গাড়ির বিচিত্র নম্বর প্লেট

হি. হি. হি.!
এটা কোনো গাড়ির নম্বর হতে পারে?
হ্যাঁ, এ নামে প্লেট আছে। এই নিউইয়র্কে।
আমার অভ্যাস, গাড়ি চালাতে চালাতে চোখ চলে যায় নম্বর প্লেটের দিকে। কত অঙ্গরাজ্যের, কত বিচিত্র রঙের প্লেট! নিউইয়র্কের আগের প্লেট ছিল সাদা-কালো, এখন হলুদ-কালো। প্লেটগুলোর ডিজাইন, রং, ধরন সৌন্দর্যমণ্ডিত। আমার কাছে সবচেয়ে শোভনীয় রং মনে হয়েছে কানেকটিকাটের। নিউজার্সির নম্বর মনে রাখা যায় না। কেমন জটিল মনে হয়।
আমেরিকা দেশটি বৈচিত্র্যে ভরা। গাড়ির মালিক পছন্দমতো তার গাড়ির প্লেট নিতে পারেন। একদিন দেখি, এক গাড়ির প্লেটে লেখা ‘এক্স-লাভ’। জানি না, পুরোনো প্রেমকে হয়তো ভুলতে পারেননি। ব্যক্তির নামে, প্রিয়জনের নামে, স্থানের নামে প্লেট আছে। আছে আরও মজার মজার বিষয়ে। ওই হি. হি. হি.—প্লেটের কথা আমি কখনো ভুলব না। মনে হলেই হাসি পায়।
এই সপ্তাহে রাস্তার চোখে পড়ল ‘আদমজী ৮৮ ’। এটা আদমজী ‘এক’ থেকে শুরু নাকি সাল—বোঝা বেশ কঠিন। এভাবে বলা যায় ‘মাইক ৯৯ ’। ওহাইওর একটি প্লেট ‘ভূঁইয়া’। বেশ আকর্ষণীয়। রিচমন্ডহিলে চোখে পড়ল ‘সরদারজি’।
দেশি আমেজ পাওয়া যায় জ্যাকসন হাইটস এলে। এখানে যে গাড়িগুলো আসে—সেগুলোতে ছায়া পড়ে দেশি সংস্কৃতির। ব্যক্তির নামে, স্থানের নামে, এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনের নামেও প্লেট আছে।
গত সপ্তাহে চোখে পড়ল একটি প্লেট ‘ঢাকা ৭৬ ’। একই প্রশ্ন-এটা এক থেকে শুরু হওয়া সংখ্যা নাকি সাল? সম্ভবত সংখ্যাই হবে। এর আগে ঢাকা, ঢাকা-২, ঢাকা-৩ চোখে পড়েছে। এভাবেই হয়তো বেড়েছে।
সিলেট-১, সিলেট-২ এমন নম্বরও চোখে পড়েছে। মনে পড়ে সিলেটের কথা। একাত্তরের আগে বাঁ পড়ের দিশিদের ক্ষমতা দেখেছি। সম্ভবত এখনো তার খানিকটা আছে। প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিসিদের অবস্থান। দেশটা তারাই চালান।
এক ঘটনার কথা বলি। বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী শামসুল হুদা চৌধুরী। চা শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কয়েস চৌধুরীসহ অন্যান্যের উদ্যোগে ঠিক হলো—মোহাম্মদ আলী আসবেন সিলেটের চা বাগান ঘেরা সৌন্দর্যমণ্ডিত শ্রীমঙ্গলে। সরকারিভাবে তাই চূড়ান্ত করা হলো। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সিলেটের সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই চলে গেলেন শ্রীমঙ্গল। কিন্তু মোহাম্মদ আলীর শ্রীমঙ্গল শহর সফরে রাজি ছিলেন না একজন। তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক বা ডিসি ফয়েজ উল্লাহ।
তার ইচ্ছা মোহাম্মদ আলী আসবেন সিলেটের শহরতলি লাক্কাতুরা গলফ ক্লাবে। ডিসির পরামর্শ উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে ঠিক করা হয়, শ্রীমঙ্গলেই হবে মোহাম্মদ আলীর সফর। আমি তখন যুগভেরীতে। যেদিন মোহাম্মদ আলী আসবেন—সেদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই কারও ফোন বেজে উঠল। ঘটনা কি? মোহাম্মদ আলী শ্রীমঙ্গল নয়, লাক্কাতুরা গলফ ক্লাবে আসছেন। হাতে সময় দু ঘণ্টা। তাড়াতাড়ি যেতে হবে লাক্কাতুরা। শ্রীমঙ্গলে যারা গিয়েছিলেন—সবাই ছুটে আসছেন লাক্কাতুরায়। রাতের মধ্যেই ‘অভ্যুত্থান’! শেষ পর্যন্ত ডিসির জয় হলো। কি করে হলো?
পরে শুনলাম, ডিসি নাকি ঢাকাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, জঙ্গল পরিবেষ্টিত শ্রীমঙ্গলে মোহাম্মদ আলীর নিরাপত্তার দায়িত্ব তার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হবে না। আর যায় কোথায়? নিরাপত্তাই প্রধান বিষয়। আর যেখানে তা নিতে ডিসি অপরাগ। তাই ডিসির ইচ্ছাই সরকারের ইচ্ছা।
ক্ষমতাবান ডিসির জিপের নম্বর প্লেট ছিল সিলেট-১। এসপির ছিল সম্ভবত সিলেট-২ বা ৩।
নানাজনের নামে নম্বর প্লেট দেখি। আমার একবার শখ হলো, ভবিষ্যতে গাড়ি হলে আমার নামে একটি প্লেট করব। সে ইচ্ছা আর কখনো পূরণ হবে না। গত সপ্তাহে দেখি—কোনো একটি গাড়ির প্লেটে লেখা ‘মাহবুব’। এখন যদি আমাকে প্লেট নিতে হয়, তাহলে মাহবুব-এক, দুই, তিন, চার—জানি না কত সংখ্যায় গিয়ে দাঁড়াবে। এর প্রয়োজন নেই। আমি যেমন আছি তেমনই থাকি। সবাই থাক সুখে।

লেখক-নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক