নির্ভীক নোঙর

নতুন কাজ। নতুন আনন্দ। নতুন উন্মাদনা। নতুন প্রাণের স্পন্দন। নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষ দেখার আনন্দে ভরে যায় মন। নতুন কবিতায় নতুন গল্পে নতুন সাহিত্য আসরে নতুন আড্ডায় প্রচণ্ড রকমের ব্যস্ততা নিয়ে কাটতে থাকে সজলের সময়। প্রবাসের এই ব্যস্ত জীবনে কষ্ট পেয়ে ঘরে বসে থাকার সময় কোথায়। একহাতে চোখের জল মুছতে মুছতে মানুষ দৌড়ায় কাজে। কাজ করতে করতে বুকের ভেতরের চাপা কষ্টটাও একসময় কমে আসে। তেমনিভাবে সজল এখন গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। ছুটেছে নতুনের পানে। নতুন ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন জীবন। নতুন ব্যস্ত জীবনে বেলিজের সেই মেয়েটির কথাও প্রায় ভুলতে বসেছে সে।
সজলের এমনি এক ব্যস্ত দুপুরে একটি ফোনকল! কাজে ডুবে থেকেই মুঠোফোনটা তুলে নিয়ে বলল, ‘হ্যালো।’
ওপার থেকে ভেসে আসা একটি মেয়ে কণ্ঠস্বরে ইংরেজিতে সুন্দর উচ্চারণে উচ্চারিত হলো, ‘আপনি কী সজল?’
- ‘হ্যাঁ, বলছি?’
পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পেরে সজল জিজ্ঞেস করল, ‘কে বলছেন?’
- ‘তুমি আমাকে ভুলে গেছ সজল ?’
-‘আপনাকে মনে রাখার কী কোনো কারণ আছে?’
- ‘না না তা নেই, ত-বু-ও-’ বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মেয়েটি।
অসাধারণ সেই হাসি! হাসি শুনে চেয়ার থেকে সোজা হয়ে বসল সে। খুব পরিচিত এই কণ্ঠে খুব পরিচিত সেই হাসি। কান থেকে মুঠোফোন টেবিলে নামিয়ে স্পিকার অন করল সে। তখনো হাসছে মেয়েটি। পুরোটা ঘর মুহূর্তেই ভরে উঠল হাসিতে।
সজলের মনে উঁকি দেয় এক বিদেশিনীর নাম। তবুও নিশ্চিত হতে পারল না সে। পত্রিকা অফিসে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ফোন আসে। কারও নাম ভুল হলো কেন? কারও অনুষ্ঠানের খবরটা পুরোপুরি এল না কেন? এমনি হাজারো কমপ্লেইনের পাশাপাশি হাজারের অধিক কমপ্লিমেন্ট। লেখা ছাপানো হয়েছে খুশিতে গদ গদ হয়ে কত মানুষের ফোনকল। সারা বেলা ওর এমনি ফোনের ওপরে কাটে অনেকটা সময়। এত ফোনকল ছাপিয়ে সজলের হঠাৎ বেলিজের সেই বিদেশিনীকে মনে পড়ল। মনে পড়ল সেদিনের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা।

মেয়েটি আবারও নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কী আমাকে সত্যিই চিনতে পারনি সজল?’
আবারও সেই হাসি! হাসতে হাসতে মেয়েটি বলল, ‘সজল আমি শার্লিন, এই ক’দিনে তুমি আমাকে ভুলে গেছ সজল?’
শার্লিন!! নামটি শুনেই একটি বিদ্যুৎ ঝিলিক খেলে গেল ওর মস্তিষ্কে।
কণ্ঠে অনুযোগের সুর নিয়ে শার্লিন আবারও বলল, ‘প্রায় ৩ মাস পার হলো, তুমি একবারও ফোন করলে না সজল?’
সজল আমতা-আমতা করে বলল, ‘তুমিও তো করতে পারতে?’
খুব দ্রুত শার্লিনের জবাব, ‘আমিই তো তোমাকে প্রথম ফোন করেছি।’
কণ্ঠে খুব স্বাভাবিকতা নিয়ে সজল বলল, ‘ফোন করার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কেমন আছ শার্লিন?’
শার্লিন কণ্ঠে অভিমানী সুর নিয়ে বলল, ‘না বলব না, তুমি যেদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করবে সেদিন বলব।’
শার্লিনের কণ্ঠে কী যেন জাদু ছিল, না হেসে পারল না সে। হো হো করে হাসছে সজল। সজলের হাসি শুনতে শুনতে শার্লিন জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখন কী করছ?’
সজল বলল, ‘আমি এখন অফিসে, কাজ করি।’
-‘কী ধরনের কাজ তোমার ?’
