পুজোয় সাজ

পুজোর সাজে উত্তরের নকশার জন্য মডেল হয়েছেন পঞ্চকবির গানের কন্যা ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায়
পুজোর সাজে উত্তরের নকশার জন্য মডেল হয়েছেন পঞ্চকবির গানের কন্যা ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায়

দুর্বা ঘাসে ভোরের শিশির আর শিউলিতলার মনমাতানো সৌরভ না থাকলেও আটলান্টিক পাড়ের এই শহরে শারদীয় উৎসব আসে বেশ আড়ম্বরেই। আঁজলা ভরা উৎসবের বার্তা নিয়ে আনন্দময়ীর আগমন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভোরে ঝরে পড়া শিশিরের চিহ্ন বুকে শিউলি, ঘাসের ডগায় ভোরের সূর্যের আলো ধার করে হীরক দ্যুতি ছড়ানো শিশিরজল আর কাশফুলের ঝাড় না থাকলেও নিউইয়র্কে আনন্দময়ী আসে শারদীয় উৎসবের পুরোটা আমেজ নিয়ে।
যদিওবা স্মৃতি বা মনজুরে শারদীয় উৎসবের যে আবহমান বা সনাতনী রূপ, তা থেকে কিছুটা ভিন্ন, তবুও সহস্র ক্রোশ দূরে শারদীয় উৎসবের এই রূপ আর তার আবেদন মোটেও কম নয়। পুজোর চারটি দিন আমরা সবাই হয়ে উঠি পুরোপুরি বাঙালি। তা সে পোশাক-আশাকেই হোক বা খাওয়া দাওয়াই, উপাচার বা অনুষঙ্গ কোথাও একচুলও খামতি থাকে না।
শতাধিক পদ্মফুল আর ঢ্যাং কুর কুর ঢাক, ধূপ-ধূনোসহ দুর্গাপূজার প্রধান প্রধান সব অনুষঙ্গের উপস্থিতি যেন আমাদের শারদীয়ার আমেজে অনুরণিত করে প্রতি মুহূর্তে। আর পুজো শেষে পাত পেড়ে ভোগের খিচুড়ি, লুচি, পায়েসের মহোৎসব আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাংলার সেই সনাতনী উঠোনে। দশমীতে সিঁদুর খেলা আর মিষ্টি মুখ দুটোই হয় মহাসমারোহে বিজয়ার সেই অমোঘ নিয়মেই। আর এভাবেই আমরা নিউইয়র্ক প্রবাসী সবাই শারদ উৎসবের দিনগুলোতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিকড়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চেষ্টা করি।

পুজোর সাজে উত্তরের নকশার জন্য মডেল হয়েছেন পঞ্চকবির গানের কন্যা ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায়
পুজোর সাজে উত্তরের নকশার জন্য মডেল হয়েছেন পঞ্চকবির গানের কন্যা ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায়


যেকোনো উৎসব মানেই সাজ-পোশাকের একটা আলাদা মহিমা থাকে। ড্রেস কোডের এ যুগে পুজোর পোশাকেও বেশ স্বতন্ত্রতা চলে এসেছে। লালপেড়ে শাড়ি বা জামদানি শাড়ির সঙ্গে কীভাবে যেন গাঁটছড়া বেঁধে গেছে পুজোর দিনগুলোর। তবে চার ঋতুর নগরী নিউইয়র্কে পুজোর পোশাক নির্বাচন করতে গিয়ে আবহাওয়া বা ঋতুর কথাটিও মাথায় রাখতে হয়। নিউইয়র্কে অক্টোবরের অর্থ ফল বা হেমন্ত ঋতুর সময়। গাছের পাতায় হরেক রঙের বিচ্ছুরণ ছাড়াও হিম হিম হাওয়ায় শীতের আগমনী ডাকও থাকে। তাই নিউইয়র্কে পুজোর পোশাক নির্বাচনে রং, টেক্সচারে খুব খেয়াল রাখতে হয়।
পূজার প্রথম দিন মানে সপ্তমীর সকালে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির সঙ্গে বেছে নিন কোনো ডিজাইনার ব্লাউজ, যা আপনাকে করে তুলবে ট্রেন্ডি আর সবার থেকে আলাদা। সপ্তমীর রাতের জন্য বেছে রাখুন কোনো সিল্ক শাড়ি। হতে পারে তা ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক বা ইক্কত সিল্ক। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে রাখুন এক রঙের পশমিনা। হেমন্ত ঋতুর হিম হিম বাতাসে যা আপনার কাজে আসবে আবার আপনাকে দেখাবেও খুব সুন্দর। পূজার দ্বিতীয় দিন মানে অষ্টমী। অষ্টমীর দিন সকালের জন্য রাখুন বাঙালির একান্ত আপন জামদানি শাড়িটি। তবে জামদানি শাড়ির সঙ্গে কোনো ডিজাইনার ব্লাউজ নয়। রঙা মিলিয়ে বা কনট্রাস্ট রঙের ব্লাউজের সঙ্গে হালকা মেকআপ আপনাকে দেবে বাঙালির এক সনাতনী রূপ।
অষ্টমীর রাতের জন্য বেছে রাখুন একটু জমকালো শাড়ি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী মিরপুরের বেনারসি বা কাঞ্জিভরম হতে পারে আপনার পছন্দ। জমকালো শাড়ির সঙ্গে একটু ভারী মেকআপ সঙ্গে মিলিয়ে জুয়েলারি—আপনি হয়ে উঠবেন উৎসবের মতোই ঝলমলে। তবে হ্যাঁ, এর সঙ্গে সুতোর কাজ করা একটি পশমিনা অবশ্যই সঙ্গে রাখুন। এরপর নবমী, পুজোর তৃতীয় দিন। দিনের বেলায় বেছে নিন কাঁথাস্টিচ বা মধুবনি শাড়ি। শাড়িজুড়ে সুতোয় বোনা গল্পের সঙ্গে একটু ফ্যাশনেবল গয়নায় আপনি সহজেই হয়ে যাবেন অন্য সবার মধ্যে অনন্যা। নবমীর দিন রাতে বেছে নিন ট্রেন্ডি কোনো সালোয়ার কামিজ। ট্রেন্ডি সালোয়ার কামিজে আপনার অ্যাপিয়ারেন্সে আসবে বৈচিত্র্য। পূজার শেষদিন দশমী। দশমী মানেই সিঁদুর খেলা। আবহমান লালপেড়ে সাদা শাড়ির দিন। তবে লাল রঙের রাজশাহী র’ সিল্ক, সিল্ক কলমকারি বা গঙ্গা-যমুনা পাড়ের গাদোয়াল শাড়িতেও হয়ে উঠতে পারেন অন্যদের চেয়ে আলাদা, নজরকাড়া বাঙালি নারী।