, কানাডার আইডিআরসির পরিচালক সানটিয়াগো আলবা কোরাল বঙ্গবন্ধু পিয়ারে ট্রুডো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের প্রেক্ষাপট, কর্মকাণ্ড, গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

হাইকমিশনার মিজানুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ-কানাডার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, গবেষণা সহযোগিতা, জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালনে হাইকমিশনের কর্মকাণ্ডের সফলতার অংশ হিসেবে এই কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের নামকরণ এবং সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু গবেষণা চেয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্তের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

কৃষি গবেষণাকেন্দ্রটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষিক্ষেত্রে উন্নততর গবেষণা পরিচালনা, বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির বিনিময় এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কেন্দ্রটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং কানাডা থেকে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, এই প্রথম কানাডা সরকারের সরাসরি সহযোগিতা এবং অর্থায়নে এ ধরনের গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার ও দূতালয়প্রধান মিয়া মো. মাইনুল কবির আলোচনা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন। বিজ্ঞপ্তি