-‘আমি তোমাকে আগে বলেছিলাম, মনে নেই?’
-‘সরি, ভুলে গেছি। এবার বলো আর ভুল হবে না।’
-‘আমি একটা খবরের কাগজে কাজ করি।’
-‘তার মানে তুমি রিপোর্টার?’
-‘অনেকটা তাই, তা ছাড়া আমি অন্য ধরনের লেখাও লিখি।’
-‘যেমন?’
-‘আমি গল্প লিখি, কবিতা লিখি!’
-‘দারুণ ! তার মানে তুমি কবি।’ শার্লিনের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস!
-‘এখনো পুরোপুরি কবি হয়ে উঠতে পারিনি, তবে চেষ্টা করছি।’
-‘জেনে খুব খুশি হলাম সজল।’
-‘ধন্যবাদ শার্লিন।’
-‘কোথায় তোমার অফিস? ম্যানহাটনে?’
-‘না, জ্যাকসন হাইটস কুইন্সে।’
-‘আমি ভেবেছিলাম ম্যানহাটনে।’
- ‘না, কেন বলত?’
ক্ষণিক নীরবতা ভেঙে শার্লিন বলল, ‘আমি একটা বিপদে পড়ে তোমাকে ফোন করেছি। এ দেশে আমার কোনো আত্মীয় অথবা তেমন বন্ধু-স্বজন নেই। আমার এই বিপদের দিনে হঠাৎ তোমার কথা মনে হলো। তাই তোমাকে ফোন করলাম, তোমার সাহায্যের প্রয়োজন।’ শার্লিনের কণ্ঠে এমন মিনতির সুরে চমকে উঠল সজল। বলল, ‘কী হয়েছে শার্লিন, আমাকে খুলে বল!’
-‘না ফোনে বলব না। সামনাসামনি বলতে চাই। কাল রোববার, তোমার কি সময় হবে?’
-‘রোববার আমার ছুটির দিন। আমি আসব শার্লিন। তোমার সঙ্গে কোথায় এবং কখন দেখা হতে পারে সেটি আমাকে বল।’
একটু ভেবে নিয়ে শার্লিন বলল, ‘আগামীকাল সকাল এগারোটায় তুমি কি আমার ফিটনেস ক্লাবে আসতে পারবে?’
-‘হ্যাঁ পারব।’
-‘তোমার অ্যাড্রেস মনে আছে ?’
- ‘আছে।’
-‘গুড, ভেরি গুড। তাহলে কাল দেখা হবে নিশ্চয়!’
- ‘আমি আসব শার্লিন। তুমি কোনো চিন্তা করো না।’
-‘আমি এখন তাহলে রাখলাম, বা-ই সজল।’
ফোন বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। ভাবনা এলোমেলো। কী বিপদ হতে পারে শার্লিনের! কিসের সাহায্য চায় সে ওর কাছে? প্রবাস জীবনে একটি মেয়ে বিপদে পড়ে সাহায্যের আশায় হাত বাড়িয়েছে, সজলের পরোপকারী মনটা বড় ব্যাকুল হয়ে উঠল। সেদিনে সেই ইগো, মান-অভিমান হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে গেল। শার্লিনের জন্য মনটা কেমন যেন ছটফট করে ওঠে ওর। কাজে আর মন দিতে পারল না সে। বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু কাঁপছে।
আজ অফিস থেকে একটু আগেই বেরিয়ে পড়ল সে। এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে সেই বিদেশিনীর কথা। কবে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল দিনটির কথা মনে করার চেষ্টা করল সে। সজলই একদিন পথ হারিয়ে মেয়েটির কাছে পথের নাগাল করতে গিয়েছিল।

বাকি অংশ ৪০ পৃষ্ঠায়
৩৯ পৃষ্ঠার পর

-‘আমি এখন তাহলে রাখলাম, বা-ই সজল।’
ফোন বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। ভাবনা এলোমেলো। কী বিপদ হতে পারে শার্লিনের! কিসের সাহায্য চায় সে ওর কাছে? প্রবাস জীবনে একটি মেয়ে বিপদে পড়ে সাহায্যের আশায় হাত বাড়িয়েছে, সজলের পরোপকারী মনটা বড় ব্যাকুল হয়ে উঠল। সেদিনে সেই ইগো, মান-অভিমান হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে গেল। শার্লিনের জন্য মনটা কেমন যেন ছটফট করে ওঠে ওর। কাজে আর মন দিতে পারল না সে। বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু কাঁপছে।
