দাদির গাছের আম

২৪ ডিসেম্বর, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। হাড় কাঁপানো হিমেল হাওয়ার সঙ্গে টিপ টিপ বৃষ্টি। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কাল ক্রিসমাস, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। আমেরিকান খ্রিষ্টানরা ঘটা করে এদিনটি পালন করে। রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, দোকানপাট নানা রকম ঝিকমিকে বাতিতে আলোকিত। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে আজ সন্ধ্যায় তুষারপাত হতে পারে। সন্ধ্যার পালায় কাজ শেষে যখন বাড়ি ফিরছি ততক্ষণে তুষার পড়তে শুরু করেছে। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা-ঘাট, গাছপালা ধবধবে সাদা হয়ে গেল। মনে হলো সাদা কম্বলে ঢেকে গেল রাস্তা, পথ-ঘাট। সেই তুষারের মধ্যেই খুব সাবধানে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। এতটুকু অসাবধান হলেই বড় রকমের বিপদের আশঙ্কা। গাড়ির উইন্ড শিটে এত তুষার জমা হয়ে যায় যা ওয়াইপারেও পরিষ্কার হয় না। তাই মাঝে মধ্যে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে গ্লব পরা হাতে তা পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগোচ্ছি। গ্যারেজ খুলে যখন বাড়িতে ঢোকলাম ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত বারোটা। ক্রিসমাস উপলক্ষে তিন দিন ছুটি। কাজে যাওয়ার তাড়া নেই। রাতের খাবার খেয়ে টিভিটা অন করে সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়লাম।
টকিং ঘড়িটা একবার ডং করে বেজে বলল টু এএম। নীরব, নিথর আটলান্টা নগরী। তুষার ভেজা রাতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু জেগে আছি আমি আর আমার সঙ্গে পাশের হাইওয়ে এইটি ফাইভ। সে কখনো ঘুমায় না । এত তুষারের মাঝেও ভো ভো, সো সো করে বাস, ট্যাক্সি, লরিগুলো চলে যাচ্ছে আপন গন্তব্যে। বিছানায় ঘুমাতে যাব ঠিক এ সময়ে টেলিফোনের রিংটা বেজে উঠল। হাত বাড়িয়ে ফোন ধরতেই লাইনটা কেটে গেল। কলার আইডি সার্চ করে দেখি বাংলাদেশের কল। ছোট ভাই মনি কল করেছে। সে ভীষণ হিসেবি। নিজের প্রয়োজনে কল করে ফোনে বিল তুলবে না। বিলটা দিতে হবে আমার। কল ব্যাকের সংকেত দিয়েই লাইনটা কেটে দিল। কল ব্যাক করলাম।
ফোনের ওই প্রান্ত থেকে জবাব আসে, সেজে ভাই আমি মনি। খবর শুনেছেন?
তার এই খবর শুনেছেন শব্দটিতে আমার গা ছম ছম করে উঠল। মা আমার অশীতিপর বৃদ্ধা। প্রায়ই খবর আসে এই ভালো, এই ভালো নয়। মায়ের দুঃসংবাদ শুনতে আমি মোটেই প্রস্তুত নই। তাই এক রকম চিৎকার করেই জিজ্ঞেস করলাম, মা, মা কেমন আছে?
হ্যাঁ মা ভালো আছে। তবে, আমাদের মোটা দাদি গতকাল ইন্তেকাল করেছেন।
মনে মনে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ির আর সব খবর ভালো তো! গত মাসে যে টাকা পাঠায়েছি পেয়েছিস?
