পরাভূত

নানী বলতেন, ‘তর মা-রে আমি পেটে ধরছি,
আর তর মা’র পেটে তুই হইছিলি
আমি তর মায়েরও মা -তবু তুই আমার খোঁজ লস্‌ না
কেন্‌ তুই এমন হইয়া গেলি?’
আমি কেমন করে নানীরে বুঝাই
কঠিন সব তত্ত্বকথা, জীবনের ব্যস্ততা
কেমন করে বুঝাই লৌকিক সম্পর্ক সব

মিথ্যা, ইল্যুশন।
সবকিছু সাময়িক, বায়বীয়
আবেগের হয়রানি-কারসাজি করে শুধু
মানুষের মন।

এ শুধু সময়ের সুনিপুণ হাতে এক
বিন্যস্ত সত্য। আদপে কি ছিল কোনো ঋণ?
সত্যের কাজ জানি ঘটে যাওয়া,
নিজের কী দায় তার থাকে কোনো দিন?

আমি দায়ের ভারে পরাভূত না হয়ে,
আবেগের ভারে ন্যুব্জ না হয়ে
পিঠ সোজা করে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াই
আমি ঋণ স্বীকার না করে,
দুর্বার মাথা উঁচু ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে
আটলান্টিকের তীর বেয়ে শুধু ছুটে যাই।

পৃথিবীর বন-পাখি-পাহাড় আর মহাসাগরের
রূপে মুগ্ধ হয়ে ভাবি,
আমি তো আদপে এদেরই সন্তান?
কে আমার মা-বাবা কে পূর্বপুরুষ
কে পূর্বপুরুষের পূর্বপুরুষ?
কত দায়, কত দেনা, মুছে যাওয়া কত বিমূর্ত স্মৃতি,
হাসি-কান্না, মান-অভিমান, এসেছি এখানে কতশত
পেরুবার পর
কিছুই আমার নয়, শুধু বোধটুকু ছাড়া
যাকে বলি ঘর।

আজও নেই হিসাবের এত বড় বই
এত বড় নথি
রক্ষিত আছে যাতে জগতের যাবতীয়
দায়-দেনা-স্মৃতি
আর অগণন ঢেউয়ের হিসাব
লেখাজোখা লাল-নীল কালি আর সই।

কিছু নেই। থাকেনি। থাকে না কিছুই।
না দায়, না দায়ী, না অপূর্ণ কোনো সাধ
না বাদী, না বিবাদী, না কোনো
অমীমাংসিত বিবাদ।

মা গেছেন বছর তিরিশ আগে। নানী গেলেন কবে?
কী জানি মনে নেই, হয়তো মাসখানেক হবে
ভুলে গেছি আজগুবি আবেগ তরল।
এই সব কাষ্ঠশুষ্ক যুক্তি আর দর্শন কপচানো

সত্যের চোখে তবু

কেন
ঝরে



বি

ল?