আজ অফিস থেকে একটু আগেই বেরিয়ে পড়ল সে। এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে সেই বিদেশিনীর কথা। কবে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল দিনটির কথা মনে করার চেষ্টা করল সে। সজলই একদিন পথ হারিয়ে মেয়েটির কাছে পথের নাগাল করতে গিয়েছিল। আর আজ সেই মেয়েটিই সজলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে। কী ধরনের বিপদ হতে পারে ভাবতে ভাবতে আর অফিসের প্রচণ্ড ব্যস্ততার জন্য অনেকটাই ক্লান্ত এখন সে। তারপরেও শার্লিনের সঙ্গে কাল দেখা হওয়ার বাসনায় মনটা কেমন যেন উতল হাওয়া! শার্লিনের ফিটনেস ক্লাবে কোন ট্রেনে কীভাবে যাবে ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে পা বাড়ায় সে।
পরের দিন রোববার। সরকারি ছুটির দিন। কাঙ্ক্ষিত ছুটির এই দিনটিতে ওর কোনো রুটিন থাকে না। সবকিছুই চলে সজলের ইচ্ছে মতো। কখনো গান শুনে, কখনো টিভি চ্যানেলে চোখ রেখে, কখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে কবিতা গল্প লেখে, অথবা দেশে বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে কাটে অলস সময়। কিন্তু আজকের ছুটির দিনটি সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে সকাল দেখছে সে। সকালের স্নিগ্ধ মিষ্টি রোদে কিছুটা সময় কাটিয়ে শেভ শ্যাম্পু গোসল সেরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবল কী পরে আজ শার্লিনের কাছে যাবে। জিনস সজলের বরাবরই প্রিয়। আজও জিনসের প্যান্ট, সাদা শার্ট এবং একটি স্পোর্টস ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে সে তাড়াতাড়ি পা বাড়াল স্টেশনের দিকে ।
ট্রেন ছুটে চলেছে ম্যানহাটনের দিকে। অজানা একটা শঙ্কায় দুরুদুরু করে কাঁপছে ওর মন। তারপরও একটি অসহায় মেয়েকে সাহায্য করার জন্য আজ অনেকটাই ডেসপারেট ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই ফিটনেস ক্লাবে আরও একবার এসেছিল সে। কাজেই এখানকার নিয়মকানুন এবং রাস্তা সবই ওর জানা। এগারোটার একটু আগেই সে কাউন্টারে। কাউন্টারে আজ একটি মেয়ে দায়িত্বে আছে। সে তার কাছে শার্লিনের সঙ্গে দেখা করতে চাইল। মেয়েটি ভেতরে গেছে শার্লিনকে ডাকতে আর এদিকে ঘামছে সে।
একটু পরেই শার্লিন এসে সজলের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে ‘হা-য় সজল’ বলে সোফায় একেবারে ওর পাশে বসল। এখনো সুইমিং ড্রেস পরেনি সে। শার্ট প্যান্ট পরেই আছে। পরিবেশটাকে হালকা করার জন্যই সজল জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন আছ? তোমার সুইমিং শেখার কত দূর?’
সেই মন কেমন করা হাসি হাসতে হাসতে শার্লিন বলল, ‘এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারিনি । আরও কিছুদিন মনে হয় লাগবে।’ বলেই সজলের হাত ধরে বলল, ‘পাশেই কফি শপ। চলো যাই। সেখানে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে।’
সজল সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে সোফা ছেড়ে কফি শপে। দুজনে দুটি কফি নিয়ে কফি শপের কোণের ছোট্ট একটি টেবিলে মুখোমুখি বসল ওরা। হঠাৎ সজলের মনে হলো ও যেন আরও বেশি ঘামছে। ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জিটা এখন অনেকটাই ঘামে ভেজা। শার্লিন চুপচাপ। কিছুটা গম্ভীর হয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে চলেছে। অনেকক্ষণ কারও মুখে কোনো কথা নেই।
অবশেষে শার্লিন সজলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি কীভাবে তোমাকে আমার সমস্যার কথা বলব ভাবছি। আমি কখনোই এমন সমস্যার মুখোমুখি হইনি।’
সজল অভয় দিয়ে বলল, ‘আমি সব খুলে বলব শার্লিন!’