হ্যাঁ পেয়েছি। বাড়ির সবে ভালো। দাদির মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পার্বতীপুর থেকে আজ সকালে মিয়াভাই বাড়ি এসেছেন ক’দিন থাকবেন হয়তো। এই বলে সে টেলিফোন রেখে দিল।
গ্রামের নাম টেংরাখালী। আমার নাড়ির সম্পর্ক এই গ্রামের সঙ্গে। নারকেল সুপারি বনবীথির ছায়াঘেরা বলেশ্বর নদীর তীর ছোঁয়া সবুজ শ্যামল একটি গ্রাম। হজরত খান জাহান আলীর (রা.) পুণ্যভূমি দক্ষিণবঙ্গ বাগেরহাট জেলাধীন কচুয়া উপজেলায় এর অবস্থান। উত্তর ও পূর্বে বলেশ্বর নদী। নদী পার হলেই বরিশাল জেলা (বর্তমান পিরোজপুর) পশ্চিমে কচুয়া সদর এবং দক্ষিণে গোপালপুর ইউনিয়ন। প্রচলিত আছে আমাদের এই গ্রামটি কোনো এক সময় সুন্দরবনেরই একটি অংশ ছিল। গ্রামের কোথাও গভীর পুকুর বা দিঘি খনন করলে তার তলদেশে এখনো সুন্দরী গাছের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এখান থেকে বঙ্গোপসাগরও ছিল বেশ নিকটে। সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে তর তর করে একটি খাল বলেশ্বর নদীতে গিয়ে পড়েছে। যার নাম খুটাখালী। কথিত আছে, ফরিদপুর জেলার মাইটকামড়া থেকে নকু ও রফি সিকদার নামে দুই সহোদর সুন্দরবনে কাঠ কাটতে এসে এ এলাকায় থেকে যান। পরবর্তী সময়ে তারা ওই খালের দুই পাড়ে দুই ভাই বসতবাড়ি গড়ে তোলেন। এভাবেই আমাদের পূর্ব পুরুষদের এ অঞ্চলে গোড়াপত্তন।
এলাকায় এ দু’দুটি বাড়ি এখনো পুরান বাড়ি নামে পরিচিত। খালের পশ্চিমপাড়ে যে সিকদার বাড়িটি এ বাড়িতেই আমার জন্ম। এ দু’বাড়ি থেকেই এলাকায় আদমের ডালপালা ছড়িয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে একটি ডাল সম্প্রতি সুদূর আমেরিকাতেও পৌঁছেছে। আমাদের সেই পুরাতন বাড়িতে এখনো আটটি শরিকের বাস। আটটি শরিক যেন একটি পরিবার। আপদে–বিপদে একে অপরের সাথি। চাচা-ফুফু, চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোন মিলিয়ে একঝাঁক ছেলেমেয়ে। আমার বাপ-চাচারা তিন ভাই। আমরা নিজেরাই প্রায় ১৮/২০ জন কাজিন। এরপরে অন্যান্য শরীকতো রয়েছে। আমাদের এই কাজিন মহলের বাড়ির একেক জনের একেকটা বিশেষ ডাক নাম বা পরিচিতি আছে। বিশেষ করে দাদা–দাদিদের। এক দাদি আছেন বেশ ফরসা এবং রাজরানি রাজরানি ভাব। আমরা তাকে ডাকি ধলা বু, কেউ কেউ আবার সাদা বুড়িও বলে থাকে। গ্রাম এলাকায় দাদিকে অনেকে বু বলে ডেকে থাকে। আর যে দাদির মৃত্যু সংবাদ পেলাম তিনি ছিলেন বেশ মোটা সোটা হাতির মতো ধপ ধপ করে চলতেন। তাকে আমরা ডাকতাম মোটা বু। আরেক দাদি ছিলেন ছোটখাটো পাতলা ধরনের তিনি গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে, তাঁর নাম ছিল চুন চুনে দাদি। চুন চুনে নাম দেওয়ার একটা কারণ হতে পারে তিনি সর্বদা পান চিবোতেন এবং তাঁর আঙুলে সর্বদা চুন লেগে থাকত।
মোটা দাদির কথা স্মরণে আসতেই মনে পড়ে যায় সেই একাত্তরের ছেলেবেলার স্মৃতি, যে স্মৃতি আমর হৃদয়ে আজ করুণ হয়ে ভাসে। আট-দশ বছরের বালক আমি। সবার দুঃখে দুঃখী,আনন্দে হাসি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জ্ঞান-বুদ্ধি তখনো হয়নি আমার। মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, আলবদরের পার্থক্য অতটা বুঝতাম না। