২০২০ সালের ব্যয়বহুল শহরগুলো

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিকভাবে বেড়ে চলছে নগরায়ণের হার। আর সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও ধীরে ধীরে নগরমুখী হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলেও ঢাকা শহরের পরিধি যেখানে ছিল বুড়িগঙ্গা থেকে শুরু করে পলাশীর মোড় পর্যন্ত, সেখানে আজকের দিনে ঢাকা শহরের বিস্তৃতি নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে সাভার, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর কিংবা গাজীপুর অর্থাৎ বলতে গেলে জ্যামিতিক হারে এ শহরের পরিধি বাড়ছে। শুধু ঢাকা শহরই নয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের প্রায় সব শহরের পরিসীমা আরও বড় হচ্ছে। শহরাঞ্চলে যেমনভাবে আয়রোজগারের সুবিধা বেশি, ঠিক তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চলগুলো অনেক এগিয়ে। তবে আয় কিংবা প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে নগরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়।

সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রকাশ করেছে, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর তালিকা। প্রায় ১৩৩টি দেশের বিভিন্ন শহরের ওপর গবেষণা ও জরিপ চালিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ১৩৮টি পণ্যের বাজারমূল্য এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিষেবাকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী বাণিজ্যিক নগরী নিউইয়র্ককে আদর্শ হিসেবে ধরে অন্যান্য শহরগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক পার্থক্যের বিচারে নির্ধারণ করা হয় কোন শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন।

গত বছরের মতো এ বছরও বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর খেতাব পেয়েছে রোমাঞ্চ ও শিল্প-সাহিত্যের তীর্থভূমি খ্যাত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। প্যারিসের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত জুরিখ ও হংকং। সিটি কস্ট অব লিভিং ইনডেক্স অনুসারে এ তিনটি শহরের স্কোর ১০৩। এক পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে তালিকার ২ নম্বর স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে পরিচিত ওসাকার অবস্থান তিনে।

ওসাকার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেল আবিব। অথচ আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর তালিকায় তেল আবিবের অবস্থান ছিল ২৮ নম্বরে। ওসাকা ও তেল আবিবের পর সমান এক শ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে চতুর্থ স্থান দখল করেছে পৃথিবীর রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক এবং সুইজারল্যান্ডের অন্যতম প্রসিদ্ধ নগরী জেনেভা। হলিউডের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন রয়েছে তালিকার পঞ্চম স্থানে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয় বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের প্রায় সব শহরের অর্থনীতির সূচক তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী অবস্থানে পতিত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। তবে আমেরিকাসহ আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপের শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে এলেও একেবারে উল্টো পথে হেঁটেছে পশ্চিম ইউরোপের শহরগুলো। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর তালিকায় শীর্ষ দশের চারটি পশ্চিম ইউরোপের শহর, যার মধ্যে প্যারিস ও জুরিখ যৌথভাবে এ তালিকার ১ নম্বরে।

তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর তকমা পেয়েছে ভারতের মুম্বাই। মুম্বাইয়ের পর এ অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর তালিকায় স্থান পেয়েছে ঢাকা। গত বছর বিশ্বের ব্যয়বহুল নগরীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল ৬৬তে, ছয় ধাপ পিছিয়ে এবারের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৭২।

  • শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।