রোনালদোর জন্মস্হান মাদাইরা দ্বীপে এক দিন

মাদাইরা দ্বীপ
ছবি: সংগৃহীত

পর্তুগালের ফোনচাল মাদাইরা দ্বীপপুঞ্জ, বিশ্বসেরা তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্মস্থান এবং তাঁর শৈশবে বেড়ে ওঠার গল্প এ শহরকেই ঘিরে। ফোনচাল মূলত একটি পর্যটক নির্ভরশীল শহর, যার চতুর্দিকে আটলান্টিক মহাসাগরবেষ্টিত। আজ সেই ফোনচাল মাদাইরা দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের গল্প বলব।

যেভাবে ভ্রমণ করা যেতে পারে

পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে ফোনচাল মাদাইরাতে যাওয়ার ভালো সময় মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। তখন মূলত গরমকাল থাকে, সে জন্য এ সময় প্রচুর দর্শনার্থী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে ছুটে আসেন ফোনচালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। দুই পথে মাদাইরাতে ভ্রমণ করা যেতে পারে। আকাশপথ ও সাগরপথ। সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে বিমানযোগে, যা লিসবন থেকে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট লাগে, তা ছাড়া জাহাজে ২–৩ দিন লাগে। তবে জেনে রাখা ভালো, ফোনচাল ভ্রমণে বিমানের টিকিট অনেক ব্যয়বহুল, সুতরাং আগে থেকে বিমানের টিকিট ও হোটেল বুকিং দিয়ে রাখলে অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে।

ফোনচাল মাদাইরা শহর

বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর Uber/ Bolt ডাকার চেষ্টা করলাম। আসলে ওখানে কোনো Uber/ Bolt অনলাইনভিত্তিক অ্যাপস কাজ করে না। ঘটনা ২০১৯ সালের। জেনে অনেকটা অবাক হলাম, তারপর কিছু না পেয়ে ট্যাক্সিতে উঠলাম, যেহেতু ট্যুরিস্ট নির্ভরশীল শহর এবং আমিও আগে থেকে ভালো করে কিছুই জানতাম না, তার জন্য আমাকে ৩৫ ইউরো (৩ হাজার ৫০০ টাকা) গুনতে হয়েছে। হোটেলে ওঠার পর জানতে পারলাম, এ শহরে সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম হচ্ছে বাস, ট্যুরিস্টদের জন্য একবার বাসে উঠলে ৫ ইউরো গুনতে হবে, ও শহরের যেখানেই যাবেন। থাকার জন্য মাদাইরাতে হোটেলগুলো অনেক ব্যয়বহুল, সুতরাং চাইলে আপনি কম খরচে হোস্টেলেও উঠতে পারেন।

মাদাইরা দ্বীপে লেখক
। ছবি: সংগৃহীত

রাতের খাবারের জন্য গুগল ম্যাপ–এ Indian Restaurant লিখে সার্চ দিই, অনেকগুলো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট দেখতে পেলাম। তার মধ্যে বেস্ট মনে হলো তাজমহল রেস্টুরেন্ট, রেস্টুরেন্টটির মালিক পাকিস্তানি, ওদের ওখানে রান্না করা বিরিয়ানি এবং সার্ভিস খুবই ভালো মানের। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ছোট্ট একটি দ্বীপ, যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই সাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ফোনচাল মাদাইরা শহরটা যেন আটলান্টিক সাগরের মধ্যখানে একটা বিশাল জাহাজের মতো ভেসে রয়েছে। তারপর সকালের নাশতা খেয়ে বের হলাম, দেখতে পেলাম রাস্তার দুই পাশ দিয়ে গা ঘেঁষে প্রচুর আমেরিকান দর্শনার্থীরা হাঁটাহাঁটি করছেন।

রোনালদোর মিউজিয়াম

গুগল ম্যাপে সার্চ দিয়ে রোনালদোর মিউজিয়াম খুঁজে পেলাম, আমার হোটেলের পাশেই, মাত্র ১০ মিনিট হেঁটে যেতে লাগবে, তারপর হাঁটা শুরু করলাম, চারদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ভারতের শিলং শহরের মতো উঁচু উঁচু আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাকে মনোমুগ্ধকর করে রাখল। এ যেন এক কল্পনার দ্বীপরাজ্য। কতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহর, তা দুচোখজুড়ে বাস্তবে উপভোগ না করলে বোঝা যাবে না।

গোল্ডেন বল:
ছবি: লেখক

আটলান্টিক মহাসাগরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে CR7 মিউজিয়ামে চলে এলাম, তা টেরই পেলাম না। তারপর সোজা চলে গেলাম কাউন্টারে, ভেতরে প্রবেশ করতে নাকি টিকিট লাগবে। জানতে চাইলাম পর্তুগিজ ভাষায় কত, সঙ্গে সঙ্গে ৫ ইউরো (৫০০ টাকা) জানিয়ে দিল। টিকিট নিতে দেরি করিনি, হাতে সময় একদম কম ছিল, দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ফিরতেও হবে লিসবনের উদ্দেশে। আটলান্টিক সাগরের গা ঘেঁষে ফোনচাল মাদাইরা পোর্ট পাশেই মাটির নিচে CR7 মিউজিয়াম, ভেতরে ঢুকেই অবাক হলাম, আমি কি কল্পনা দেখছি, নাকি বাস্তব। দুচোখজুড়ে মন ভরে দেখলাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সেই গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বল—তাঁর যত পুরস্কার। সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি বাসে বিমানবন্দরে চলে আসি। বিমানবন্দরে হালকা ডিনার করে উঠে পড়ি বিমানে প্রাণের শহর লিসবনের উদ্দেশে, সেটা ছিল আমার জীবনের এক অসাধারণ ভ্রমণকাহিনি এবং অভিজ্ঞতা।