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের আপনজন বলেই জানতাম। যেহেতু আমার বাপ-চাচা প্রতিবেশীদের দেখতাম মুক্তিযোদ্ধা দেখলে তাদের যত্ন খাতির করত। ঘর থেকে চিড়া, মুড়িসহ বিভিন্ন খাবার বের করে দিত। নারকেলগাছ থেকে ডাব পেড়ে খাওয়াত। আর রাজাকারদের আগমন দেখলেই যত দূরে থাক যে যার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেত। তাতেই বুঝতাম মুক্তিযোদ্ধারা আপনজন। রাজাকারদের প্রতি আমার প্রথম ঘৃণা জন্মে যে দিন খালে চরে চর টেংরাখালীর জনৈক হাবিবের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। দিনটি ছিল সোমবার কচুয়া হাটের দিন। হাট থেকে সওদা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল হাবিব। বিপরীত দিক থেকে একদল রাজাকার অপারেশন শেষে কচুয়ায় ক্যাম্পে ফিরছিল। পথিমধ্যে তাকে পেয়ে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করে ফেলে দেয় খালের চরে।
১৯৭১ সাল। চারদিকে যুদ্ধের ঘনঘটা। বাংলার আনাচে–কানাছে স্বাধীনতার আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা দিলেন;
প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। স্কুল-কলেজ, কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আমি তখন স্থানীয় টেংরাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ, লেখা পড়ার চাপ নেই। আহা কি মজা! বয়স্করা পালিয়ে বেড়ায়, অনেকেই দেশ মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। দেশপ্রেমিক মানুষগুলো পালিয়ে গেল ভারতে যুদ্ধ কৌশল রপ্ত করতে। আর সুবিধাবাদী লোকগুলো নাম লেখাল রাজাকারে।
আমরা দস্যি ছেলেরা ঘুরে বেড়াতাম মাঠ–ময়দানে। হা-ডু-ডু, ডাংগুলি আর মার্বেল খেলায় সময় কাটাতাম। মাঝে মাঝে কারও গাছের বাতাবি লেবু পেড়ে নাড়ার আগুনে সেকে নরম করে বানাতাম ফুটবল। খেলার ফাঁকে আবার খুঁজে ফিরতাম কার গাছের মৌসুমি ফল বড় হয়েছে। কার গাছের আম, জাম মিষ্টি।
আমাদের মোটা দাদির ঘরের পেছনে ছিল একটি বাঁকা আম গাছ। গাছে আমও ধরত প্রচুর। গুটি থেকে শুরু করে পাকা অবধি আমগুলো ছিল দারুণ মিষ্টি। কাঁচা থাকতেও টকের বালাই ছিল না সে আমে। আমাদের সবার লক্ষ ছিল দাদির গাছের ওই আম। দাদি নিরবচ্ছিন্ন নজর রাখতেন তাঁর আম গাছের দিকে। কেউ গাছের তলায় গেলে অমনি বাঁশের কঞ্চি উঁচিয়ে তেড়ে আসতেন। তাঁর মুখে প্রায়ই একটি বাক্য শুনতাম; ‘কেডারে আমার গাছের গোড়ায়, তোরে আমি আম খাওয়াইছি।’
আমরাও ভোঁ করে দৌড়, এক দৌড়ে দাদির নাগালের বাইরে।
এক দিনের ঘটনা, “আমি খুব একটা গাছে চড়তে পারি না। প্রতিবেশী বালকেরা গাছে চড়ে আর আমি তাদের সঙ্গ দেই । সে দিন দাদির ঘরের দরজা বন্ধ, কোথাও কোনো সাড়া–শব্দ নেই। দাদাও বাড়িতে নেই, কোথাও হয়তো বেড়াতে গেছেন। দাদাকে আমরা খুব একটা ডরাতাম না। তিনি চোখে একটু কম দেখতেন কেউ গাছে চড়লে তার সাড়া পেলে গাছের সঙ্গে পেটটাকে চেপে ধরে চুপ করে থাকলে তিনি উপলব্ধি করতে পারতেন না যে গাছে কেউ আছে। তা ছাড়া তিনি ছিলেন শান্ত প্রকৃতির মানুষ। আমাদের কর্মে খুব একটা বাঁধা তিনি দিতেন না। যাই হোক, সবাই গাছে চড়ে আমারও শখ হলো গাছে চড়ার। বুকে ভর দিয়ে গাছটা জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্টে গাছে চড়েছি। একটা আম তুলব ঠিক এমন সময় দেখলাম খানিকটা দূরে বোরকা পরা এক মহিলা আমাদের দিকে আসছে। যেহেতু বোরকা পরা তাকে আবিষ্কার করা যাচ্ছিল না কে ওই আগন্তুক? কাছে আসতে না আসতেই বোরকার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল দাদি। আর সবার কি যে দৌড়। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নামতে গিয়ে আমার বুকের ছাল চামড়া উঠে রক্ত বেরিয়ে এল। আর কোনো দিন ভুলেও গাছে চড়ার চেষ্টা করিনি। তাই বলে আমাদের আম চুরির অভিযান থেমে থাকেনি। প্রতিবেশী মনা, রুস্তম, মজি, আবু গাছে চড়ত আর আমি কুড়াতাম।
