মুগ্ধতার জিনিস আছে, মুগ্ধ হওয়ার প্রাণ পর্যটক নেই

জার্মানি ইউরোপের অন্যতম ধনী একটি দেশ। নৈসর্গিক বর্ণিলতার পাশাপাশি উন্নত নাগরিক জীবনের জন্য ইউরোপের খ্যাতনামা দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত।

বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির দেশ, একই সঙ্গে বিশ্বে নানান খাতে ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রথম পর্বে লিখেছিলাম, জার্মানরা বিশ্ববাসীকে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে শুধু ক্ষান্ত হয়নি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ, উদারমনা সামাজিক ব্যবস্থা, নানামুখী নান্দনিকতার জন্য বৈশ্বিকভাবে নজির স্থাপন করেছে। এ দেশে চলতে–ফিরতে চোখে পড়ে ইউরোপের, এশিয়ার, আফ্রিকার নানান দেশের মানুষ। বলা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ উন্নত জীবনের জন্য জার্মানিতে নোঙর গেড়েছে। এটি তাদের জীবনতরির শেষ টার্গেট।

এ কয়েক দিনে বুঝতে বাকি নেই, করোনা এ দেশের পর্যটন খাতকে ওলট–পালট করে শুধু দেয়নি, এ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষের চোখে–মুখে আতঙ্ক, নেই কোনো আহ্লাদ, দিকে দিকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ, দৈনিক হাজার মানুষের করোনায় মৃত্যু, লাখ লাখ বেকারত্ব—করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেন জার্মানির স্বপ্নে আঘাত। নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে জার্মানির প্রতিটি শহরে হোটেলগুলোয় রাত্রিযাপনের জন্য গড়ে ৫০০ মিলিয়নের বেশি বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সে বুকিং নেই, শহরগুলো এখন পর্যটকশূন্য, আকৃষ্ট করার মতো অনেক কিছু থাকলেও থমকে দিয়েছে ছোট এক অণুজীব। রাজধানী বার্লিন থেকে ব্রেমেন—প্রায় সব শহর যুবক–যুবতীদের পদচারণে সরগরম হয়ে উঠত, তা এখন স্বপ্ন।

ব্রান্ডেনবুর্গের তোরণ, বার্লিনের ‘জাদুঘর দ্বীপ’, নানান মিউজিয়াম, শিল্পকলার নিদর্শনগুলো আছে, শুধু নেই এই পর্যটন স্থানগুলোর প্রাণ পর্যটকেরা। মুগ্ধতার জিনিস আছে, মুগ্ধ হওয়ার সে পর্যটক নেই। যখনই বের হই, কোথাও যেন কেউ নেই, যদিও বার্লিনের চিত্র ভিন্ন, সেখানে বার্লিনবাসীর কিছু অংশকে নিজেদের স্বাধীনতার দোহাই তুলে মাস্ক না পরার জন্য মিছিল করতে শুনেছে, জার্মানির উদ্যানঘেরা রাজপ্রাসাদ ও পার্কগুলোও যে নজর কাড়ে ভ্রমণকারীদের, সে স্থানগুলো বিবর্ণ। ইউরোপের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও অরণ্যের সৌন্দর্য জার্মানি।

আমি যে শহরে থাকি, সেখানে নিজের একটি ব্যক্তিগত কাজ সারতে কয়েক দিন আগে ডয়চে পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। ট্রামে উঠে দেখি, কোনো মানুষ নেই। যে কয়েকজন আছে, সবার মুখে মাস্ক, কেন জানি সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পোস্ট অফিসেও লোকের সমাগম নেই, রেলস্টেশনেও কেউ নেই, মার্টগুলোতেও একই চিত্র। পোস্ট অফিস থেকে বাসায় এসে রুর অঞ্চলে বসবাসরত এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি, কেমন আছে সে। বন্ধু বলল, নব আনন্দের রুরেও প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

পর্যটকদের ভিড় জমানো দেশ জার্মানি। বিশ্বকাপের মেসুত ওজিল, লোথার মাথিউস, মিরোস্লাভ ক্লোসা, মুলাররা বিশ্বকাপের মাঠ কাঁপিয়েছেন, কিন্তু করোনার মতো অণুজীব দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে পুরো জার্মানিকে। এই কয়েক দিনে বিস্ময়ের দেশ জার্মানিতে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দেখিনি। ২০২০ সালের শেষ লগ্নে প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস, আনন্দের পরিবর্তে দেখেছি নানা বিধিনিষেধে ক্রিসমাস ডে উদযাপন ও বর্ষবরণ।

আরও পড়ুন