শার্লিন একটু থেমে বলল, ‘একটি ছেলে আমাকে খুব বিরক্ত করছে। ছেলেটি আমার সঙ্গে পড়ে। সে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়, কিন্তু আমি চাই না। কিন্তু ছেলেটি নাছোড়বান্দা। সে আমাকে অনুসরণ করে এই ক্লাবেই নাম লিখিয়েছে। সে সুইমিং শিখতে এসে আমাকে প্রতিদিন বিরক্ত করছে। আমি ছেলেটিকে বলেছি যে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। কিন্তু সে বিশ্বাস করে না বরং উল্টো আমাকে বিরক্ত করেই চলেছে। আমি এই বিশ্রী অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই সজল ।’
সে কী বলবে ভেবে পায় না। ও, এ ধরনের বিপদের কথা কখনো মাথায় আনতে পারিনি। তাই খানিকটা নার্ভাস হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার সমস্যাটা আমি বুঝলাম। কিন্তু আমি তোমাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আর তা ছাড়া তুমি এই হেলথ ক্লাব ছেড়ে অন্য কোনো ক্লাবে চলে গেলেও তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
শার্লিন মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘না তা পারে না। কারণ ছেলেটি আমার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাসে ... ‘বলেই আচমকা সজলের ডানহাতটি নিয়ে শার্লিন চুম্বন করতে থাকে! ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সজল ফ্যালফ্যালিয়ে শার্লিনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শার্লিন চোখের ইশারা করে বলে, ‘কফি শপের কাউন্টারে দাঁড়ানো ওই কালো ছেলেটির কথাই আমি তোমাকে বলছি। আমাকে সুইমিং করতে না দেখে পিছু পিছু এখানে ...’ বলেই হাতটি আরও কাছে টেনে নিয়ে খুব আদর করে হাত বোলাচ্ছে শার্লিন। সজল আড়চোখে ছেলেটিকে দেখার সময় চোখাচোখি হলো। ছেলেটি কফি কিনে শপ থেকে বেরিয়ে গেল রাস্তায়।
তখনো সজলের হাতটি শার্লিনের হাতের মুঠোয় বন্দী। কী বলবে সজল ভেবে পায় না। অবশেষে শার্লিন মাথা নিচু করে বলল, ‘তুমিই আমার সেই বয়ফ্রেন্ড!’
সজল চমকে ওঠে বলল, ‘কী বল্লে!! বয়ফ্রেন্ড??’
শার্লিনের সাদা ফরসা ধবধবে মুখটি হঠাৎ করে লাল হয়ে গেছে। হয়তো লজ্জা পেয়েছে ভীষণ। তাই তাড়াতাড়ি বলল, ‘না না বয়ফ্রেন্ড মানে, বয়ফ্রেন্ডের অভিনয় সজল।’
সজল এবার শব্দ করে হেসে ওঠে বলল, ‘অভিনয়! তাই বলো।’ তখনো হাসছে সে ।
শার্লিন সজলের হাতে একটু জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, ‘প্লিজ সজল না বলো না। আমাকে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করো। আমি সত্যি বড় অসহায় সজল।’
সজলের হাতটি ততক্ষণে শার্লিনের হাতের মুঠোয় ঘামতে শুরু করছে। ভেতরের গেঞ্জিটা আরও ভিজে শরীরের সঙ্গে লেগেছে টের পেল সে। ঘর্মাক্ত হাতটি শার্লিনের হাতের ভেতর থেকে আলতো করে আলগা করে নিয়ে সজল শার্লিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শার্লিন তুমি বেলিজ থেকে এই দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছ। এ দেশে তোমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। তাই তুমি অত্যন্ত অসহায় হয়ে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছ। আমি প্রস্তুত শার্লিন তোমাকে সাহায্য করতে। আমাকে কী করতে হবে বল। তুমি যা বলবে আমি তাই করব শার্লিন। এখন তুমি সম্পূর্ণরূপে চিন্তামুক্ত হতে পার।’
শার্লিন আনন্দে আটখানা হয়ে ওর হাতটি আবারও হাতের ভেতরে নিয়ে সজলের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে সে বলল, ‘তুমি আমাকে বাঁচালে সজল। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ তোমার কাছে।’ সজলের হাতে মৃদু একটু চাপ দিয়ে শার্লিন আবারও বলল, ‘আজ এখন থেকে আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম।’
সজল মুখে কিছু না বলে সোজাসুজি শার্লিনের চোখের দিকে তাকাল সে। এর আগে কখনো সে এভাবে শার্লিনকে দেখেনি। হাসিমুখে প্রসন্ন দৃষ্টি মেলে শার্লিনও পলকহীন চেয়ে আছে সজলের চোখের দিকে। চিক্ চিক্ করছে শার্লিনে চোখের তারা! শার্লিনের বড় বড় চোখের পাপড়িগুলোর ভেতরে যে অক্ষিতারা আলো ছড়াচ্ছিল, তার ভেতরে নোঙর করতে সজলের মন আবারও চঞ্চল এবং উতল হলো ।
শার্লিনের সেই কাজল কালো চোখের গভীরে যে উতল সমুদ্র তার মাঝে নির্ভীক নোঙর করতে চায় আজ সজলের মন।