আমার আজও ঠিক মনে আছে; গাছে আম দু/একটা কেবল পেকে উঠেছে। শুক্রবার, জুমার নামাজের দিন। এপ্রিলের মাঝামাঝি হবে। ওই দিন কচুয়ায় প্রথম রাজাকার আসে। তারা এসে সিও অফিস দখল করে নেয়। সিও সাহেবকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে রাজাকারের কমান্ডার মনিরুজ্জামান সে বাসায় ওঠে। বাবার সঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি। মুসল্লিরা সবাই শঙ্কিত মুখে টু শব্দ নাই। নামাজ শেষে নীরবে নিরানন্দে যে যার বাড়ির দিকে চলে গেল। আমিও বাবার পিছে পিছে বাড়ির দিকে ফিরছি।
পথে আমি আবিষ্কার করলাম কতিপয় বালক-বালিকা দাদির আম গাছ থেকে মহানন্দে আম চুরি করছে। আর হই হুল্লোড়ও করছে, কিন্তু অবাক হলাম এত হই চই করার পরও দাদি খবর পায়নি? ঘরের বাইরে দাদিকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। ভাবলাম দাদির কোনো অসুখ–বিসুখ হয়েছে!
ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরজাটা ভেজানো। ঘরের মধ্যে মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমি উচ্চ স্বরে ডাক দিলাম, দাদি, দাদি গো আপনার গাছের আম কারা যেন পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমার হাঁক শুনে ভেজানো দরজা থেকেই জবাব এল, ‘যাক। অদো তোমার ওহানে যাওয়ার কাম নেই। কৌচকায় নাকি রেজাকার আইছে। কার আম কে খায়? জলদি ঘরে যাও। মা বুনডিগো লইয়া পলাও।’
আমি জবাব দিলাম, আমি তো বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়েছিলাম। রাজাকার আসছে তাতে কি হয়েছে?
ওরা খারাপ, ভীষণ খারাপ। মানুষ খুন করে, ঘরবাড়ি জ্বালায়ে পোড়ায়ে দেয়, লুটপাট করে, জোয়ান মাইয়াগো ধইরগা নিয়া যায়, আরও কত কি?
তাই? তরুণী মেয়েছেলে ধরে নিয়ে যায় তাতে আপনার ভয় কি? আপনি তো আর তরুণী নন?
ওরে বাইডি তাদের মধ্যে বুড়া রাজাকার আছে না বলতে বলতে দরজা খুলে হামিদা ফুফুর হাত ধরে টানতে টানতে দাদি ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। হামিদা ফুফুর বয়স তখন ১৬ কি ১৮।
দৌড় দিতে শুরু করে আমার বাবাকে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘ও খালু, তুই এহনও দাঁড়াইয়া আছিস? ঘরে যা ছাল মাইয়াগুলা নিয়া সইরগা পড়। শালারা আমাগো বাড়ি যদি আইসকাই পড়ে তাইলেতো সব জ্বলাইয়া পোড়াইয়া দেবে। কারে ধর, কারে মারে। তার চাইতে আগে ভাগে জানগুলা লইয়া পলাইয়া যা। হে আল্লাহ! তুমি ওই ইবলিসের বাচ্চাদের হাত থেকে আমাদের জান মাল রক্ষে করো মাবুদ, রক্ষে করো।’
আমার বাবার নাম আবদুল খালেক। তার চাচা-চাচিরা আদর করে ডাকতেন খালু।
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। দেখলাম দাদির কাণ্ড দেখে তিনি ছিলেন নিরুত্তর। মনে হয়েছিল তিনিও ছিলেন ভীত–সন্ত্রস্ত। আমার হাত ধরে আচমকা টান দিয়ে বললেন, এদিকে আয়। চল ঘরের দিকে যাই।
বাবার সঙ্গে ঘরে ফিরতে আমার মোটেও মন চাইছিল না। তার প্রতি আমার দারুণ ক্ষোভ হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল দৌড়ে গিয়ে গাছ তলা থেকে অন্তত একটা আম কুড়িয়ে নিয়ে আসি। যদি রাজাকার এসেই পড়ে তাহলে আমতো আর পাওয়া যাবে না।

(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। গল্পের চরিত্রের অনেকেই আজ বেঁচে নেই)
আটলান্টা, জর্জিয়া