ভাস্কর্যে রাখি মনে গৌরবের স্বাধীনতা

ঢাবির অপরাজেয় বাংলা
ফাইল ছবি

অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা। সেটার ওপর ভিত্তি করেই আজকের উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে ছোট কিন্তু প্রচণ্ড সম্ভাবনার এই ছোট্ট দেশটির। আমার গৌরবের বাংলাদেশ। পরবর্তী প্রজন্ম শুধু বই পড়ে ইতিহাস জানবে, তা তো না। একটা জিনিস দেখে এবং পড়ে যত দ্রুত হৃদয়ে স্থান দেওয়া যায়, তার সঙ্গে শুধু পড়ে জানার তুলনা চলে না। স্বাধীনতা–পরবর্তী গড়া কিছু অসাধারণ ভাস্কর্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছি তাই আজকে। আমার পুত্র–কন্যাকেও দেখাতে নিয়ে গেছি কোনো কোনো ভাস্কর্য, যা দেশের ইতিহাসের হৃদয়ঙ্গম করার প্রতি তাদের আগ্রহ শতগুণ বাড়িয়েছে।

‘অপরাজেয় বাংলা’ সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ডিজাইনে তৈরি হয়েছে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সৈনিকদের স্মরণে, আলোকিত করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম না আমি, শুধু ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম এ ভাস্কর্য থেকে। তিনজন মানুষের প্রতিকৃতিসমৃদ্ধ এ ভাস্কর্য। মধ্যমণি একজন কৃষক, যাঁর কাঁধে রাইফেল আর হাতে গ্রেনেড (বলে দিচ্ছেন আমাদের শুধু নিবিড় দেশপ্রেম থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন অপরাজেয় যোদ্ধা, যিনি ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়), বাঁয়ে রয়েছেন একজন নারী, যাঁর হাতে রয়েছে তড়িৎ চিকিৎসার আয়োজনের বাক্স, ডানে রয়েছেন একজন ছাত্রের প্রতীকী মূর্তি, যাঁর হাতে রাইফেল, যিনি তারুণ্যের প্রতিনিধি। একটা ভাস্কর্য যত সহজে বলে দিতে পারে গৌরবের আর আত্মত্যাগের বিজয়গাঁথা, হাজার কথামালাও মনে তা গেঁথে দিতে পারে না।

জাহাঙ্গীরনগরের সংসপ্তক
ফাইল ছবি

ছোটবেলায় পড়েছি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা
‘সাবাশ বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভা পাচ্ছে নিতুন কুন্ডুর ডিজাইনে এই ভাস্কর্য সুকান্তের এ কবিতার আলোয় ‘সাবাশ বাংলাদেশ’। যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মহিমায় আলোকিত। কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে এ মহান সৃষ্টি দেখে দেখেই তো। আমাদের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ যাঁরা গড়ে গেছেন, নিজের জীবন দিয়ে, তাঁদের স্মরণে না থাকলে এ ভাস্কর্যগুলো, কীভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়াবে এ গৌরবের ইতিহাস?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সামনে আছে ভাস্কর্য শংসপ্তক। একজন যোদ্ধার হাত উড়ে গেছে, তারপরও কী দৃঢ় প্রত্যয়ে আরেক হাতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এগুলো যুদ্ধের কিছু খণ্ডচিত্র ধরে রাখা হয়েছে ভাস্কর্যের মাঝে।
টিএসসিতে আছে ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’। ’৭১–এর গণহত্যা, মানুষের প্রতি বর্বরতা, তারপর স্বাধীনতার মুহূর্ত। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে লাল–সবুজ শাড়িতে সেজে এদিন মিছিলে কাটানো হবে না এবার করোনাকালে। সবাই সুস্থ আর নিরাপদ থাকি পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে হাজার বছর গৌরবের এ ইতিহাস উল্লাসের সঙ্গে পালন করার আশায়।

‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না’।

*লেখক: ফারহানা আহমেদ লিসা, সানদিয়াগো, আমেরিকা